
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল সরবরাহ করা হবে। এই প্রটোকলে রাজনৈতিক নেতা এবং আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের বাসস্থান, কার্যালয়, চলাচল, জনসভা ও সাইবার স্পেসে কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন- সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে। এছাড়া গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান। তিনি জানান, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় হামলাকারী ও তার সহযোগীদের পুলিশ এরই মধ্যে শনাক্ত করেছে। তাদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিবিড় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি এরই মধ্যে জব্দ করা হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের হাতের চাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) পরীক্ষা করা হচ্ছে।
প্রধান সন্দেহভাজন ব্যক্তি যাতে কোনোভাবেই সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারে, সে জন্য শুক্রবার রাতেই সবগুলো ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে সন্দেহভাজনদের ছবি ও অন্যান্য তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং র্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে একাধিকবার সন্দেহভাজনদের অবস্থান শনাক্ত করা হলেও বারবার স্থান পরিবর্তনের কারণে এখনও তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, পুলিশ ইতোমধ্যে প্রধান সন্দেহভাজনের চলাচলের খতিয়ান বা ট্রাভেল হিস্ট্রি সংগ্রহ করেছে। এতে দেখা যায়, আইটি ব্যবসায়ী পরিচয়ে তিনি গত কয়েক বছরে একাধিক দেশ ভ্রমণ করেন। সর্বশেষ গত ২১ জুলাই সিঙ্গাপুর ভ্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে- এমন আরও কয়েকজন সন্দেহভাজনকে এরই মধ্যে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালকে বাংলাদেশের কাছে প্রত্যর্পণের অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেছে।
হাইকমিশনারকে জানানো হয়েছে যে, ভারতে অবস্থানকারী পলাতক অপরাধী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের শান্তি স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বিঘ্ন করা এবং আসন্ন নির্বাচন বানচাল করার অসাধু উদ্দেশ্যে ক্রমাগতভাবে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন ও তার দলের সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন।
ভারত সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে যেন তারা অনতিবিলম্বে তার এবং ভারতে পলাতক তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের এসব ফ্যাসিস্ট টেরোরিস্ট কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়।
ভারতীয় হাইকমিশনারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে যে, শরিফ ওসমান হাদির হত্যাচেষ্টাকারীরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা রোধে ভারত সরকার যেন বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতা করে এবং তারা ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলে তাদের যেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে পাকড়াও করার উদ্যোগ নেয় এবং বাংলাদেশের কাছে তাদের প্রত্যর্পণ করে।
গান পয়েন্টে’ থাকা জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর শীর্ষ জুলাই যোদ্ধাদের অনেকের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এজন্য তাদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পুলিশ বলছে, হাজার হাজার জুলাই যোদ্ধার নিরাপত্তা ব্যক্তি পর্যায়ে বা আলাদা করে নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। তবে হাদির মতো যারা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছেন, অথবা ‘গান পয়েন্টে’ আছেন, তাদের নিরাপত্তা জোরদারের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এস এন মো. নজরুল ইসলাম। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর হামলার তদন্ত সংক্রান্ত সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে গতকাল রোববার বিকেল সোয়া ৪টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে ইতোমধ্যে দুজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন ফয়সাল করিম মাসুদ ও মোহাম্মদ আলমগীর শেখ।
ঘটনার তদন্তে জানা যায়, সন্দেহভাজন ব্যক্তি হেলমেট পরিহিত অবস্থায় ভুক্তভোগী ওসমান হাদিকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন ও শনাক্তকৃত সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং অভিযান চলমান রয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা যেন সীমান্ত পার না হতে পারে, সেজন্য তাদের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে পাসপোর্ট ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এছাড়া সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সহযোগিতার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শেরপুরের নালিতাবাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সীমান্ত দিয়ে লোক পারাপারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আমরা দুজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের নিয়ে আসা হচ্ছে। আর র্যাব মোটরসাইকেলের মালিককে আটক করে থানায় সোপর্দ করেছে।
অস্ত্রের ধরন জানতে চাওয়া হলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ফয়সালকে নভেম্বর মাসে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন ও চাঁদাবাজির মামলা আছে। দুটি মামলায় জামিনে বের হয়ে সে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, গত শনিবার ভিপি নূর একটা বক্তব্য দিয়েছেন। জুলাই যোদ্ধা এক হাদি না, হাজারো, লাখো জুলাই যোদ্ধা আছে। এই লাখো জুলাই যোদ্ধার ইন্ডিভিজুয়াল সিকিউরিটি নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। তবে সার্বিক সিচুয়েশনটা আমরা সিকিউর করতে হবে। রাষ্ট্রকে সিকিউর করতে হবে। রাজধানীকে সিকিউর করতে হবে। আমরা এই কাজটাই করছি।