ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

১৪ তারিখে তফসিলের গুঞ্জন

১৪ তারিখে তফসিলের গুঞ্জন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠানের জন্য সমানভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় আজ রোববার নির্বাচন ভবনে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসি আলোচনা করে ১১ অথবা ১৪ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণা করতে পারে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, আগামী ১১ অথবা ১৪ ডিসেম্বর সংসদ ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন ৫০ থেকে ৫৫ দিন হাতে সময় রেখে ফেব্রুয়ারির ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করতে পারে। এরইমধ্যে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, আইনবিধি সংস্কার, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সম্পন্ন করা হয়েছে।

ইসির সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত ৩০০ আসনের সীমানাসংক্রান্ত গেজেটের ভিত্তিতেই তফসিল ঘোষণা করবে। অপরিবর্তিত থাকছে সংসদীয় আসনের সীমানা। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনবিষয়ক রুলের জবাবও প্রস্তুত করেছে ইসি।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, সংসদ ও গণভোটের জন্য এবার দুটি ব্যালট থাকছে। তাই সময় ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। মক ভোটিংয়ে দেখা গেছে, একজন ভোটার গড়ে ৩ মিনিট ৫২ সেকেন্ড সময় নিয়েছেন। যে ভোটার গণভোটের ব্যালট না পড়ে ভোট দিয়েছেন তার সময় লেগেছে ২ মিনিট; আর যিনি ব্যালট পড়েছেন তার ভোট দিতে ৭ থেকে ৮ মিনিট সময় লেগেছে।

নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, যেহেতু গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একদিনে হবে, তাই গোপন কক্ষের সংখ্যা বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। আবার ভোটের সময় ১ ঘণ্টা বাড়িয়ে ৯ ঘণ্টা করা হতে পারে। এজন্য সকাল ও বিকাল উভয় দিকেই সময় বাড়ানোর কথা বিবেচনায় আছে। এখন সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হয়; সেটি সাড়ে ৭টা থেকে শুরু হতে পারে। আবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে; সেটি সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।

প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট নেওয়ার আয়োজন হচ্ছে ‘আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট’ ব্যবস্থায়। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার ব্যয় অনুমান করা সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় ১০ লাখের বেশি জনবল নিয়োজিত থাকবে। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোও এবার আগেভাগে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু দল তফসিল ঘোষণার আগেই প্রাথমিকভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে রেখেছে। এখন অপেক্ষা তফসিল ঘোষণার। বিএনপি এরইমধ্যে ২৭৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। জামায়াতে ইসলামী ২৯৮টি আসনে প্রাথমিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এসব সম্ভাব্য প্রার্থী নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ শুরু করেছেন। তবে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রতীক বরাদ্দের পর।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপি এবার জোটবদ্ধ নির্বাচনে যাবে নাকি সমমনাদের সঙ্গে আসনভিত্তিক সমঝোতা করবে- তা এখনও পরিষ্কার নয়। বেশ কিছু আসনে তারা এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি। জোট বা সমঝোতা যেটাই হোক, সমমনা দলগুলোকে কিছু আসন ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়ের আগে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে। দলের নির্বাচনি প্রচারকৌশল অনেকটাই চূড়ান্ত; নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়নের কাজও চলছে। তবে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনসংযোগ কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়েছে।

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ আটটি দল নির্বাচনি সমঝোতার মধ্যে রয়েছে। আরও কয়েকটি দলকে সঙ্গে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বে কোনো জোট হবে নাকি আসন সমঝোতা হবে- এটি এখনও ঠিক হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে জামায়াতের ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন আসতে পারে। তাদের প্রার্থীরাও জনসংযোগে ব্যস্ত। অন্যদিকে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এরইমধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি শেষ হয়েছে। এখন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার আগেই আংশিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারে তারা।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াতের বাইরে অন্য কিছু দলও নির্বাচনি জোট বা সমঝোতার চেষ্টা করছে। গত ২৯ নভেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক কনভেনশনে বামপন্থি ৯টি দল ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’ নামে বৃহত্তর জোট গঠনের ঘোষণা দেয়। এই জোটে থাকছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ছয় শরিক- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন।

এছাড়া যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ জাসদ (শরীফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন), প্রয়াত পঙ্কজ ভট্টাচার্যের প্রতিষ্ঠিত ঐক্য ন্যাপ ও বাসদ (মাহবুব)। এনসিপি, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণঅধিকার পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে নির্বাচনি জোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের উদ্যোগে গঠিত রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘আপ বাংলাদেশ’ (ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ)কে জোটে রাখার প্রশ্নে মতভেদের কারণে আলোচনা স্থগিত রয়েছে। এনসিপি একক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্য দলগুলো এখনও জোটের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ঢেলে সাজানো হচ্ছে মাঠ প্রশাসন : সর্বশেষ তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধিনে অনুষ্ঠিত হলেও সেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক ছিল। এবার অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ইতোমধ্যে বড় ধরনের রদবদল শুরু করেছে।

জাতীয় নির্বাচনে সাধারণত ৬৪ জেলার ডিসি এবং ঢাকা- চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনাররা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। ইউএনওরা থাকেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পর্যায়ে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। এছাড়া লটারির মাধ্যমে ৬৪ জেলায় পুলিশ সুপার (এসপি) এবং মহানগর ছাড়া ৫২৭টি থানার ওসি পদায়ন করা হয়েছে।

ইসি সূত্র জানায়, তফসিল ঘোষণার পর মাঠ প্রশাসনে আর বড় কোনো রদবদলের প্রয়োজন হবে না বলে কমিশন মনে করছে। তবে কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে বিষয়টি বিবেচনা করবে ইসি। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর প্রধান নির্বাহী বদিউল আলম মজুমদার বলেন, পুরো জাতি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। তিনি আশা করেন, ইসির ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই তফসিল ঘোষণা হবে এবং সবকিছু সুচারুভাবে সম্পন্ন হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত