ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ধানের শীষে ভোট চাইলেন তারেক রহমান

ধানের শীষে ভোট চাইলেন তারেক রহমান

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসন আমলে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বড় পরিসরে কোনো সভাসমাবেশ করতে পারেনি। গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গতকাল রোববার রাজধানীর শাহবাগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমাবেশ করেছে। সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোট চান। তারুণ্যের প্রথম ভোট, ধানের শীষের জন্য হোক এমন মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গত দেড় দশকে ৪ কোটির বেশি নতুন ভোটার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এবার তোমাদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়ার সময়। ধানের শীষ প্রতীকে তোমাদের প্রথম ভোট হবে তোমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার। তিনি বলেন, চলো, আজ আমরা সবাই একসঙ্গে প্রতিজ্ঞা করি— আমাদের প্রথম ভোট, হবে বাংলাদেশের পুনর্গঠনের জন্য। আমাদের প্রথম ভোট হবে শহীদদের রক্তের মর্যাদা রাখার জন্য। আমাদের প্রথম ভোট, হোক ধানের শীষের জন্য। ইনশাআল্লাহ।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই দেশের ছাত্রসমাজই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। তোমরাই গড়ে তুলবে শহীদদের স্বপ্নের সেই বাংলাদেশ। শুধু রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, আমাদের প্রয়োজন শিক্ষিত, দক্ষ, প্রযুক্তি-জ্ঞানসম্পন্ন একটি প্রজন্ম, যারা জ্ঞান ও মানবিকতা দিয়ে দেশকে নেতৃত্ব দেবে।

ছাত্রদলের হাজারো নেতাকর্মী জেল, নির্যাতন, খুন-গুম এবং হামলার শিকার হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে শতাধিক ছাত্রদলকর্মী শহীদ হয়েছেন, গ্রেফতার হয়েছেন দুই হাজারেরও বেশি। কিন্তু এই ত্যাগ বৃথা যাবে না।

শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে গুণগত পরিবর্তনের অঙ্গীকার করে তারেক রহমান বলেন, ভবিষ্যতের শিক্ষানীতিতে আমরা চাই স্কুল থেকেই ব্যবহারিক ও কারিগরি শিক্ষার সংযোগ, যেন একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় শেষে চাকরির জন্য পথে বসে না থেকে নিজের দক্ষতা দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। বিএনপি পরিকল্পনা করছে স্কুল পর্যায়ে আইটি, ডেন্টাল হাইজিন, মেডিকেল টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য কারিগরি শিক্ষা চালু করার। এর পাশাপাশি থাকবে একাধিক ভাষা শিক্ষার সুযোগ — ইংরেজির পাশাপাশি আরবি, জার্মান, ফরাসি, জাপানি ও চীনা ভাষা শেখার সুযোগ থাকবে।

ই-কমার্স ও উদ্যোক্তা উন্নয়নে বিস্তৃত পরিকল্পনার বিষয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য দেশের প্রতিটি জেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনে সহায়তা করা হবে, যেন তারা নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে বিশ্বমানের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

আউটসোর্সিং বৈদেশিক আয় দেশে আনার নীতিগত উদ্যোগের বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ফ্রিল্যান্সাররা বৈদেশিক মুদ্রায় আয় করলেও অনেকেই তা দেশে আনতে পারছেন না—এই সমস্যা সমাধানে বিএনপি সরকার গঠন করলে আন্তর্জাতিক লেনদেন নিরাপদ করতে জরুরি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক গৌরব ফিরিয়ে আনতে হলে গবেষণার পরিবেশ, আবাসন সংকট এবং খাবারের মান উন্নয়ন জরুরি। আমরা চাই প্রতিটি ক্যাম্পাস হোক নিরাপদ ও মুক্ত চিন্তার স্থান। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গ্লোবালাইজেশনের সুযোগ কাজে লাগাতে বিএনপি একাধিক ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করতে চায় বলে জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি আরবি, জার্মান, ফ্রেঞ্চ, জাপানি শেখার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তারেক রহমান বলেন, একজন শিক্ষার্থীর জন্য একাধিক ভাষাজ্ঞান তাকে কর্মসংস্থানে এগিয়ে রাখবে। আমরা চাচ্ছি ছাত্র-ছাত্রীদের এমনভাবে তৈরি করতে যেন তারা বিশ্বে যেখানেই যাক না কেন, সহজেই টিকে থাকতে পারে। লাইব্রেরিগুলোকে অনলাইন-অফলাইন উভয় প্ল্যাটফর্মে আধুনিকায়ন করতে হবে। হলগুলোর আবাসন ও খাবারের মান বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষায় খরচ নয়, এটি রাষ্ট্রের বিনিয়োগ।

সমাবেশে তারেক রহমান বক্তব্য দেওয়ার আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, সারা দেশের মানুষ সে অপেক্ষায় আছেন। তার আগে বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষা করে আছেন, তাদের নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে তাদের নেতৃত্ব দেবেন, সেই প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করেছেন দলটির মহাসচিব।

সমাবেশে বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক সাহেব লন্ডনে বসে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করেছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে। গোটা বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষা করে আছে, বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে। তার আগে গোটা বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষা করে আছে, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব দেশে ফিরে আসবেন। তাই না? আমরা সবাই চাই, তাই না? উনি আসবেন, আমাদের নেতৃত্ব দেবেন, আমাদের পথ দেখাবেন।’ ছাত্রদের মেধা ও বুদ্ধিমত্তার চর্চা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মেধা ছাড়া আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারব না। আর জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা, মেধার চর্চা, এর মধ্য দিয়ে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’

বক্তব্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের পাশের দেশে ভারতবর্ষে ফ্যাসিস্ট হাসিনা আশ্রয় নিয়েছে তার লোকবল নিয়ে। সেখান থেকে সে মাঝেমধ্যেই হুমকি দিচ্ছে যে তারা বাংলাদেশে আক্রমণ করবে। শুধু তা–ই নয়, এখানে তারা বিভিন্নভাবে গোলযোগ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।’ এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘আজকের এই সমাবেশ থেকে আমাদের শপথ নিতে হবে যে আমরা কোনো দিনই শেখ হাসিনাকে আর এই দেশে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ দেব না। শপথ নিতে হবে যে আমরা কারও কাছে কোনো দিন মাথা নত করব না। আমরা আমাদের দেশকে নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলব।’

ছাত্রদলকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলামের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশে কারও নেই।’ সূচনা বক্তব্যে রাকিবুল ইসলাম আরও বলেন, ‘দেশকে যারা অস্থিতিশীল করতে চায়, ছাত্রদল চাইলে সেই ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে পারে। ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান যদি নির্দেশনা দেন, নেতা–কর্মীরা সারা দেশ অবরোধ করে দিতে পারে।’

ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ড. আসাদুজ্জামান খান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত