সব জ্ঞানীর চেয়ে বড় জ্ঞানী আল্লাহ। আল্লাহ নিজ প্রজ্ঞা থেকে যখন পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, সম্মানিত ফেরেশতাদের কাছে ব্যাপারটি জুঁতসই মনে হলো না। কিন্তু পরক্ষণেই তারা প্রভুর ফয়সালা আনত চিত্তে মেনে নিলেন। তারপর তারা সবাই (প্রথম মানব) আদমের সম্মানে সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন। কিন্তু ইবলিস দেখাল তার সুপ্ত হিংসা ও অহংকার। মাটির সৃষ্টি আদমকে সিজদা করতে সে অস্বীকৃতি জানাল। আল্লাহ বলেন ‘স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম : আদমকে সেজদা কর, তখন ইবলিস ব্যতীত সবাই সিজদায় পড়ে গেল। কিন্তু সে বলল : আমি কি এমন ব্যক্তিকে সিজদা করব, যাকে আপনি মাটির দ্বারা সৃষ্টি করেছেন?’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৬১)।
সে নিজেকে শ্রেয় ও শ্রেষ্ঠ দাবি করল : ‘আল্লাহ বললেন আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কীসে সিজদা করতে বারণ করল? সে বলল : আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।’ (সুরা আরাফ : ১২)। তখন থেকেই আল্লাহর এ দুশমন আদম সন্তানের জন্য স্থায়ী শত্রুতার ঘোষণা দিল। ভ্রষ্টতা ও ফেতনার পতাকা তুলে ধরল। মানুষকে শুভ কাজে বাধা দান এবং তাদের অমঙ্গল সাধনের চেষ্টা-চক্রান্তে নিয়োজিত থাকার ব্যাপারে সে নিজেকে শপথবদ্ধ করল। ‘সে বলল : আপনি আমাকে যেমন উ™£ান্ত করেছেন, আমিও অবশ্য তাদের জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকব। এর পর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডানদিক থেকে এবং বামদিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ (সুরা আরাফ : ১৬-১৭)।
আল্লাহর বান্দারা, এভাবেই শয়তান মানবের জন্য জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চিরকালীন শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হলো। মানুষকে কষ্ট দেওয়া এবং বিচ্যুত করার হেন কোনো সুযোগ নেই, যা সে অবলম্বন করে না। বিচিত্র কৌশলে সে তাদের জন্য নানা বর্ণ ধারণ করে। তাদের নিয়ে সে বিবিধ পন্থায় চক্রান্ত রচনা করে। অবিরাম উপায়, অনড় প্রতিজ্ঞা ও বিরামহীন চেষ্টা চালায়।
মানুষের কষ্ট ও ক্ষতির চেষ্টা শয়তান সর্বপ্রথম করে যখন সে জন্ম গ্রহণ করে : মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া এবং দুনিয়ায় স্বাগত হওয়ার ওই শুভলগ্নে শয়তান তার আঙুল দিয়ে নবজাতকের দু’পাশে গুঁতা দেয়। এ জন্যই তখন শিশুরা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘এমন কোনো আদম সন্তান নেই, যাকে জন্মের সময় শয়তান স্পর্শ করে না। জন্মের সময় শয়তানের স্পর্শের কারণেই সে চিৎকার করে কাঁদে। তবে মারিয়াম এবং তার ছেলে (ঈসা) এর ব্যতিক্রম। তারপর আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, (এটা মারিয়ামের মায়ের এ দোয়ার বদৌলতে) ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার কাছে তার এবং তার বংশধরদের জন্য বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’
শয়তানের আরেক সূক্ষ্ম চালাকি ও চক্রান্ত হলো : সে নিদ্রায়-জাগরণে মানুষের মনে ভীতি ও হতাশাকর কুমন্ত্রণা এবং উদ্বেগজনক অস্থির করা চিন্তাভাবনা ঢেলে দেয়। আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ ‘মোমিনদের দুশ্চিন্তায় ফেলার জন্য গোপন পরামর্শ (মনে কুমন্ত্রণা দেওয়া) শয়তানের কাজ। তবে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া তা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। মোমিনদের কর্তব্য হলো একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করা।’ (সুরা মুজাদালা : ১০)। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘সৎ ও ভালো স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আর মন্দ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। অতএব, তোমাদের কেউ যখন ভীতিকর মন্দ স্বপ্ন দেখে, সে যেন তার বাম দিকে থুথু নিক্ষেপ করে, আর শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। তা হলে এরূপ স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বর্ণনায় বোখারি ও মুসলিম)।
