
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) কথা শুনে ‘বুকের জোর’ বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দিনব্যাপী মতবিনিময় সভার প্রথম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এসব কথা বলেন।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমি এখন অনেক আশ্বস্ত হয়ে ফিরছি। আপনাদের কথাবার্তা শুনে আমার বুকের জোর অনেক বেড়েছে। আপনারা মাঠে যান। আমি একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। পেশাগতভাবে কাজ করবেন, কোনোভাবেই পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করবেন না।’
নিজের কোনো ব্যক্তিগত এজেন্ডা নেই উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আমার একমাত্র এজেন্ডা হলো, আমি জাতির জন্য কিছু করতে পেরেছি এটুকু সন্তুষ্টি নিয়ে মরতে চাই।’ তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নির্বাচনের ‘ভিভিআইপি’ হিসেবে অভিহিত করেন। পুলিশ ও প্রশাসনকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রাখার নির্দেশ দেন সিইসি। ময়মনসিংহে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ পোড়ানোর ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের উসকানি অনেক হতে পারে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।
সিইসি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটাররা যাতে নিরাপদে ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন এবং ভোট দিয়ে শান্তিতে বাড়ি ফিরতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন এখন ‘অভিযোগ কেন্দ্রে’ (কমপ্লেইন লজিং সেন্টার) পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত কমিশনে অভিযোগ আসছে। মানুষ জানে না যে অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে করতে হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের সামনে অভিযোগ জানানোর নম্বর টানিয়ে রাখার নির্দেশ দেন তিনি। যাতে কেউ আচরণবিধি ভঙ্গ করলে বা ভয়ভীতি দেখালে মানুষ অভিযোগ জানাতে পারেন।
ঢাকা শহর পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, এগুলো সরানোর খবর তিনি পাচ্ছেন না। প্রতিটি কাজের প্রচার করার পরামর্শ দেন তিনি। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের নির্বাচন পরিচালনা বিধি পড়ার তাগিদ দিয়ে সিইসি বলেন, তা না হলে প্রাথমিক দায়িত্ব পালনেই তারা ব্যর্থ হবেন।
মতবিনিময় সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনকে সুষ্ঠু, সুন্দর ও উৎসবমুখর করার মতো পূর্ণ সক্ষমতা বাংলাদেশ পুলিশের রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আইজিপি বলেন, জুলাই-পরবর্তী সময়ে বাস্তব কারণেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়েছে। তবে আমরা সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছি। নির্বাচনের আগে এই পর্যায়ে এসে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের বাহিনী যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছে।
তুচ্ছ ঘটনায় রাস্তা বা মহাসড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির বিষয়ে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, সমাজের বিভিন্ন অংশে ছোটখাটো ইস্যুতে রাস্তা ও হাইওয়ে অবরোধ করে অস্থিরতা সৃষ্টির যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা বন্ধ করার সময় এসেছে। সব জায়গায় শৃঙ্খলা বা অর্ডার প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। ইসির পদক্ষেপের প্রশংসা করে আইজিপি বলেন, ইলেক্টরাল ইনকোয়ারি কমিটিকে সামারি ট্রায়ালের (সংক্ষিপ্ত বিচার) মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধের বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী। এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রয়োজনে পুলিশের পাশাপাশি যেকোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে পারবেন, এমন প্রবিধান রাখায় আমি কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই। এ সময় পুলিশ প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের রদবদল নিয়ে ইসির কাছে স্পষ্টীকরণ চান আইজিপি। তিনি বলেন, এসপি বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বদলির বিষয়ে কমিশনের নির্দেশনা থাকে। তবে কনস্টেবল বা সাব-ইন্সপেক্টরের মতো সর্বনিম্ন পদেও রদবদলের ক্ষেত্রে কমিশনের পূর্বানুমতি প্রয়োজন কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা প্রয়োজন। আইজিপি বাহারুল আলম প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বলেন, পুলিশ তার সর্বশক্তি ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এবারের নির্বাচন সফল ও শান্তিপূর্ণ করতে বদ্ধপরিকর। দেশবাসী ও নির্বাচন কমিশন আমাদের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারেন।