
পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে সৌদি আরব। গত বুধবার ঐতিহাসিক এই ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই করেছে মুসলিম দেশ দুটি। চুক্তিতে বলা হয়েছে, কোনো এক দেশের ওপর হামলা হলে সেটি উভয়ের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত হবে। এই চুক্তি নয়াদিল্লির জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চুক্তির পর প্রকাশিত একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই চুক্তিটি উভয় দেশের নিরাপত্তা জোরদার এবং অঞ্চল ও বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জনের জন্য তাদের অভিন্ন অঙ্গীকারের প্রতিফলন। এর লক্ষ্য হলো দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানো এবং যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তোলা। চুক্তিতে বলা হয়েছে, কোনো একটি দেশের ওপর যে কোনো আগ্রাসনকে উভয় দেশের ওপর আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করা হবে।’
সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এই প্রতিরক্ষা চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে ‘ঐতিহাসিক অংশীদারিত্ব’ এবং ‘অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থ ও ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার’ ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।
গত বুধবার রিয়াদে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের মধ্যে বৈঠকে ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে,’ এসপিএ জানিয়েছে। তারা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী, অভিন্ন স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত প্রচেষ্টা নিয়েও মতবিনিময় করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে একজন জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, এই চুক্তিটি বহু বছরের আলোচনার ফল। এটি নির্দিষ্ট কোনো দেশ বা ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, বরং আমাদের দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের গভীর সহযোগিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া। পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, এটি একটি বিস্তৃত প্রতিরক্ষামূলক চুক্তি, যা সব সামরিক পদ্ধতিকে অন্তর্ভুক্ত করে। এদিকে এই চুক্তির বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ভারত। দেশটি বলছে, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের এই পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি জাতীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে তা খতিয়ে দেখবে তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, কোনো এক দেশের ওপর আগ্রাসন হলে সেটিকে উভয় দেশের ওপর আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করা হবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের খবর আমরা দেখেছি। এ ধরনের একটি উদ্যোগের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল, যা দুই দেশের দীর্ঘদিনের একটি অনানুষ্ঠানিক সমঝোতাকে এখন আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। আমরা জাতীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব খতিয়ে দেখব। জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও সর্বস্তরে সমন্বিত জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই ভারত সরকারের অঙ্গীকার।’ এর আগে সৌদি প্রাসাদ আল-ইয়ামামায় বৈঠকের পর পাকিস্তান ও সৌদি আরবের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, প্রায় আট দশক ধরে চলে আসা ঐতিহাসিক অংশীদারিত্ব ও ইসলামী ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতেই এই প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করা ও যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তোলা। বৈঠকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরও উপস্থিত ছিলেন। মূলত চুক্তিটি এমন সময় স্বাক্ষরিত হলো যখন চলতি বছরের এপ্রিলে কাশ্মিরের পেহেলগামে হামলা ও ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলার জেরে দিল্লি ও ইসলামাবাদের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে রিয়াদের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক ধারাবাহিকভাবে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ভারত এখন সৌদি আরবের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। মোদি তিনবার সৌদি আরব সফর করেছেন এবং ২০১৬ সালে তিনি দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘কিং আবদুল আজিজ স্যাশ’ পেয়েছিলেন।