
বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। রঙিন পোশাকে খেলা ছাড়লেও দুই দশকের ক্যারিয়ারে এখন শুধু সাদা পোশাকে খেলে যাচ্ছে এ উইকেটরক্ষ ব্যাটার। এবার সে সাদা পোশাকেই গড়লেন ইতিহাস। দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলার মাইলফলক ষ্পর্শ করেছেন তিনি। এবার সেটি আরও রঙিন করলেন সেঞ্চুরি দিয়ে।
ইতিহাস গড়তে পারতেন আগের দিন বিকেলে। স্রেফ এক রানের অপেক্ষা নিয়ে গত বুধবার মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন শেষ করেছিলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। এদিনই বাংলাদেশের প্রথম কোনো ক্রিকেটার হিসেবে তিনি শততম টেস্টের মাইলফলক পূর্ণ করেছিলেন। এবার সেটি সেঞ্চুরি দিয়েই রাঙালেন মুশফিক। শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করে তিনি কিংবদন্তি গর্ডন গ্রিনিজ, জাভেদ মিঁয়াদাদ, ইনজামামণ্ডউল-হক ও গ্রায়েম স্মিথদের কাতারে ঢুকে গেলেন। আগের দিন ৯৯ রানে অপরাজিত মুশফিক গতকাল বৃহস্পতিবার ক্রিজে আসেন। সঙ্গী আগেরদিন ৪৭ রান করা লিটন দাস। মুশফিক ম্যাথু হাম্প্রিসের করা প্রথম ওভারটা ঠাণ্ডা মাথায় কাটিয়ে দেন। পরের ওভারে লিটন আসেন স্ট্রাইকে, জর্ডান নিলের করা প্রথম বলেই তিনি সিঙ্গেল রান নেন। মুশফিক তৃতীয় বলটি স্কয়ার লেগে পাঠিয়ে নিজের অপূর্ণ ম্যাজিক ফিগারটা পূর্ণ করে প্রসারিত করেন দু’হাত। এরপর কৃতজ্ঞতা জানান সৃষ্টিকর্তার প্রতি। শততম টেস্টে করা সেঞ্চুরি দাদা-দাদী, নানা-নানীকে উৎসর্গ করেছেন মুশফিক। পাশাপাশি সমৃদ্ধ ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পেছনে স্ত্রীকে বেশি কৃতিত্ব দিলেন তিনি।
শততম টেস্ট খেলতে নেমে সেঞ্চুরি করার কীর্তিতে বাংলাদেশের এই তারকা বিশ্বের ১১তম ক্রিকেটার। মুশফিকের আগে শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করা নামগুলো বিশ্ব ক্রিকেটে অনেক বড়। ১৯৬৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই রেকর্ডে প্রথম নাম লেখান ইংল্যান্ডের কলিন কাউন্ড্রে। ১৯৮৯ সালে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরিতে তাতে যোগ দেন পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াঁদাদ। ১৯৯০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শততম টেস্টে ১৪৯ রানের ইনিংস খেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিংবদন্তি গর্ডন গ্রিনিজ। ইংল্যান্ডের আলেক স্ট্রুয়ার্ট। ২০০৫ সালে পাকিস্তানের ইনজামাম উল হক ভারতের বিপক্ষে শততম টেস্টে করেন ১৮৪ রান। রিকি পন্টিং দুইবার নাম লেখান এই তালিকায়। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজের শততম টেস্টের দুই ইনিংসেই করেন সেঞ্চুরি। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ ২০১২ সালে নিজের শততম টেস্ট ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ১৩১ রান। আরেক প্রোটিয়া ব্যাটার হাশিম আমলা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জোহেন্সবার্গে তার শততম টেস্ট রাঙান ১৩৪ রানের ইনিংস খেলে। ইংল্যান্ডের জো রুট ও ডেভিড ওয়ার্নার আরেকটু আলাদা। এই দুজনের নিজের শততম টেস্টে করেন ডাবল সেঞ্চুরি। ২০২১ সালে ভারতের বিপক্ষে চেন্নাইতে এই কীর্তি গড়েন রুট। ওয়ার্নার ২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করেন ঠিক ২০০ রান। মুশফিক ম্যাজিক ফিগার পূর্ণ করে আরেকটি রেকর্ড গড়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে মুমিনুল হকের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ১৩তম সেঞ্চুরি করলেন তিনি। এরপর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। হাম্প্রিসের হালকা বাউন্স ও ঘূর্ণিতে স্লিপে অ্যান্ডি বালবার্নিকে ক্যাচ দিয়েছেন শততম ম্যাচের এই সেঞ্চুরিয়ান। মুশফিক ২১৪ বলে ১০৬ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৫টি চারের সাহায্যে। তার বিদায়ে ভাঙল লিটনের সঙ্গে গড়া ১০৮ রানের জুটি। ৩১০ রানে পঞ্চম উইকেট হারাল বাংলাদেশ। সতীর্থের স্মরণীয় সেঞ্চুরির পরের বলেই লিটন চার হাঁকিয়ে টেস্টে ২০তম হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। এই মুহূর্তে তার সঙ্গে ক্রিজে আছেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। আগেরদিন স্বাগতিকরা ৪ উইকেটে ২৯২ রান তুলে দিন শেষ করেছিল।