
জুলাই সনদের সই না করা অংশের দায় নেবে না বলে জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জুলাই সনদে আমরা যে অংশে সই করেছি, তার দায়দায়িত্ব আমরা নেব। কিন্তু যেটা আমরা সই করিনি, সেটার দায় আমরা নেব না।’ গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সনদে সই করার সময় বলেছিলাম, যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে, সেগুলো সই হবে। যেসব বিষয়ে একমত হবে না, সেগুলো নোট অব ডিসেন্ট হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই নোট অব ডিসেন্টের কোনো উল্লেখই নেই। আমাদের বক্তব্যগুলো বেমালুম বাদ দেওয়া হয়েছে, বরং নতুন কিছু বিষয় যোগ করা হয়েছে-এটা জনগণের সঙ্গে নিঃসন্দেহে প্রতারণামূলক কাজ।’
ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘ভারতে বসে শেখ হাসিনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। একবারের জন্যও তিনি তার কর্মকাণ্ডের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেননি। আজ তিনি অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভারত সরকারকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দিন। বাংলাদেশের আইনে যে বিচারের মুখোমুখি তাকে হতে হবে, সেই বিচারের মুখোমুখি করার ব্যবস্থা করুন। সব সময় বাংলাদেশের বিরোধিতা করবেন না, বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেবে না।’ মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এই দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায়। এই হামলা-ভয় দেখিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে কখনও পরাজিত করা যায় না।’
একই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, আমাদের জুলাই সনদের প্রয়োজন নেই। একটি সংসদ প্রয়োজন, যারা গণতন্ত্রকে বাস্তবায়ন করবে। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার তাদের ভুলিয়ে দিতে চায় এমন অভিযোগ তুলে মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, এই সরকার কোথাও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার চেষ্টা চলছে। অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষার বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এ সংগ্রামের সঙ্গে অন্য কোনো আন্দোলনের তুলনা হয় না। এই দেশের জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। তিনি আরও বলেন, আজ ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে ঘিরে নানা ষড়যন্ত্র করছে। যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করা হয়, তবে তাদের প্রতিহত করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ঐকমত্য কমিশন তাদের মতামত জনগণ ও রাজনীতিবিদদের ওপর চাপাতে চাচ্ছে; মতামতের জন্য এই কমিশন গঠন করা হয়নি। গতকাল শনিবার রাজশাহী জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত বিভাগীয় ব্যবসায়ী সম্মেলনে তিনি বলেন, কমিশন তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাচ্ছে। তিনি আরও জানান, বিএনপি ক্ষমতায় এলে ১৮ মাসের মধ্যে ১ কোটি চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
মেগা প্রজেক্টের বদলে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে উন্নয়ন। আমীর খসরু দাবি করেন, আগে যারা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন তারা ব্যবসায় সফল হয়েছেন, তবে তখন লুটপাট বেশি হয়েছে। তিনি বলেন, রাজনীতির সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে চাই। ব্যবসায়ীরা যেন রাজনীতিবিদদের কাছে না যান, বরং রাজনীতিবিদরা যাতে ব্যবসায়ীদের কাছে যান। ঢাকায় বসে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় শিল্প, কৃষি নিয়ে, কিন্তু স্বচক্ষে গিয়ে দেখা হয় না, যাদের জন্য সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছে, তাদের সঙ্গে সংযোগ আছে কি না, সে সংযোগ থাকে না।
এখান থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দলের পক্ষ থেকে সব বিভাগে যাচ্ছি। তাদের কথা শোনার ও বোঝার চেষ্টা করছি। আমাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, এই সংস্কৃতি আনতে চাই। আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হতে চাই না, এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ক্ষমতায় নির্বাচিত হলে, আবার আমরা ফিরে আসব, আপনাদের কথা শুনব, প্রশ্নের সম্মুখীন হব। তিনি এারা বলেন, কৃষিতে শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা কাজ করতে শুরু করেছে, এটা সুখবর। তাদের মাঝে আধুনিক জ্ঞান আছে। দক্ষতার প্রয়োজন আছে, প্রযুক্তির প্রয়োজন আছে।