শয়তান তার সর্বোচ্চ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে দেয় মানুষের নামাজে : কারণ, নামাজ মোমিনের নিদর্শন। তার সাফল্য ও কল্যাণের নিয়ামক। আর নামাজের সেরা অনুষঙ্গ হলো সিজদা, যা আল্লাহ তায়ালার সামনে সর্বোচ্চ বিনয় ও সমর্পণের প্রকাশ। এ বিনয় দেখাতেই তো ইবলিস অস্বীকার করেছিল সৃষ্টির সূচনায়। যার ফলে আল্লাহ তাকে চূড়ান্ত লাঞ্ছিত করেছেন এবং তার জন্য নিরন্তর লাঞ্ছনা ও পরিতাপ অবধারিত করে দিয়েছেন। তাই রবের সামনে আদম সন্তানের সিজদা এবং তার প্রতি বিনয় প্রকাশকে আল্লাহ বানিয়েছেন শয়তানের হাস্যকর সেই দম্ভ জাহিরের জন্য পরিতাপ ও আফসোস জাগানিয়া। যেমনটি উল্লেখ হয়েছে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেনÑ ‘বনি আদম যখন সিজদার আয়াত তেলাওয়াত করে সিজদায় যায়, শয়তান কাঁদতে কাঁদতে দূরে সরে পড়ে এবং বলতে থাকে : হায়রে আমার দুর্ভাগ্য! বনি আদম সিজদার জন্য আদিষ্ট হলো। তারপর সে সিজদা করল এবং এর বিনিময় তার জন্য জান্নাত। আর আমাকে সিজদার জন্য আদেশ করা হলো; কিন্তু আমি তা অস্বীকার করলাম, ফলে আমার জন্য জাহান্নাম।’ (বর্ণনায় মুসলিম)।
নামাজের ব্যাপারে শয়তানের তৎপরতা অনেক : প্রথমে সে চেষ্টা করে মানুষকে নামাজ থেকেই বিরত রাখতে। এটা করে সে নামাজকে তার কাছে ভারী হিসেবে উপস্থাপন করা এবং নানা অহেতুক কাজ ও গোনাহে তাকে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে। যেমন আল্লাহ বলেছেনÑ ‘শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে?’ (সুরা মায়িদা : ৯১)।
সে দ্বিতীয় চেষ্টা করে আগেভাগে নামাজে যেতে মোমিনের সদিচ্ছা নষ্ট করে দিতে : তার সামনে নামাজ বিলম্ব করা ও দেরিতে পড়ার সুন্দর যুক্তি তুলে ধরে। প্রতারণা করে সে তাকে ওয়াক্ত দীর্ঘ হওয়া এবং সুযোগ প্রসারিত হওয়ার আশা জোগায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেনÑ ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার গ্রীবাদেশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত। তারপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে একটি গিঁট খুলে যায়, পরে ওজু করলে আরেকটি গিঁট খুলে যায়, তারপর নামাজ আদায় করলে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয়, প্রফুল্ল মনে ও নির্মল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে।’
নামাজের মতো এ মহান ইবাদত নষ্টে শয়তান ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের তৃতীয় কৌশল : নামাজের মধ্যে ওয়াসাওয়াসা তৈরি করা। নামাজে দ-ায়মান ব্যক্তির মনে নামাজের কথা ভুলিয়ে দেওয়া। যাতে করে নামাজের প্রাণ ও মগজ এবং সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তথা খুশু-খুজু দূর হয়ে যায়। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আবুল উলা থেকে। তিনি বলেনÑ উসমান বিন আবুল আস (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! শয়তান আমার এবং আমার নামাজ ও কিরাতের মধ্যে প্রতিবন্ধক হয়ে তা আমার জন্য এলোমেলো করে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেনÑ ওটা এক (ধরনের) শয়তান যার নাম ‘খিনযিব’। যখন তুমি তার উপস্থিতি অনুভব করবে, (আউযুবিল্লাহ পড়ে) তার কবল থেকে আল্লাহর নামে আশ্রয় চেয়ে তিনবার তোমার বামদিকে থুথু নিক্ষেপ করবে। তিনি বলেনÑ পরবর্তী সময়ে আমি এমনটি করলে আল্লাহ আমার থেকে তা দূর করে দিলেন।’
শয়তান অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রিয়জনদের মধ্যে বিশেষত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শত্রুতার আগুন জ্বালিয়ে দিতে : কেননা পরস্পর ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যরে মধ্যে নিহিত আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মনের সুখ। আর আল্লাহর আনুগত্যমাফিক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিক থাকলে সেটা পরিবারের সুখ ও জীবনের স্ফূর্তি বয়ে আনে। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেনÑ ‘ইবলিস পানির ওপর তার আরশ স্থাপন করে নিজের বাহিনী প্রেরণ করে। তাদের মধ্যে তার সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত সেই যে সর্বাধিক ফেতনা সৃষ্টিকারী। তাদের একজন এসে বলে, আমি অমুক অমুক কাজ করেছি। সে বলে, তুমি কিছুই করনি। অতঃপর অন্যজন এসে বলে, অমুকের সঙ্গে আমি সব ধরনের ধোঁকার আচরণই করেছি। এমনকি তার থেকে তার স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন না করা পর্যন্ত আমি তাকে ছেড়ে দিইনি। অতঃপর শয়তান তাকে তার নিকটবর্তী করে নেয় এবং বলে হ্যাঁ, তুমি একটি বড় কাজ করেছ। বর্ণনাকারী আমাশ বলেন, অতঃপর শয়তান তাকে তার বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নেয়। অর্থাৎ কোলাকুলি করে।’ (বর্ণনায় মুসলিম)।
শয়তানের আরেক নিকৃষ্ট চক্রান্ত হলো, সে যখন বৃহত্তর ফেতনা সৃষ্টি করতে না পারে, অন্তত তার চেয়ে নিম্নস্তরের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ব্যাপারে সে হাল ছাড়ে না : শয়তান যখন ঈমানদারদের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিশৃঙ্খলা তথা শিরক ঢুকিয়ে দিতে না পারে, সে চেষ্টা করে তাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিভক্তি ছড়িয়ে দিতে, যা দ্বীনকে বিনাশ করে দেয়। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, তিনি এরশাদ করেন, ‘আরব ভূখ-ে মুসল্লিরা শয়তানের উপাসনা করবে, এ বিষয়ে শয়তান নিরাশ হয়ে পড়েছে। তবে তাদের একজনকে অন্যের বিরুদ্ধে উসকিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সে নিরাশ হয়নি।’ (বর্ণনায় মুসলিম)।
শয়তানের আরেক অদ্ভুত কূটকৌশল মন্দকে ভালো এবং ভালোকে মন্দ হিসেবে তুলে ধরা : সে মানুষের সামনে গোনাহের কাজকে সুন্দর এবং তার চোখে চাকচিক্যময় হিসেবে উপস্থাপন করে। যাতে সে ওই পাপটিকে মনের জন্য শান্তি এবং শরীরের জন্য মুক্তি হিসেবে দেখতে পায়। তেমনি সে বান্দার সামনে ভালো কাজ করা মন্দ ও ভারী হিসেবে উপস্থাপন করে। যাতে সে ওই পুণ্যটিকে মনের জন্য শাস্তি এবং শরীরের জন্য শৃঙ্খল হিসেবে দেখতে পায়। তাকে সম্মান ও প্রতিপত্তি দেখায় গোনাহ ও অবাধ্যতায়। অসম্মান ও লাঞ্ছনা দেখায় আনুগত্য ও নেকির কাজে। আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ ‘আল্লাহর কসম, আমি আপনার আগে বিভিন্ন সম্প্রদায়ে রাসুল প্রেরণ করেছি, অতঃপর শয়তান তাদের কর্মগুলো শোভনীয় করে দেখিয়েছে। আজ সেই তাদের অভিভাবক এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা নাহল : ৬৩)।
তার চক্রান্তের বিবরণে আল্লাহ আরও বলেনÑ ‘শয়তান বলল : আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট অংশগ্রহণ করব। তাদের পথভ্রষ্ট করব, তাদের আশ্বাস দেব; তাদের পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদের আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়। সে তাদের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের আশ্বাস দেয়। শয়তান তাদের যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা সব প্রতারণা বৈ নয়।’ (সুরা নিসা : ১১৮-১২০)।
আল্লাহর এ দুশমন অনেক বনি আদমের কাছে লজ্জাস্থান ও যা প্রদর্শন অনুচিত মনে করা হয় তা উন্মুক্ত করা এবং নির্লজ্জতাকে সুন্দর হিসেবে উপস্থাপন করে : যাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, কামনা-বাসনার আগুন উসকে ওঠে, ঈমানের আলো নির্মূল হয়, গোপনীয়তার সৌন্দর্য লঙ্ঘন হয় এবং আল্লাহর সৃষ্ট প্রকৃতি, নিয়ম ও আদেশ বিকৃত হয়ে যায়। নির্লজ্জতাই আদি পিতা-মাতার বিরুদ্ধে পরিচালিত শয়তানের আদি চক্রান্ত ছিল, যার ফলে তাদের জান্নাতি পোশাক ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। আল্লাহ বলেনÑ ‘হে বনি আদম আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজসজ্জার বস্ত্র এবং পরহেজগারির পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে। হে বনি আদম শয়তান যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করে; যেমন সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে, তাদের পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছিÑ যাতে তাদের লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদের দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখ না। আমি শয়তানদের তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না।’ (সুরা আরাফ : ২৬-২৭)।
অতএব, হে মোমিন ভাই, আপনি আল্লাহর মহান কিতাবে উল্লেখিত দয়ালু রবের উপদেশ মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তিনি বলছেনÑ ‘হে মানুষ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং, পার্থিব জীবন যেন তোমাদের প্রতারণা না করে এবং সেই প্রবঞ্চক যেন কিছুতেই তোমাদের আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে। শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব, তাকে শত্রু রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহ্বান করে যেন তারা জাহান্নামি হয়।’ (সুরা ফাতির : ৫-৬)।
শয়তানের প্ররোচনা ও ইবলিসি চক্রান্ত মুক্তির রয়েছে কিছু উপায় : যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা। যে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করে আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন। আল্লাহ বলেনÑ ‘আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর শরণাপন্ন হও তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।’ (সুরা আরাফ : ২০০)।
শয়তানি চক্রান্ত প্রতিরোধের আরেক উপায় আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা। কারণ তাওয়াক্কুল অবলম্বনকারীরা শয়তানি ষড়যন্ত্র থেকে আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকে। আল্লাহ বলেনÑ ‘তার আধিপত্য চলে না তাদের ওপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপন পালনকর্তার ওপর ভরসা রাখে। তার আধিপত্য তো তাদের ওপরই চলে, যারা তাকে বন্ধু মনে করে এবং যারা তাকে অংশীদার মানে।’ (সুরা নাহল : ৯৯-১০০)। সর্বোপরি শয়তান ঠেকানোর সাধারণ উপায় হলোÑ বিভিন্ন সময়ের নির্ধারিত এবং অন্য সময়গুলোতে সাধারণ জিকির-আজকার অব্যাহত রাখা। এর মাধ্যমেও শয়তানের চক্রান্ত থেকে আল্লাহ রক্ষা করেন।
২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২ হিজরি মক্কার মসজিদে হারামে প্রদত্ত জুমার খুতবার
সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর আলী হাসান তৈয়ব