
গণতন্ত্র অভিযাত্রায় জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে রাজধানীতে বিজয় র্যালি পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই আহ্বান জানান। তারেক রহমান বলেন, প্রিয় রাজনৈতিক দলের সদস্যবৃন্দ বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মতভেদ থাকবে। কিন্তু সেই ভিন্নমত নিরসনে আলোচনা হবে। তবে জাতীয় পরিষদে গণতন্ত্রের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যাতে মুখ দেখাদেখি যাতে বন্ধ না হয়, সেই লক্ষ্যে জাতীয় স্বার্থে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রয়োজন। কারণ আমি বিশ্বাস করি, ধর্ম, দর্শন, মত যার ?যার, রাষ্ট্র আমাদের সবার।
তারেক রহমান স্পষ্ট করে বলেন, জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে বিএনপি কী ধরনের রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতি পরিচালনা করবে দলের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে ৩১ মাধ্যমে একটি রূপরেখা জনগণের সামনে আমরা উপস্থাপন করেছি। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। দেশ এবং জনগণের কল্যাণে এই সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি জনগণের সমর্থন এবং সহযোগিতা চায়।
নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিকাল সাড়ে ৩টায় শুরু হয় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ। প্রধান অতিথি তারেক রহমানের বক্তব্যের পর বিকাল সাড়ে ৪টায় বিজয় র্যালি শুরু হয়। বর্ণাঢ্য এই র্যালিতে ঢাকা মহানগর ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকেও নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা নিয়ে অংশ নেয়। ফকিরেপুল থেকে কাকরাইলের মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কে হাজার হাজার কর্মীর উপস্থিতি জনসমুদ্রে রুপ নেয়। বিজয় র্যালিটি বিজয় নগর, পল্টনে মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, কদম ফোয়ারা, মৎস্যভবন মোড়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সড়ক দিয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। ঢাকা ছাড়াও সব বিভাগীয় শহরে একযোগে বিজয় র্যালির কর্মসূচি করছে বিএনপি।
তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশের জনগণের সরাসরি ভোটে কাছে দায়বদ্ধ জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গতকাল জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি সময়সীমা ঘোষণা করেছে। জনগণের অভিপ্রায় বাস্তবায়নের দাবিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণের অধিকার বাস্তবায়নের এইসব উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।
মানুষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার যাত্রাপথে বর্তমানে আমরা ইতিহাসের যে সন্ধিক্ষণ পার করছি। এই ঐতিহাসিক সময়টির জন্য দেশের গণতান্ত্রিক জনগণকে দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। ফ্যাসিবাদ শাসনের দীর্ঘ সময়ে এই আন্দোলনে আমরা আমাদের হাজারো সহকর্মী সহকর্মীকে হারিয়েছি, আমাদের অনেক সন্তান-স্বজনের বুকের তাজা রক্ত দেখতে হয়েছে। তিনি বলেন, বিরোধী আন্দোলনের সময় বিএনপিসহ বিরোধী দল এবং মতের নেতাকর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মিথ্যে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির এমন নেতা রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। এমনকি ৪ শতাধিক মামলা রয়েছে। গুম-অপহরণের শিকার হয়েছেন বিএনপিসহ বিরোধী দলের শতশত রাজনৈতিক নেতাকর্মী।
শুধুমাত্র ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। খুনিদের বন্দুকের নল থেকে মায়ের কোলে থাকা চার বছরের শিশুর রেহাই পায়নি। ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্টদের কারণে আমাদের অনেক সাহসী সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে, বিডিআরেরে নাম পর্যন্ত পাল্টে দেওয়া হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশের মনোবল।
তারেক রহমান বলেন, পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের আমলে দেশ অন্ধকারের রাজিত্ব কায়েম করা হয়েছিল। আমি বলব আজকের এই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আলোর পথে যাত্রা। তবে এই যাত্রা কিন্তু খুব সহজ নয়।
বর্তমানে দেশের জনগণের সামনে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অপার সম্ভাবনা এবং সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা যদি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের জনগণের রাজনৈতিক শক্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি, জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পাবে না। তিনি বলেন, দেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারবে না, আমাদের আর কখনও’ ২৪-এর দৃশ্য দেখতে হবে না। আমি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আপনার নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, আপনার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য একজন নগরিক হিসেবে আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। যিনি যে রাজনৈতিক দলের সদস্য হন না কেন, আমাদের অবশ্যই মনে রাখা দরকার প্রতিবাদ শাসন আমলে আমরা কেউ নিরাপদ ছিলাম না, আমাদের সন্তানরা নিরাপদ থাকতে পারিনি। তারেক রহমান বলেন, আমি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, যিনি যেই দলের সদস্য রাজনৈতিক দলের সদস্য হন না কেন, আমাদের অবশ্যই সকলের একটি কথা মনে রাখা দরকার, প্রতিবাদ শাসন আমলে আমরা কেউই নিরাপদ ছিলাম না, আমাদের সন্তানরা কেউ নিরাপদ থাকতে পারেনি। আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, আমাদের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য সমগ্র বাংলাদেশটাকেই বর্বর বন্দিখানা, আয়নাঘর বানিয়ে ফেলা হয়েছিল। দেশে যদি গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন না থাকে তাহলে নারী কিংবা পুরুষ সংখ্যা লোক কিংবা সংখ্যা আমরা কেউই নিরাপদ নই। একমাত্র গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনেই আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারে। জনগণের গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র এবং সরকারের জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য হাজারো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারগুলোর সুষ্ঠু এবং চর্চা করি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, উত্তর বিএনপির আমিনুল হক বক্তব্য রাখেন। র্যালিতে বিএনপির আসাদুজ্জামান রিপন, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, শাহজাদা মিয়া, লুৎফুজ্জামান বাবর, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ কেন্দ্রীয়, অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।