ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিজয়ের মাস

খুলনার দিকে পালিয়ে যায় পাকবাহিনী

খুলনার দিকে পালিয়ে যায় পাকবাহিনী

আজ ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১। তারায় তারায় খচিত আকাশের নিচে কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের রাত। থমথমে নৈঃশব্দ ভেঙে থেকে থেকে ভেসে আসছে ঝিঁঝিপোকার ডাক। বিশাল বাঁশঝাড়ের অন্ধকারে জোনাকি পোকার রহস্যময় আনাগোনা। ভোর না হতেই হয়তো অনেকের মুখেই অমোঘ মৃত্যুর ছায়া পড়ে। অবচেতন মনে মৃত্যুচিন্তা যোদ্ধার নিত্যসঙ্গী। আর সেই মৃত্যুর মধ্যদিয়েই বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে থাকে

মুক্তিবাহিনী। দেশের আনাচে কানাচে সর্বস্তরে লড়াই চলে স্বাধীনতার লড়াই। অস্তিত্বের লড়াই। এই লড়াই বাঙালি জাতির ইতিহাস। এ লড়াই আমাদের গৌরবগাথা।

এদিন পাকিস্তানের উচিত বাংলাদেশকে মেনে নেওয়া এবং নিজেদের ভুল সংশোধন করা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য টেলিগ্রাফ ও টাইমস পত্রিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে মত প্রকাশ করে। ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বাস্তবতা হলো, সদিচ্ছা ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশকে আর দমিয়ে রাখা যাবে না।

অন্যদিকে দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লাকসাম, চাঁদপুর ও যশোর প্রবল চাপের মুখে পড়ে পাকিস্তান বাহিনী। যুদ্ধে এসব এলাকায় জনবল ও সম্পদের বিচারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে গেছে। রাজাকারদের অস্ত্রসহ শটকে পড়ার সংখ্যা বাড়ে। গোপন সৈন্যদের পিছিয়ে এনে প্রতিরোধ ঘাঁটিতে সমবেত করার জন্য পরিকল্পনা অনুমোদন করে পাক বাহিনীর সদস্যরা। একদল যায় ফরিদপুর-গোয়ালন্দের দিকে। বড় দলটি যায় খুলনার দিকে। ঢাকার দিকে না গিয়ে বস্তুত খুলনার দিকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। যশোরের পতন পাকিস্তানের সামরিক কেন্দ্রমূলে প্রবল নাড়া দেয়।

মিত্রবাহিনী সিলেটের নিকটবর্তী বিমানবন্দর শালুটিকরে অবতরণ করার পর মুক্তি বাহিনীর সহায়তায় সিলেট শহর মুক্ত করে। ঝিনাইদহ ও মৌলভীবাজারও মুক্ত হয়। এদিন যৌথবাহিনী চান্দিনা ও জাফরগঞ্জ অধিকার করে। তখন কুমিল্লা ও লাকসামে তুমুল যুদ্ধ চলে। বিকালের দিকে বগুড়া-রংপুর সড়কের করতোয়া সেতুর দখল নিয়ে পাকিস্তানি ও যৌথবাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৭ ডিসেম্বর রাতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, উভয় পক্ষের সৈন্য প্রত্যাহার এবং শরণার্থী প্রত্যাবর্তনের জন্য রাজনৈতিক সমাধানের আহ্বান সম্বলিত এক প্রস্তাব ১০৪-১১ ভোটে গ্রহণ করে। বিপুল ভোটাধিক্যে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। সোভিয়েট ইউনিয়ন, সমাজতন্ত্রী কয়েকটি দেশ, ভারত এবং বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানকারী দ্বিতীয় দেশ ভুটান বাংলাদেশের অভ্যুদয় রোধ করার জন্য এই আন্তর্জাতিক কূটবুদ্ধির বিজয়ের মুখেও অটল থাকে। আক্রমণকারী পাকিস্তানিদের হটিয়ে বাংলাদেশ যখন সাফল্যের পথে এগিয়ে যাচ্ছে তখন জাতিসংঘ কর্তৃক যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।

৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত হয় গাইবান্ধা জেলা। গাইবান্ধা স্টেডিয়ামে ছিল পাকসেনাদের ঘাঁটি। পাশে যমুনা-বহ্মপুত্রের চরে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা একে একে সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি থানা মুক্ত করে গাইবান্ধা শহর ঘিরে ফেলে। চলতে থাকে যুদ্ধ। মুক্তিবাহিনীর প্রবল চাপে সন্ধ্যার দিকে হানাদার বাহিনী, রাজাকার-আলবদরদের ফেলে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পালিয়ে যায়। রণাঙ্গনে তখন বাংলাদেশি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াই এ কোণঠাসা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় দেশের কয়েকটি জেলা। এদিকে রণাঙ্গনে অর্জিত হচ্ছিল একের পর এক সাফল্য। সকল জায়গাতেই সামরিক পরাজয়ের মুখে পিছু হটছিল পাকিস্তানী সৈন্যরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত