ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পাঁচ দফায় অনড় আট ইসলামি দল

* সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করব : তাহের * দাবি না মানলে ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে : গোলাম পরওয়ার * গণভোট না হলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না : গাজী আতাউর
পাঁচ দফায় অনড় আট ইসলামি দল

আজ জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি এবং অবিলম্বে গণভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়া না হলে আগামী ১১ নভেম্বরে ঢাকায় জনস্রোত হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আট ইসলামি দলের নেতারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আনুষ্ঠানিকভাবে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে আট দলের প্রতিনিধিরা। স্মারকলিপি প্রদান শেষে রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ে সংবাদ সম্মেলনে আট দলের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

রাজধানীর পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ববর্তী সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছে। ফেব্রুয়ারি কাছাকাছি চলে এসেছে, কিন্তু গণভোটের তারিখ ঘোষণা হচ্ছে না। নির্বাচনের আগে গণভোট দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘সোজা আঙুলে যদি ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করব।’

সমাবেশে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেও গণভোট করতে আইনি বাধা নেই। এ বিষয়ে সময়ক্ষেপণ অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলবে। সে ক্ষেত্রে নতুন পথ বেরিয়ে আসবে। তাহের আরও বলেন, অনেকে গণভোটের ক্ষেত্রে খরচের কথা বলেন। এক দিনে বাংলাদেশে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়, সেই টাকা দিয়ে একটা গণভোট করা যায়। তাই গণভোটে টাকার অভাব হবে না। জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ, জামায়াত নির্বাচন, সমাধান, শান্তি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চায়। সরকারও দলগুলোকে আলোচনা করতে বলেছে। তবে সরকারকে এ ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে হবে। তাহের বলেন, দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য জামায়াত একটি কমিটি গঠন করেছে। অন্য দলগুলোও যাতে আলোচনার জন্য কমিটি গঠন করে। অবিলম্বে আলোচনা শুরু হোক। সময়ক্ষেপণ করা যাবে না।

আলোচনার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কল করেও পাননি বলে জানান সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আবারও কল করা হবে। তাকে অনুরোধ করা হবে, বিএনপির পক্ষ থেকেও যাতে আলোচনায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত আসে। জামায়াত নেতা তাহের বলেন, ‘আর হিংসা, রাজনৈতিক বিরোধ নয়। জাতি মনে করে মেজর দলগুলো বসে শুধু জুলাই সনদ নয়, আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে, সেই বিষয়ে আলোচনা করবে। সেই আলোচনায় নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হবে না— দলগুলোকে এই বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করতে হবে। সেটি টেলিভিশনে সম্প্রচার করতে হবে। জাতির কাছে টেলিভিশনে ওয়াদা করতে হবে কেন্দ্র দখল হবে না। কোনো দল সেটি করলে সেই কেন্দ্রের ভোট বাতিল হবে, এমন ঘোষণা দিতে হবে। তাহের বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকেও বলতে হবে, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সেটি বাতিল করে নতুন করে নির্বাচন দেবেন। এ দেশের মানুষ আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন দেখতে চায় না। সেটি মেনে নেওয়া হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বাংলাদেশ অন্ধকারের দিকে চলে যাবে, শেখ হাসিনার আমল ফিরে আসবে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কাছে আহ্বান জানান তাহের। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এরপরও উন্নতি না হলে ১১ নভেম্বর ঢাকা মহানগরী হবে জনতার নগরী। ১১ নভেম্বর হবে, চলো চলো ঢাকা চলো।

পাঁচ দাবির স্বারকলিপি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়ার বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, যমুনায় যাওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক স্মারকলিপি গ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন, তবে আমাদের দাবি ছিল আমরা মহাপরিচালকের কাছে স্মারকলিপি দেব না। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছেই স্মারকলিপি দিতে চেয়েছি। পরে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান আমাদের স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা ৮ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আদিলুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। স্মারকলিপি পড়ে শুনিয়েছি। শিল্প উপদেষ্টা আমাদের দাবির সঙ্গে দ্বিমত করেননি। তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের ৫ দাবি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। গোলাম পরওয়ার বলেন, শিল্প উপদেষ্টা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আলোচনার কথা। সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, আগামী ১১ নভেম্বর ঢাকায় লাখ লাখ জনতার উপস্থিতির আগে আমাদের ৫ দাবির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন। নতুবা ঢাকার অবস্থা ভিন্ন হবে।

গণভোট না হলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না- গাজী আতাউর : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, অতি দ্রুত গণভোটের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হবে না। দুইটার তফসিলও একসঙ্গে হবে না। তিনি বলেন, প্রয়োজনে জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না, দুইমাস পরে করেন। কিন্তু গণভোট ছাড়া কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না। রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।

গাজী আতাউর রহমান বলেন, আমরা নভেম্বরে গণভোটের বিষয় বারবার বলেছি। আপনারা কালক্ষেপণ করছেন। এখন যদি নভেম্বরে গণভোট করতে না পারেন তাহলে যেদিন-ই দেন গণভোট আগে হতে হবে। প্রয়োজনে জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না, দুইমাস পরে করেন। কিন্তু গণভোট ছাড়া কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না। রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। কারণ রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য আমাদের তরুণ ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে। আমরা মাত্র আন্দোলন শুরু করেছি। আন্দোলন ক্রমে তীব্র হবে। আপনারা আন্দোলন চাইলে আন্দোলনই হবে। তিনি বলেন, বিএনপি সংস্কারকে বারবার বাধাগ্রস্ত করেছে, তারা রাষ্ট্র সংস্কার চায় না, সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি চায় না। তাদের সিনিয়র নেতাদের কথাবার্তায় এটা বারবার স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পরে দেশকে আর কোনো অবস্থায় আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে দেওয়া যাবে না। তাই সংস্কার করতেই হবে। সেজন্য অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ দিতে হবে এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে তফসিলের আগেই গণভোট দিতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে আমাদের রাজপথে নামতে হবে, দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে হবে- তা আমরা ভাবিনি। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের বাধ্য করেছে। তাদের তিনটা অঙ্গীকার ছিল। আমরা বলব, সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করুন। সংস্কারের জন্য কমিশন হয়েছে, ঐকমত্য কমিশন হয়েছে, জুলাই সনদ হয়েছে, সনদে সাক্ষর হয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছে, সংস্কার বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়েও সবাই একমত হয়েছে- এখন গড়িমসি কীসের? আগামী ১০ তারিখের (১০ নভেম্বরের) মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি না হলে আমরা ঢাকায় লোকে লোকারণ্য করে সমাবেশ করবো, ইনশাআল্লাহ।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে পল্টন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলে ‘পিআর ছাড়া নির্বাচন, মানি না মানব না’, ‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন, মানি না মানব না’, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, দিতে হবে দিয়ে দাও’, ‘গণভোটের তারিখ, দিতে হবে দিয়ে দাও’, ‘নভেম্বরে গণভোট, দিতে হবে দিয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।

দলগুলোর পাঁচ দফা দাবি হলো- জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং ওই আদেশের ওপর নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে বা উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের সব জুলুম–নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর’ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। ইসলামি আটটি দলের মধ্যে রয়েছে- জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত