ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে ভাবি ও ভাতিজা-ভাতিজিকে হত্যা করে নজরুল ইসলাম। ময়মনসিংহের ভালুকায় একই পরিবারের তিনজনকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার প্রধান আসামি নজরুল ইসলাম পুলিশের কাছে এমন তথ্য দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার বিকালে গাজীপুরের জয়দেবপুর রেল স্টেশন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বুধবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ তথ্য জানান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল-মামুন জানান, নজরুল পূর্বের একটি হত্যা মামলার আসামি। ট্রেন থেকে একজনকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছিল। সেই মামলায় তিনি দেড় বছর জেলে ছিল। তিনি জামিন নিয়ে ভালুকায় তার বড় ভাই রফিকুল ইসলামের ভাড়া বাসায় থাকত। এনিয়ে ভাবি ময়না আক্তার বিভিন্ন সময় আবার জেলে পাঠিয়ে দিবে বলে হুমকি দিত এবং মারধর করত। এই ক্ষোভে নজরুল গত রোববার রাতে দা দিয়ে ভাবি ময়নাকে জবাই করে হত্যা করে। এসময় ভাইয়ের দুই শিশু সন্তান রাইসা ও নীরব জেগে গেলে তাদের প্রথমে শ্বাসরোধ পরে গলাকেটে হত্যা করে। পরে ভোরে অটোরিকশা নিয়ে সেখান থেকে গাজীপুর চলে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত নজরুল ইসলাম জানায়, তার ভাবি ময়না ও তার ভাতিজি রাইসা আক্তার প্রায় সময় খাবার নিয়ে খোঁটা দিত। ভাবি ময়না আক্তার বিভিন্ন সময় আবার জেলে পাঠিয়ে দিবে বলে হুমকি দিত এবং মারধর করত। গত রোববার দুপুরে নজরুলের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। সেই কথা কাটাকাটি জের ধরে রাতের বেলা ঘুমের মাঝে প্রথমে তার ভাবি ময়নাকে পরে ভাতিজি রাইসাকে ও সর্বশেষ তার ভাতিজা নীরবকে হত্যা করে। ময়না তার দুই সন্তান নিয়ে বিভোর ঘুমের মাঝে হত্যাকাণ্ড শুরু করে। তিনজনকে খুন করার পর ঘরের মেঝেতে রক্ত ছড়িয়ে পড়লে বিছানার চাদর দিয়ে রক্ত মুছে ফেলেন। খাটের নিচে রক্তমাখা চাদরটি রেখে দেয় এবং পাশের রুমে সে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোর ৫টার সময় ঘুম থেকে ওঠে বারান্দার গেইটে তালা লাগিয়ে সে চলে যায় ভালুকা গ্যাস লাইন এলাকার কামরুল মেলিটারির রিকশার গ্যারেজে। সেখানে তার ব্যবহৃত মোবাইলটি বিক্রি করে ভাড়ায় চালিত অটোরিকশা নিয়ে গাজীপুরের দিকে চলে যায়। মাওনা এলাকায় একটি গ্যারেজ অটোরিকশাটি বিক্রির জন্য চেষ্টা করলে মাওনা এলাকার গ্যারেজ মালিক রিকশাটি কিনতে রাজি হননি।
পরে অটোরিকশাটি রেখে গ্যারেজ থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়ে গাজীপুর এলাকায় রাত্রি যাপন করেন। সে একাই এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন বলে জানান তিনি।
গত মঙ্গলবার দুপুরে নজরুল তার এক আত্নীয়কে ফোন করেন। সেই ফোন কলের সূত্র ধরেই ভালুকা মডেল থানার ওসি হুমায়ুন কবীর, উপ-পরিদর্শক আমিনুল হক ও নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে গত মঙ্গলবার বিকালে গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলস্টেশনের প্লাটফর্ম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার নজরুল আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দিলে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় নজরুল ইসলামকে প্রধান এবং অজ্ঞাত আরও ১-২ জনকে আসামি করে গত সোমবার রাতে ভালুকা মডেল থানায় বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়েরে করেন নিহত ময়না আক্তারের বড় ভাই জহিরুল ইসলাম। রফিকুল ইসলাম নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার সেনের বাজার গ্রামের সন্তু মিয়ার ছেলে। আর ময়না ভালুকা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের পায়লাবর চৌরাস্তা গ্রামের আফতাব উদ্দিনের মেয়ে। রফিকুল ইসলাম ভালুকার রাসেল স্পিনিং মিলে শ্রমিকের চাকরি করেন।