ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মস্তিষ্কের ফোলা বেড়েছে হৃদস্পন্দনও বেশি

মস্তিষ্কের ফোলা বেড়েছে হৃদস্পন্দনও বেশি

গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ মো. ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে দ্বিতীয় দিনেও আশাবাদের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। বরং সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তার মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় আরও বেড়েছে এবং একইসঙ্গে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি লক্ষ্য করা গেছে বলে জানিয়েছে তার চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড। চিকিৎসকদের মতে, এই দুটি লক্ষণই রোগীর অবস্থাকে আরও জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। গতকাল রোববার বিকেলে এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ কো-অর্ডিনেটর এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. জাফর ইকবাল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকার ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তার মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি। মেডিকেল বোর্ড জানায়, গত শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সার্জিক্যাল অপারেশন সম্পন্ন হওয়ার পর তাকে উন্নত চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গতকাল চিকিৎসার দ্বিতীয় দিনে পুনরায় তার শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রেন স্টেমে আঘাত এবং বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। একইসঙ্গে আজ তার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে, ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি। চেস্ট ড্রেইন টিউব সচল রয়েছে বলে জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে ব্রেন ইনজুরির কারণে শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এজন্য এসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেক্ট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তক্ষরণের ভারসাম্যহীনতা বর্তমানে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও জানানো হয়। একইসঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।

মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনও অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার চাইলে তাকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলেও জানানো হয়।

অপ্রয়োজনে হাসপাতালে ভিড় না করা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ওসমান হাদির দ্রুত আরোগ্যের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।

মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ডের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- প্রাইমারি কনসালটেন্ট ডা. আলিউজ্জামান জোয়ার্দার, আইসিইউ কনসালটেন্ট ডা. মো. জাফর ইকবালসহ নিউরোসার্জারি, নিউরোমেডিসিন, অ্যানেস্থেসিয়া, কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি, রেসপিরেটরি মেডিসিন, কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি, বক্ষব্যাধি সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, নাক-কান-গলা ও হেমাটোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্টরা।

মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, ডা. লুতফুল আজিজ, ডা. জিল্লুর রহমান, ডা. এ কে এম রেজা, ডা. মাসুম কামাল খান, ডা. জিয়াউল হক, ডা. খন্দকার মাহবুবুর রহমান, ডা. এস এম হাসান শাহরিয়ার, ডা. জুলফিকার হায়দার, ডা. শাহিনুর রহমান, ডা. আতিয়ার রহমান ও ডা. একরাম উদ্দৌলা। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন এভারকেয়ার হাসপাতালের ডিএমএস ডা. আরিফ মাহমুদ।

ওসমান হাদির দুই কিডনির কার্যক্ষমতা ফিরেছে- চিকিৎসক : দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শরিফ ওসমান বিন হাদির অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে কার্যক্ষমতা বন্ধ হয়ে যাওয়া তার দুই কিডনি আবার সচল হয়েছে। ফুসফুসের কার্যক্রমও অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক আবদুল আহাদ। এই হাসপাতালে ওসমান হাদির অস্ত্রোপচার দলে ছিলেন তিনি। আবদুল আহাদ বলেন, রোববার দুপুরে ওসমান হাদির জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সভা হয়েছে। এর আগে ওসমান হাদির ‘রিপিট সিটি স্ক্যান’ করা হয়। পরে মেডিকেল বোর্ডের সভায় চিকিৎসকরা এসব বিষয় জানান।

আবদুল আহাদ বলেন, ওসমান হাদির ব্রেইনের ক্ষত খুব গভীর। এখনও তাঁর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়। লাইফ সাপোর্টের মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের কার্যকারতা চলছে। এই চিকিৎসক ওসমান হাদির জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। আবদুল আহাদ বলেন, ‘খুব এক্সপার্ট হ্যান্ডে তাকে (ওসমান হাদি) হেড শুট করা হয়েছে। ...বুলেটটা রাইট সাইড দিয়ে ঢুকে বাঁ সাইড দিয়ে বের হয়ে গিয়েছে।’ আবদুল আহাদ জানান, ওসমান হাদির ব্রেইনের ভেতরে এখনও বুলেটের একটি অংশ থেকে গেছে। এই অংশের অবস্থান ব্রেইনের স্পর্শকাতর রক্তনালির সঙ্গে।

আবদুল আহাদ বলেন, ‘একটা অংশ বের হয়ে গেছে। অপারেশনের সময় বুলেটের একটি শেল (কাভার) অংশ ডাক্তাররা বের করেছেন। তবে আরও একটি ছোট অংশ এখনও ব্রেইনের ভেতরে থেকে গেছে। ঝুঁকি বিবেচনা করে ডাক্তাররা যদি প্রয়োজন মনে করেন, এই অংশ বের করা সম্ভব তাহলে সেটা করবেন।’ এই চিকিৎসক জানান, ওসমান হাদি এখনও নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। তবে তাঁর পরিবার বিদেশে চিকিৎসার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে; যদিও বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি মেডিকেল বোর্ডের সম্মতি ও পরিবারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।

ওসমান হাদির অবস্থা অপরিবর্তিত, উন্নতি হলে বিদেশে নেওয়ার পরিকল্পনা : দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির অবস্থা অপরিবির্তত রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হতে পারে। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের গতকাল রোববার সকালে এ কথা জানিয়েছেন। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির পাশে রয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওসমান হাদি এখনও আশঙ্কামুক্ত নন। চিকিৎসক ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন। সেই সময় আগামীকাল সোমবার রাতে শেষ হবে। আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, ‘ওসমান হাদি এখনো ডিপ কোমায় আগের অবস্থায় আছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। তবে ইন্টারনাল রেসপন্স আছে।’ ওসমান হাদিকে তাঁর পরিবার ও ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে। অবস্থা বিদেশে নেওয়ার মতো উন্নতি হলেই নেওয়া হবে।

