ঢাকা বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জমিয়তকে চার আসন ছাড় অসন্তুষ্ট স্থানীয় বিএনপি

* সিলেট-৫ : নির্বাচন ছাড়ছেন না বিএনপি নেতা মামুন * ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ : স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন রুমিন * নীলফামারী-১ : তুহিনকে দলীয় প্রার্থী না করায় হতাশা
জমিয়তকে চার আসন ছাড় অসন্তুষ্ট স্থানীয় বিএনপি

নির্বাচনী সমঝোতার অংশ হিসেবে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশকে চারটি আসনে ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। আসনগুলো হলো- নীলফামারী-১, নারায়ণগঞ্জ-৪, সিলেট-৫ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১২টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল জানান, সিলেট-৫ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, নীলফামারী-১ আসনে দলটির মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

৩০০ আসনের মধ্যে ২৭২ আসনে এরইমধ্যে দলীয় প্রার্থীদের নাম দুই দফায় ঘোষণা করেছে বিএনপি। বাকী ২৮ আসনের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার ৪টি আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করল বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, এসব আসনে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেবে না। দলের সিদ্ধান্ত সবাইকে মানতে হবে। কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে এই নির্বাচনি সমঝোতার অংশ হিসেবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সারাদেশের অন্য আসনগুলোতেও তাদের কোনো প্রার্থী দেবে না। তিনি আরও জানান, জমিয়তের প্রার্থীরা তাদের দলীয় প্রতীক ‘খেজুর গাছ’ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দলটি আমাদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। এ বিষয়ে আমাদের দলের পক্ষ থেকে তাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আল্লাহতায়ালার কাছে আমরা দোয়া করি, তাদের এই উদ্যোগ যেন সফল হয়।’ তিনি বলেন, ‘উনারা (জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম) দলের নিজস্ব প্রতীক ‘খেজুর গাছ’ মার্কায় নির্বাচন করবেন। আমাদের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান থাকবে তারা যেন সম্পূর্ণভাবে তাদের সহযোগিতা করেন।’ এ সময় ওই নির্বাচনি এলাকার ভোটারদের খেজুর গাছ মার্কায় ভোট দিয়ে ধানের শীষকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘বর্তমানে একটা ক্রান্তিকাল চলছে। এখান থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু চিহ্নিত গোষ্ঠী বারবার থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।’ তবে তিনি আশা করেন, নির্বাচনকালীন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।

এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিগত দিনে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে জমিয়তে উলামায়ে শীর্ষ স্থানে ছিল। সেই রাজনৈতিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় দলটির সঙ্গে নির্বাচনি আসনের সমঝোতা হয়েছে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আমির মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, ‘দেশ ও জাতির কল্যাণে দেশ পরিচালনায় বিএনপির ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। এ কারণেই বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস কাসেমী, মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমান ও মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী।

এছাড়া, দলের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া ও মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজিজ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা লোকমান মাজহারী উপস্থিত ছিলেন।

জমিয়তকে আসন ছাড়, নির্বাচন ছাড়ছেন না বিএনপি নেতা মামুন : আসন্ন নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুককে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এদিকে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গত বৃহস্পতিবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মামুনর রশিদ (চাকসু মামুন)। তিনি সিলেট জেলা বিএনপির প্রথম সহ-সভাপতি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য কাজ করে আসছিলেন।

এর মধ্যে বিএনপির এমন সিদ্ধান্তে হতাশ সিলেটের জকিগঞ্জ-কানাইঘাট উপজেলার নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ ৩০ বছরে বিএনপির কোনো নেতা এ আসনে দলের মনোনয়ন পাননি। সর্বশেষ ২০১৮ সালেও এ আসনে জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুককে মনোনয়ন দেওয়ায় দলীয় নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বিএনপি নেতা মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন)। দীর্ঘদিনের সেই দুঃখ ঘোঁচাতে এবার বেশ তৎপর ছিলেন বিএনপি নেতারা। সবচেয়ে বেশি আশাবাদী ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মামুনুর রশিদ (চাকসু মামুন) বলেন, ‘আমি নির্বাচন করব এটা চূড়ান্ত। মনোনয়ন ফরম কিনেছি, আজ জমাও দেব। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো চিন্তা নেই। আমি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের জন্য কাজ করছি। এখন আর নির্বাচন না করার কোনো সুযোগ নেই।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন রুমিন ফারহানা : বহুল আলোচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ ও বিজয়নগরের একাংশ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই দফায় প্রার্থী ঘোষণা করলেও শুরুতে জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুটি আসন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬) ফাঁকা রেখেছিল বিএনপি। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার আসন সমঝোতায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের জোটপ্রার্থী জুনায়েদ আল হাবিবকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। যদিও বহুল আলোচিত এই আসনে বরাবরই আলোচনায় ছিলেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তার সম্ভাবনার কথা থাকলেও জোটের সঙ্গে সমঝোতার কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন রুমিন ফারহানা। তিনি জানান, দল থেকে মনোনয়ন না পেলেও তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন।

সমঝোতায় জোটকে ছেড়ে দেওয়া আসনে নির্বাচন করলে দলীয় কোনো কঠিন সিদ্ধান্তের মুখে পড়তে হবে কি না- এমনটা জানতে চাইলে প্রত্যুত্তরে রুমিন ফারহানা বলেন, আশা করা যায় সেটা আমার সঙ্গে হবে না। মনোনয়ন কেনার আগেই সম্মানের সঙ্গে দল থেকে পদত্যাগ করব। দু’একদিনের মধ্যে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করব। স্বতন্ত্র প্রতীক হিসেবে কোনটা পাব বা দেওয়া হবে, সেটা না হয় পরে দেখা যাবে। আরেকটা কথা না বললেই নয়, আশা করি, অত্র এলাকার মানুষের ভালোবাসা এখনও আমার সঙ্গে আছে। তারা এর জবাব ভোটের মাধ্যমেই দেবে।

খালেদা জিয়ার ভাগনে তুহিনকে ফেলে জমিয়তের আফেন্দীর হাত ধরলো বিএনপি : ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নিয়ে গঠিত নীলফামারী-১ আসন। গুরুত্বপূর্ণ এ সংসদীয় আসনে জামায়াত ও এনসিপি অনেক আগে প্রার্থী ঘোষণা করলেও চুপ ছিল বিএনপি।

তবে লড়াই করতে চেয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আপন ভাগনে প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। দল তাকে কেন প্রার্থী ঘোষণা করছে না এ নিয়ে প্রশ্নও ছিল অনেকের। তবে এর অবসান হয়েছে। জোটগত সমঝোতার কারণে আসনটি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীকে ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি।

গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত