
আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ব্যালট পেপারে প্রার্থীদের নাম ও ব্যালট নম্বরের পাশাপাশি ছবি যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর ভিপি পদপ্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে একজন ভোটারকে ৪১টি ভোট দিতে হবে। এতে প্রার্থীর নাম ও নম্বর মনে রাখা কঠিন। তাই বিভ্রান্তি এড়াতে ব্যালটে অবশ্যই প্রার্থীদের স্পষ্ট ছবি থাকতে হবে। বিশেষ করে একই নামে একাধিক প্রার্থী থাকলে ছবি ছাড়া ভোটাররা সমস্যায় পড়বে।
তিনি অভিযোগ করেন, যৌক্তিক দাবি না মানলেও কোন কোন দলের পক্ষে সময় বাড়িয়ে পক্ষপাতিত্বের পরিচয় দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন।এজিএস প্রার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, ভোটকেন্দ্রগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য আরামদায়ক করতে হবে। রোদ, বৃষ্টি বা গরম থেকে রক্ষার ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত জায়গা, স্ট্যান্ড ফ্যানসহ ভোটের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।
এ সময় তিনি ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে এতে যুক্ত হল প্রভোস্টদের নির্বাচনে দায়িত্ব না দেয়ার দাবি জানান।
রাকিবুল বলেন, নারী শিক্ষার্থীদের ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকাশ করায়, অনেকেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছেন।
এ সময় ব্যালট পেপারে ছবি যুক্ত না হলে এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিলে পুনরায় আন্দোলনে নামবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ডাকসু নির্বাচনের ভোট।
উমামা-সাদীর নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে উমামা ফাতেমা ও আল সাদী ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামে প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে সংবাদ সম্মেলনে এই প্যানেল ঘোষণা করা হয়।
এ প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ও বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের উমামা ফাতেমা। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া। সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে লড়বেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ও পাঠচক্র ‘গুরুবার আড্ডার’ সংগঠক জাহেদ আহমদ।
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে প্যানেলে থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন নূমান আহমাদ চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে মমিনুল ইসলাম (বিধান), আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে নাফিজ বাশার আলিফ, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে সুর্মী চাকমা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে অনিদ হাসান, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে সিয়াম ফেরদৌস ইমন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. সাদিকুজ্জামান সরকার, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে মো. রাফিজ খান, সমাজসেবা সম্পাদক পদে তানভীর সামাদ, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ইসরাত জাহান নিঝুম এবং মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে নুসরাত জাহান নিসু।
সদস্য পদে রয়েছেন নওরীন সুলতানা তমা, আবিদ আব্দুলাহ, ববি বিশ্বাস, মো. শাকিল, মো. হাসান জুবায়ের (তুফান), আব্দুল্লাহ আল মুবিন (রিফাত), অর্ক বড়ুয়া, আবির হাসান, নেওয়াজ শরীফ আরমান, মো. মুকতারুল ইসলাম (রিদয়), হাসিবুর রহমান, রাফিউল হক রাফি, মো. সজিব হোসেন এবং সাদেকুর রহমান সানি।
প্যানেল ঘোষণা করেন উমামা ফাতেমা। প্যানেলে পাঁচজন রয়েছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। এছাড়া আদিবাসী দু’জন এবং নারী রয়েছেন ছয়জন।
এদিকে আসন্ন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের জন্য আচরণবিধি জারি করেছে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়। বৃহস্পতিবার নির্বাচন আচরণবিধি নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনও প্রার্থী বা তাদের পক্ষে কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিক কোনও ধরনের সেবামূলক কাজ করতে পারবেন না। তাছাড়া কোনও ধরনের উপঢৌকন, বিলি-বণ্টন, আপ্যায়ন, অর্থসহায়তা কিংবা অনুরূপ কোনও কার্যক্রমে যুক্ত হওয়াও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এসব কার্যক্রমকে নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থি হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।