ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পরিবারের প্রতি দ্বীনের দাওয়াত

মেহেদী হাসান সাকিফ
পরিবারের প্রতি দ্বীনের দাওয়াত

জন্মের মাধ্যমে পৃথিবীতে মানুষের জীবনের সূচনা হয়ে হিমশীতল মৃত্যুর মাধ্যমে জীবনাবসান ঘটে। এর মাঝের সময়টুকু পারিবারিক ও সামাজিকভাবে অতিবাহিত করে। আল্লাহ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই আমাদের আদি পিতা আদম (আ.) এবং হাওয়া (আ.) এর মাধ্যমে পারিবারিক জীবনকাঠামো সৃষ্টি করেছেন। এই থেকে আজ অবধি পরিবারিক কাঠামো চলে আসছে। পরিবার ছাড়া আমাদের জীবন নিঃসঙ্গ, অপূর্ণাঙ্গ, অপরিপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা মোমিনের পারিবারিক জীবনকে ইসলামি বিধান অনুযায়ী গড়ে তোলার জন্য আদেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ বলেন ‘হে মোমিনরা! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর (জাহান্নামের) অগ্নি থেকে। (সুরা আত-তাহরিম : ৬)।

সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজের নিষেধ প্রদান করা প্রতিটি মোমিনের জন্য ফরজ। পরিবারের কর্তারা পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে সর্বপ্রথমে নামাজের আদেশ করবেন এবং নিয়মিত নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত করে তুলবেন। অন্যথায় পরিবারের কর্তা নিজে নামাজি হওয়া সত্ত্বেও সদস্যদের নামাজের বিষয়ে অবহেলা করলে কেয়ামতের দিন জবাবদিহির সম্মুখীন হবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার অধীন লোকদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। শাসকও দায়িত্বশীল, তাকে তার অধীন লোকদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। নারী তার স্বামীর বাড়ি এবং তার সন্তান-সন্ততির তত্ত্বাবধায়ক, তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।’ (বোখারি : ৮৯৩, ৫১৮৮)।

ইসলামের নামাজ, রোজার মতো পর্দাও একটি স্বতন্ত্র ফরজ ইবাদত। আজকের দিনে অনেক দ্বীনদার পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও ইসলামের পর্দার বিধান নিয়ে অবহেলা পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ পরিবারের কর্তারাও পর্দার বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেন না। অনেকেই অনায়াসে স্ত্রী, কন্যার বেপর্দা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করেন। বেপর্দাভাবে পরিবারের নারী সদস্যদের নিয়ে বিয়েশাদিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। আমাদের সমাজের অনেক মা-বোন পর্দা করতে চাইলেও তাদের বিভিন্ন পরপুরুষের সামনে যেতে বাধ্য করেন। প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালা জান্নাত হারাম করেছেন নেশাদার দ্রব্যে আসক্ত ব্যক্তি, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ুস।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৫৮৩৯)।

দাইয়ুস সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয়, যে তার পরিবারের অশ্লীলতা ও কুকর্মকে মেনে নেয়।’ (মুসনাদ আহমদ, নাসায়ি)।

সন্তান-সন্ততি আল্লাহর অনেক বড় নেয়ামত। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সুশিক্ষিত সুনাগরিক হিসেবে আমাদের জাতিকে গড়ে তুলতে হলে শৈশব থেকেই সন্তানকে নামাজি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের সমাজের অনেক দ্বীনদার মা-বাবাকেও দেখা যায়, সন্তানের নামাজের বিষয়ে অবহেলা করেন। যার ফলশ্রুতিতেই অনেক নামাজি বাবা-মায়ের সন্তান ও বড় হয়ে বেনামাজি হিসেবে গড়ে ওঠে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সালাতের জন্য সাত বছর বয়সে পৌঁছলেই নির্দেশ দাও, আর তাদের ১০ বছর হলে এর জন্য দ- দাও। আর তাদের শোয়ার জায়গা পৃথক করে দাও।’ (আবু দাউদ : ৪৯৫)।

বড়ই পরিতাপের বিষয়, বর্তমানে আমাদের পারিবারিক জীবনে দ্বীনশিক্ষার বিষয়টি সঠিকভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না। যার ফলশ্রুতিতে দিনদিন আত্মহত্যা ও ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়ছে। পারিবারিক নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানের কামিয়াব হাসিলের জন্য আমাদের পারিবারিক জীবনকে ইসলামি জীবনব্যবস্থার আদলে গড়ে তুলতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত