ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সংস্কার ও বিচার ছাড়া নির্বাচন দিলে বিদ্রোহ হবে হুঁশিয়ারি জামায়াতের

সংস্কার ও বিচার ছাড়া নির্বাচন দিলে বিদ্রোহ হবে হুঁশিয়ারি জামায়াতের

মৌলিক সংস্কার ও আওয়ামী লীগের দোষীদের বিচার ছাড়া নির্বাচন দিলে দেশে বিদ্রোহ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা। গতকাল মঙ্গলবার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানী জুড়ে নানা কর্মসূচি পালন করে জামায়াতে ইসলামী। ঢাকা মহানগরী উত্তরের আয়োজনে মহাখালী রেলগেট এলাকায় অনুষ্ঠিত এক সমাবেশ ও গণমিছিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘যারা নির্বাচন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে করতে চায় না, তাদের আসলে জনগণের সমর্থন নেই, তাদের ভরসা মাস্তান আর চাঁদাবাজ বাহিনী। পিআর পদ্ধতি ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন জনগণ মানবে না।’

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগ ও একটি-দুটি দল ছাড়া দেশের প্রায় সবাই এখন জুলাই মুক্তিযোদ্ধা। আওয়ামী লীগ এতটাই বিচ্ছিন্ন যে তারা অনেক দূর চলে গেছে, দিল্লি পর্যন্ত। তারা আর ফিরে আসতে পারবে না। যারা নতুন স্বৈরাচার গঠনের চেষ্টা করবে, তাদের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে জামায়াত কখনও আপস করে না। জামায়াত সবসময় টেকসই গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে।’

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনও হয়নি। ১৯৭৩ সাল থেকে শেখ হাসিনার সর্বশেষ নির্বাচন পর্যন্ত সবগুলোতেই ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, দিনের ভোট রাতে হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর পিয়ার পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হবে। এতে কেন্দ্র দখল বা টাকার লেনদেনের সুযোগ থাকবে না। যারা পিয়ার চায় না, তাদের জনপ্রিয়তা নেই—তাদের আছে মাস্তান ও চাঁদাবাজ।’ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে ডা. তাহের বলেন, আপনি জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিবেন না। এখন যদি তারিখ ঘোষণা করেন, তা হবে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। আপনি রাজপথের আন্দোলনে ছিলেন না। আপনি বা আপনার পরিবারের কোনও সদস্য আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হননি। আপনাকে বসিয়েছি আমরা, আমাদের রক্ত ও লাশের বিনিময়ে। তাই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। যদি আপনি আরেকটি স্বৈরাচারকে সহায়তা করেন, তাহলে জনগণ আপনাকে আর নেবে না।’

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ব্যর্থতা উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির বলেন, ‘এই দেশের মানুষ বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে দেখেছে—তারা ব্যর্থ ও পালিয়ে গেছে। এবার জামায়াতকে একবার সুযোগ দিন। আমরা ৫৪ বছরের দুর্নীতির ইতিহাস মুছে ফেলব। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন ঘোষণা করলে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল হবে। আর দেশ ও জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলে তারা আপনাকে ছাড়বে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় থাকতে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে।’

দেশের কিছু মানুষ ও চিহ্নিত রাজনৈতিক দল ছাড়া সবাই জুলাই মুক্তিযোদ্ধা; তাই এ বিষয়ে কোনও বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ নেই’ মন্তব্য করে ডা. তাহের বলেন, ‘জামায়াত সত্য, ন্যায় ও ইসনাফ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে জামায়াত কারো সঙ্গে আপোষ করবে না বরং দেশে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও তা রক্ষার জন্য সবকিছু করবে।’

নারী ও সংখ্যালঘুদের নিয়ে প্রচলিত সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘জামায়াত ক্ষমতায় এলে নারীরা নিরাপত্তার সঙ্গে চাকরি ও ব্যবসা করতে পারবে। আর সংখ্যালঘুরা আমাদের অধীনে বেশি নিরাপদ ছিলেন। আমি কুমিল্লা থেকে এমপি ছিলাম, যদি কোনো হিন্দু আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, আমি জনসমক্ষে ক্ষমা চাইব।’

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘জুলাই সনদের ভিত্তিতেই আগামী নির্বাচন হতে হবে। এবং প্রবাসীদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’ সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা চাঁদাবাজ বাহিনীদের গ্রেপ্তার করুন, যারা ভোট না দিলে পাথর ছুঁড়ে, প্রাণনাশ করে।’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে জামায়াত ছিল অন্যতম স্টেকহোল্ডার। সেই কারণেই আমাদের নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে।’

বাস্তবায়নের স্পষ্ট কোনো নির্দেশিকা না থাকায় জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, আমরা এই ঘোষণাপত্রে হতাশ, এই জাতি হতাশ। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ঘোষণাপত্র সংবিধানে স্থান দেওয়া দরকার ছিল। ৫ আগস্ট থেকে এই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন করবে বলে আমরা শুনেছিলাম, কিন্তু এটা কখন থেকে বাস্তবায়ন হবে তার কোনো নির্দেশিকা নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত