ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ‘সুদৃঢ়’ হচ্ছে

বললেন প্রধান বিচারপতি
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ‘সুদৃঢ়’ হচ্ছে

জন-আস্থা যোগ্য একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুদৃঢ় হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। গতকাল বৃহস্পতিবার বরিশালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন বলে আপিল বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি ঘোষিত বিচার সংস্কারের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বরিশালের হোটেল গ্র্যান্ড পার্কে ‘জুডিশিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যান্ড এফিসিয়েন্সি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সেমিনার হয়।

প্রধান বিচারপতি বলেন, এক বছর আগে ২১ সেপ্টেম্বর বিচার বিভাগ সংস্কারে যে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছিল তা এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এর ফলে বদলে গিয়েছে আদালতের সংস্কৃতি, জনগণের প্রত্যাশা এবং প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা।

উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আইনজ্ঞ, গবেষক ও নাগরিকেরা দাবি করে আসছিলেন একটি স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য এবং কলিজিয়ামভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে। “সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল অর্ডিন্যান্স-২০২৫ প্রণয়নের মাধ্যমে সেই প্রত্যাশা পূর্ণ হয়েছে। ইতোমধ্যেই এই প্রক্রিয়ায় আপিল বিভাগ ও হাই কোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে বহু প্রতীক্ষিত জাতীয় ঐকমত্য আজ আইনে রূপান্তরিত হয়েছে এবং জন-আস্থার যোগ্য একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুদৃঢ় হচ্ছে।”

বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক পৃথকীকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একটি পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার ভিত্তি প্রায় সম্পূর্ণ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সক্রিয় সহযোগিতা ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আমরা অগ্রসর হচ্ছি একটি যুগপৎ প্রশাসনিক দ্বৈতকাঠামো (পোস্টিং, বদলি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত) অবসানের পথে।” এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবন এবং এর কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রায় এক দশক ধরে স্থবির থাকা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের শৃঙ্খলা ও অপসারণের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।

বিচার প্রক্রিয়ায় আধুনিকায়ন এবং বিচার প্রার্থীদের জন্য হেল্প-লাইন সার্ভিস চালুকরণ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের ৮টি বিভাগীয় শহর ও ৬৪টি জেলায় হেল্পলাইন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এ সব কিছুর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার আমূল পরিবর্তিত হয়েছে।

জেলা পর্যায়ে ২৩২টি নতুন বিচারিক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো ক্রমবর্ধমান মামলা জট নিরসন এবং মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতা নিরসন করবে। বিশেষায়িত বাণিজ্য আদালত প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে বাণিজ্যিক আদালত অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশটি কেবল বিশেষায়িত আদালতই নয়, বরং দক্ষ বিচারক, প্রযুক্তিনির্ভর প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বাণিজ্য সংক্রান্ত বিরোধগুলোর দ্রুত ও নিশ্চিত সমাধান পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করবে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশে ‘কেইস ফর ডুয়িং বিজনেস’ পরিবেশ আরও শক্তিশালী হবে।

প্রধান বিচারপতি গত ২১ সেপ্টেম্বর তার দেওয়া অভিভাষণে বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ তুলে ধরেন, যাতে তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বতন্ত্রীকরণ ও বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক পৃথকীকরণের বিষয়ে বিশদ আলোকপাত করেন। এর আগে এ ধরনের আরও আটটি সেমিনার দেশের সাত শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, রংপুর ও খুলনায় আয়োজন করা হয়েছে। এই আট সেমিনারের মধ্যে ঢাকায় আয়োজন করা হয় দুটি, যার মধ্যে একটি আঞ্চলিক ও একটি জাতীয়।

বরিশালে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ইউএনডিপির বাংলাদেশে আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার। এছাড়া বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মি. হকোন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ্ কুক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত