
শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দুই মামলার একটির অভিযোগ গঠনের শুনানি ৩ ডিসেম্বর ও অন্যটির ৭ ডিসেম্বর। গতকাল রোববার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই দিন ধার্য করেন।
এদিকে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টিএফআই ও জেআইসি সেলে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১৩ সেনা কর্মকর্তার ভার্চুয়ালি হাজিরার আবেদনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেননি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। গতকাল রোববার এই আবেদনের শুনানিকালে ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করেন, আইন সবার জন্যই সমান।
এদিন অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের সশরীরে আদালতে হাজির করা হলেও ভবিষ্যতে তাদের ভার্চুয়ালি হাজিরা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার হামিদুল মেজবাহ।
শুনানির এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করেন, ‘আইন সবার জন্য সমান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের আসামি হিসেবে এই আদালতে হাজির করা হয়েছে। ওনারা (সেনা কর্মকর্তারা) কি তাদের বাইরে?’ আদালত তাৎক্ষণিকভাবে এই আবেদনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে জানান, পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে শুনানি হবে। সশরীরে হাজির করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকলে তা আদালতকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আপনারা এ বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করলে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থাগ্রহণ করব।’
এর আগে আজ সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় অভিযুক্ত সেনাবাহিনীর ১৩ কর্মকর্তাকে আইসিটিতে হাজির করা হয়।
সকাল ১০টার কিছু পরে ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সাব-জেল থেকে একটি বিশেষ প্রিজন ভ্যানে করে পুলিশ ওই কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসে। এরপর প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে তাদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
পরে শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় সাবেক হাসিনাসহ এই সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন নির্ধারণ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দুই মামলার একটির অভিযোগ গঠনের শুনানি ৩ ডিসেম্বর ও অন্যটির ৭ ডিসেম্বর।
গুম-খুন মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে লড়বেন জেড আই খান : গুম-খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পক্ষে লড়াই করার জন্য প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্না নিয়োগ পেয়েছেন। এখন থেকে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে তিনি হাসিনার হয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলা পরিচালনা করবেন।
গতকাল রোববার দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই নিয়োগ দেন। মামলায় শেখ হাসিনাসহ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠনের শুনানি নির্ধারণ করা হয়েছে। দুই মামলার একটি অভিযোগ গঠনের শুনানি ৩ ডিসেম্বর এবং অন্যটি ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না আগে থেকেই শেখ হাসিনার পক্ষে মামলা পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। এ বছর আগস্টে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার পলাতক আসামির পক্ষে আইনজীবী হওয়ার জন্য তার আবেদন খারিজ করা হয়েছিল।
গতকাল রোববার সকালে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে গুম-খুনের মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে লড়ার ইচ্ছা পুনরায় প্রকাশ করেন। এই নিয়োগের মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে মামলার সকল বৈধ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবেন।
হাসিনার রায় ঘিরে ছড়িয়ে পড়া ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের ছবি সরানোর নির্দেশ : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের রায় ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিচারক সংশ্লিষ্ট ছবি ও মন্তব্য মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল রোববার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল বিটিআরসি ও তথ্য সচিবকে এ আদেশ দেন।
১৩ নভেম্বর জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড, আর সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের সাজা দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-১। রায় ঘোষণার পর সামাজিক ও সংবাদমাধ্যমে বিচারকদের ছবি ব্যবহার করে অবমাননাকর মন্তব্য ছড়িয়ে পড়ায় ট্রাইব্যুনাল এ বিষয় নজরে আনে। এরপর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও তথ্য সচিবকে এসব ছবি ও মন্তব্য মুছে ফেলার নির্দেশ দেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন, মুক্ত চিন্তা ও বাক স্বাধীনতা সবার জন্য স্বীকৃত, তবে তা দেশের আইনের মধ্যে থেকে ও অবমাননা ছাড়া হতে হবে। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিমসহ অন্যান্যরা। এ ছাড়া আসামিপক্ষের আইনজীবী ও সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন।