
দাবি আদায়ে আলটিমেটাম দিয়ে সচিবালয়ের সামনের সড়ক ছেড়েছেন জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত ব্যক্তিরা। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে তাঁরা সড়ক ছাড়েন। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা সচিবালয়ের ২ নম্বর ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের পদত্যাগ দাবি করেন।
সড়ক ছেড়ে দেওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের আসামিরা কেন জামিন পাচ্ছেন, তা নিয়ে আইন উপদেষ্টাকে আগামী রোববারের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে ব্যাখ্যা দিতে হবে। সেই ব্যাখ্যা প্রধান উপদেষ্টাকে জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে। আজকের কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে দৃশ্যমান বিচারের দাবি জানান তাঁরা।
পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে শহীদ তায়িমের ভাই রবিউল আউয়াল বলেন, আইন উপদেষ্টা তাঁদের আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আগামী রোববার পর্যন্ত তাঁরা সময় দিয়েছেন। এর মধ্যে আসামিদের জামিনের বিষয়ে আইন উপদেষ্টার ব্যাখ্যা ও পুলিশি হামলার ঘটনায় দৃশ্যমান বিচার না হলে তাঁরা আবার আন্দোলন শুরু করবেন।
রবিউল আউয়াল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আগামী রোববারের মধ্যে দাবি আদায় না হলে আইন উপদেষ্টার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টারও পদত্যাগ দাবি করবেন তাঁরা। সেই কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা অংশ নেবেন। সেই আন্দোলন সচিবালয়ের ২ নম্বর গেটের সামনে হবে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত ব্যক্তিরা প্রথমে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে তাঁরা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের ২ নম্বর ফটকের সামনে অবস্থান নেন। এতে সচিবালয়ের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অবস্থান চলাকালে আন্দোলনকারীরা নানা স্লোগান দেন। এসব স্লোগানের মধ্যে ছিল ‘পদত্যাগ পদত্যাগ, পদত্যাগ চাই, আসিফ নজরুলের পদত্যাগ চাই’, ‘দফা এক দাবি এক, আসিফ নজরুলের পদত্যাগ’, ‘খুনিরা বাইরে ঘোরে, বিচার বিভাগ কী করে’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’।
জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা বলেন, অর্থের বিনিময়ে জুলাই গণহত্যার আসামিরা জামিন নিচ্ছেন। অবিলম্বে উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে পদত্যাগ করতে হবে। তাঁরা বিচারকদেরও অপসারণ দাবি করেন। অবস্থান কর্মসূচির আগে শহীদ পরিবার ও জুলাই আহত ব্যক্তিরা সচিবালয়ের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা তাঁদের বাধা দেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
পুলিশ আন্দোলনকারীদের লাথি ও গালি দেয় বলে অভিযোগ করেছেন শহীদ আহনাফের মা সাফাত সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘পুলিশ জুলাই শহীদ পরিবারকে বিশ্রীভাবে গালি দিয়েছে। আমি সেটা উল্লেখ করতে পারব না। আমাকে পুলিশ লাথি দিয়েছে।...আমরা ন্যায্য দাবি নিয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছি। আমরা দাবি আদায় করেই ছাড়ব।
সরকারের উদ্দেশে বক্তারা বলেন, বিগত এক বছর হয়ে গেল এখনো কারো বিচার হয়নি। আপনারা ক্ষমতায় এসে শহীদ পরিবারের কথা ভুলে গেছেন। আমাদের কেন বিচারের জন্য আপনাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে। স্বজন হারানোর ব্যথা আপনারা কি বুঝবেন? আপনাদের তো কোনো স্বজন হারায় নাই। যেসব আসামিদের ধরা হয়েছে, তাদের জামিন দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আপনারা কি আবার হাসিনাকে পুনর্বাসন করতে চাচ্ছেন? আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে হুঁশিয়ারি করে বলতে চাই, আমাদের আবার রাস্তায় নামাবেন না। আমরা জানি রাস্তায় কীভাবে প্রতিবাদ করতে হয়। তা আমাদের সন্তানরা আমাদের শিখিয়ে গেছে। এ সময় তাদের পক্ষ থেকে ৪ দফা দাবি জানানো হয়।
দাবিগুলো হলো- ১. হাইকোর্টের যেসব বেঞ্চ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামিদের জামিন দিয়েছে সে সব বিচারপতিদের বরখাস্ত করতে হবে। ২. এতো দিন ধরে আসামিদের জামিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তার পরে ও আইন উপদেষ্টা কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে পদত্যাগ করতে হবে। ৩. আসামিদের স্বজনপ্রীতি করে অথবা আর্থিক লেনদেনের কারণে আসামি গ্রেফতার না করার কারনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী খোদাবক্স চৌধুরীকে পদত্যাগ করতে হবে। ৪. স্বজনপ্রীতি অথবা আর্থিক লেনদেনের কারণে আসামি গ্রেফতার না করার কারণে পুলিশের আইজিপিকে পদত্যাগ করতে হবে। দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি ঘোষণা করবেন তারা।
এসময় বক্তব্য দেন-শহীদ নাফিজের বাবা গোলাম রহমান, শহীদ জুলাই সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক শহীদ ইমাম হাসান তায়িমের ভাই রবিউল আউয়াল, শহীদ পরিবারের সদস্য বুলবুল কবীর, শহীদ শেখ শাহরিয়ার শেখ মতিনের বাবা মোহাম্মদ আব্দুল মতিন, শহীদ আলভী বাবা আবুল হাসান প্রমুখ।