গত শুক্রবার দুপুরে ঢাকার বিজয়নগরে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই ওসমান হাদিকে নেওয়া হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ওই হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান তখন বলেছিলেন, একটি গুলি ওসমান হাদির কানের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে মাথার বাঁ পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা তার প্রাথমিক অস্ত্রোপচার করেন। সেদিন সন্ধ্যায় ওসমান হাদিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এখন সেখানে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রয়েছেন তিনি। তার চিকিৎসায় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

খালেদা জিয়া ও ওসমান হাদির খবরাখবর নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে অনেকে যাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন।

ওসমান হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের নম্বর ধরে মালিককে আটক : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির নম্বর প্লেটের (রেজিস্ট্রেশন নম্বর) সূত্র ধরে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তি মোটরসাইকেলটির মালিক। তাঁর নাম আবদুল হান্নান। তাঁকে গতকাল শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আটক করা হয়। গতকাল রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। এর আগে সকালে র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ওসমান হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল শনাক্ত করেছে। মোটরসাইকেলটির মালিক হিসেবে আবদুল হান্নানকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে র‍্যাব।

ওসমান হাদির অবস্থা অপরিবির্তত রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হতে পারে। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের এ কথা জানান। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির পাশে রয়েছেন তিনি।

ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, হত্যাচেষ্টার এই ঘটনায় আবদুল হান্নানের সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওসমান হাদিকে গুলি করা অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মধ্যে শুটারকে শনাক্ত করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তালেবুর রহমান বলেন, অপরাধীরা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে কি না, এমন কোনো তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। কেন তাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে, তা তদন্তে উঠে আসবে।

ভোটের মাঠে থাকা প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ডিএমপির এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত সন্দেহে র‍্যাব-২ আবদুল হান্নানকে আটক করে। পরে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র‍্যাব। পুলিশ সূত্র জানায়, ওসমান হাদিকে যে মোটরসাইকেল থেকে গুলি করা হয়, সেটি শনাক্ত করা হয়েছে। সেটির মালিক সন্দেহে আবদুল হান্নানকে আটকের পর রাজধানীর পল্টন থানায় সোপর্দ করে র‌্যাব।

এ বিষয়ে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, যে মোটরসাইকেল থেকে গুলি করা হয়েছে, সেটির মালিক আবদুল হান্নান। তাকে গতকাল মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়। জব্দ মোটরসাইকেল ও আটক হান্নানকে পল্টন থানায় দেওয়া হয়েছে। এখন গুলি করা ব্যক্তি হিসেবে সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাব।

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিমের ব্যাংক হিসাব জব্দ : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর সন্দেহভাজন হামলাকারী ফয়সাল করিম মাসুদের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ ছাড়া তার আইটি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দের চিঠি সব ব্যাংকে পাঠানো হয় বলে এনবিআরের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। ফয়সাল করিম মাসুদ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সদস্য।

হাদির ওপর হামলাকারীর সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার তথ্য নেই- ডিএমপি : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীরা ভারতে পালিয়ে গেছেন কি না, এমন কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল রোববার দুপুরে এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তিনি বলেন, ডিবিসহ ডিএমপির একাধিক টিম কাজ করছে। আমরা এখন পর্যন্ত, সম্ভাব্য খুনিরা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য পাইনি। ওসমান হাদির ওপর হামলার তদন্ত সংক্রান্ত সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে জানিয়েছেন, অভিযুক্ত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান এবং তার সহযোগী মোটরসাইকেলচালক আলমগীর হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় (১২ ডিসেম্বর) সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। তাদের বর্তমান অবস্থান আসামের গুয়াহাটি শহরে।

তিনি আরও জানান, ভারতে তাদের সহায়তা করছেন আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) মো. মাসুদুর রহমান বিপ্লব। বিপ্লবের তত্ত্বাবধানে এই হত্যাকারীরা ভারতে অবস্থান করছে।

পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই আক্রমণ করা হয়েছে এবং আরও কয়েকটি হিট টিমের একইরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তির চেষ্টা রয়েছে।

হাদির ওপর হামলায় সন্দেহভাজন দুজনের পাসপোর্ট ব্লক, আটক ৩ : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজনদের পাসপোর্ট ব্লক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। একই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আটকরা হলেন- সিবিয়ন দিও ও সঞ্জয় চিসিম। এছাড়া র‌্যাব পৃথক অভিযানে সন্দেহভাজন মো. আব্দুল হান্নানকে আটক করে পল্টন থানায় হস্তান্তর করেছে। এসময় হামলায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়। পুলিশের দাবি, শেরপুর থেকে আটক দুজন (সিবিয়ন দিও ও সঞ্জয় চিসিম) সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধপথে লোক পারাপার চক্রের সদস্য। তারা হাদির ওপর হামলাকারী ব্যক্তিকে সীমান্ত দিয়ে পার করতে পারে- এমন সন্দেহে তাদের আটক করে নিয়ে আসা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুক্রবার দুপুর আনুমানিক ২টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর পল্টন বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেলযোগে আসা দুর্বৃত্তরা খুব কাছ থেকে গুলি চালিয়ে ওসমান হাদিকে গুরুতর আহত করে। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বর্তমানে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পরপরই তদন্তে নামে পুলিশ। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে দুজন সন্দেহভাজনকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়। তারা হলেন- ফয়সল করিম মাসুদ ও মো. আলমগীর শেখ। সন্দেহভাজন এ দুজন দেশত্যাগ করতে না পারে, সেজন্য তাদের পাসপোর্ট ব্লক করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

এ হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী এলাকায় সীমান্ত দিয়ে লোক পারাপার চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করে পুলিশ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত