ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মান্না-সাকি-নূরদের ১০ আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

এলডিপি মহাসচিবের দলবদল; ঝুলে আছে রব ও পার্থর আসন
মান্না-সাকি-নূরদের ১০ আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে আসন সমঝোতা অনেকটাই শেষ করেছে বিএনপি। দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আসন নিয়ে দর কষাকষির হিসেব-নিকাশে আরো সাতটি দলকে আসন ছাড় দিয়েছে দলটি। এর মধ্যে দু’টি দল বিলুপ্ত করে আসন সমঝোতা করা হয়েছে। আরো কয়েকটি দল একই প্রক্রিয়ায় যেতে পারে। আবার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি থেকে বেরিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেছেন দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন। আসন সমঝোতার ওই প্রক্রিয়ায় এখনো বাইরে রয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি।

এর মধ্যে বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ওই আসনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচন করতে পারেন। আর এটা হলে পার্থকে ভোলার যে কোন একটি আসন দেওয়া হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের উপর। তিনি দেশে ফিরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব অসুস্থ হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে তার স্ত্রী তানিয়া রব নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আসন সমঝোতার অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার দুপুরে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শরিকদের আসন নিশ্চিত করেন। ওই তালিকায় বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নড়াইল-২ আসনে এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, যশোর-৫ ইসলামী ঐক্যে জোটের মুফতি রশিদ বিন ওয়াক্কাস, পটুয়াখালীর-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, ঝিনাইদহ-৪ গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, ঢাকা-১২ আসনে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি আছেন। এ নিয়ে সমমনা দল ও জোটকে মোট ১২ আসনে ছাড় দিলো বিএনপি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, যাদের সাথে নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছে তারা নিজ নিজ প্রতীকে অংশ নেবেন এবং যারা বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন তারা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন। ঘোষিত আসনের মধ্যে এর আগে নড়াইল-২ ও ঢাকা-১২ আসনে নিজ দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছিলো বিএনপি। নড়াইল-২ আসনে বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম এবং ঢাকা-১২ আসনে সাইফুল আলম নীরব ছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও নীরব এই আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির মিত্র দল হিসেবে গণতন্ত্র মঞ্চ জোট, ১২ দলীয় জোট, ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, বিজেপি, গণঅধিকার পরিষদ, এনডিএম, চার দলীয় বাম জোট, লেবার পার্টিসহ প্রায় ৫৭টি দল ও জোট ছিলো। এ দলগুলো মিলে মোট ২২২টি আসনের দাবি করেছিল। সাবেক বিএনপি নেতা অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি (লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি) ৪০টি আসনে দাবি করেছিল, ১২-দলীয় জোট চেয়েছিল ২১টি, গণফোরাম ১৫টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯টি, বিজেপি (বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি) ৫টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ৬টি এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) ১০টি আসন চেয়েছিল। এসব দলের মধ্যে লেবার পার্টি বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করে এককভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ঢাকা-১৩ আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনিও বিএনপিতে যোগদান করে ধানের শীষে নির্বাচন করবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

ঘোষিত আসনের মধ্যে অন্তত দুটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে পটুয়াখালীর-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরের আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন নির্বাচন করার ঘোষণা আগেই দিয়েছেন। অন্যদিকে ঝিনাইদহ-৪ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে দেওয়া হলেও মূলত তিনি ঝিনাইদাহ-২ আসন চেয়েছিলেন। ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ফিরোজ স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন।

এলডিপি মহাসচিবের বিএনপিতে যোগদান : এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলিও গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতায় না যাওয়ার কথা উল্লেখ করে এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী নির্বাচন এককভাবে করার ঘোষণা দেয়। যদিও এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এবং কুমিল্লা-৭ আসনে দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদকে দুটি আসন সমঝোতার ভিত্তিতে আগেই ছেড়ে দিয়েছিলো বিএনপি। তবে এতে নাখোশ কর্নেল অলি এককভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ায় দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ গতকাল গুলশান কার্যালয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন। কুমিল্লা-৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে রেদোয়ান আহমেদ নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব।

রেদোয়ান আহমেদ বলেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। বিএনপির তার শরিকদের আসন বন্টনের সাথে আমি একমত। কিন্তু আমার দলের চেয়ারম্যান অলি আহমেদ বিএনপির এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত নন। এলডিপির সিংহভাগ স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ ও সারাদেশে এলডিপির নেতা-কর্মীরা আমার সাথে একমত পোষণ করেছেন। আমি আশা করি অলি আহমেদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং বিএনপির সাথে নির্বাচনী সমঝোতায় একমত হবেন। তবে কর্নেল অলি নির্বাচনে আসুক আর না আসুক আমি বিএনপির সমঝোতায় একমত হয়ে নির্বাচন করব। আমি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিএনপিতে ছিলাম সেজন্য আমি আজকে বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিচ্ছি এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। তিনি জানান, ‘আমি ইতিমধ্যে আমার পদত্যাগপত্র চেয়ারম্যানের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।’ পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রেদোয়ান আহমেদকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমি তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং তার এই যোগদান ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসার মতো এবং এতে বিএনপিকে আরও শক্তিশালী করবে। এর আগে গত মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশের সাথে চারটি আসনে সমঝোতা হয়। সেগুলো হচ্ছে, নীলফামারী-১ আসনে মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, নারায়নগঞ্জ-৪ আসনে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, সিলেট-৫ আসনে মাওলানা মো. উবায়দুল্লাহ ফারুক এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-২ আসনে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব। ঘোষিত এসব আসনে বিএনপি তাদের কোন প্রার্থী ঘোষণা না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

রদবদল আসছে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় : সারাদেশে বিএনপির প্রার্থী তালিকাতেও রদবদল আসতে পারে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম-৪ আসনের মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আজ দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার পর আরো কয়েকটি আসনে যেখানে বিতর্কিত, দূর্বল প্রার্থী রয়েছে সেখানে ত্যাগী আর জনপ্রিয় নেতাদের আনা হতে পারে। অন্তত ১০টি আসনে এমনটা হতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। এর মধ্যে নোয়াখালী-৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, কুষ্টিয়া-৪, জামালপুর-২, চট্টগ্রাম-১২, চাঁদপুর-২, দিনাজপুর-২ আসন সহ আরো কয়েকটি থাকতে পারে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত