ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের আগে ইইউ

জোর করে ইউক্রেনের সীমান্ত পরিবর্তন অগ্রহণযোগ্য

জোর করে ইউক্রেনের সীমান্ত পরিবর্তন অগ্রহণযোগ্য

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ইউক্রেন ইস্যুতে আলাস্কায় শীর্ষ বৈঠকের তিন দিন আগে ইউরোপীয় নেতারা সতর্ক করে বলেছেন, জোরপূর্বক ইউক্রেনের সীমান্ত পরিবর্তন করা যাবে না। গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ?‘ইউক্রেনের জনগণকে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের স্বাধীনতা দিতে হবে।’ তারা আরও যোগ করেন, ‘ভৌগোলিক অখণ্ডতার নীতি অবশ্যই সম্মান করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত বলপূর্বক পরিবর্তন করা যাবে না।’

এই বিবৃতিতে ইইউর ২৭ দেশের মধ্যে ২৬ জন নেতা স্বাক্ষর করেছেন। অনুপস্থিত ছিলেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান, যিনি রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন এবং ইউক্রেনকে ইইউর সহায়তা আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন একাধিকবার। বিবৃতিটি ইউরোপের ভেতরে রাশিয়ার কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগের প্রতিফলন। বিশেষ করে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশগুলো বা যেসব দেশে সোভিয়েত দখলের স্মৃতি এখনও তাজা, তারা এটিকে নিকট ভবিষ্যতে সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে, বাল্টিক দেশগুলো বাধ্যতামূলক সেনাসেবা ফিরিয়ে এনেছে, আর পোল্যান্ড রাশিয়ার সঙ্গে সীমান্তে বিশাল প্রাচীর নির্মাণে বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে।

ইউরোপীয় দেশগুলো অতীতের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থেকে সীমান্ত পরিবর্তনের দীর্ঘ ইতিহাস বহন করে এবং তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে তা হতে দিতে পারে। রাশিয়া বলপূর্বক দখল করা ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্বকে আইনগত স্বীকৃতি দেওয়া ইইউর কাছে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। ট্রাম্প এরইমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে কোনো শান্তি চুক্তিতে ‘ভূখণ্ড বিনিময়’ থাকতে পারে এবং রাশিয়া পুরো দোনবাস অঞ্চল ও ক্রিমিয়াকে রাখবে। বিনিময়ে তারা খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চল ছেড়ে দেবে, যেগুলোর কিছু অংশ বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। গত সপ্তাহে, ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটে স্বীকার করেন যে বাস্তবে কিছু ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে, কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলেন, এর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া উচিত নয়।

এ ধরনের স্বীকৃতি পেতে হলে ইউক্রেনের সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে, যা জাতীয় গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে এবং সেটির জন্য সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়া প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জন্য বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং তার সরকারের পতনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এই কারণেই বর্তমানে ‘কেউ আন্তর্জাতিক আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নিয়ে কথা বলছে না,’ বলেন বিশ্লেষক অধ্যাপক মার্ক গালিওটি। তার ভাষায়, ‘আমরা স্বীকার করছি যে আপাতত রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০% ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক সীমান্ত যেমন আছে তেমনই থাকবে।’

বিবৃতিতে ইইউ নেতারা আরও বলেন, ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তায় বড় প্রভাব ফেলছে।’ তারা ‘ন্যায়সঙ্গত ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি’র প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তারা আরও বলেন, ইউক্রেনের কার্যকর আত্মরক্ষার ক্ষমতা থাকতে হবে এবং কিয়েভকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন, যা ‘স্ব-রক্ষার অন্তর্নিহিত অধিকার’ হিসেবে চর্চা করছে। বিবৃতির শেষ অংশে বলা হয়, ‘ইউক্রেন তার নিজস্ব ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার রাখে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদ অর্জনের পথে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’

তবে ঐক্যের এই ঘোষণা খানিকটা ক্ষুণ্ণ করেছে নিচে ছোট অক্ষরে লেখা একটি লাইন, যেখানে উল্লেখ ছিল- ‘হাঙ্গেরি এই বিবৃতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করছে না।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিক্টর অরবান জানান, তিনি বিবৃতিতে সই করেননি কারণ এটি এমন একটি বৈঠকের জন্য শর্ত আরোপের চেষ্টা করছে, যেখানে ইইউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি নেতাদের সতর্ক করে বলেন, যেন ‘গ্যালারি থেকে নির্দেশনা দেওয়া’ শুরু না হয়।

অরবান আরও আহ্বান জানান, ইইউ যেন রাশিয়ার সঙ্গে নিজস্ব শীর্ষ বৈঠক আয়োজন করে যদিও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে ইইউ নেতারা মস্কোর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা এড়িয়ে চলছেন। গত সোমবার ট্রাম্প জানান, তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে অরবানের পরামর্শ চেয়েছিলেন। ট্রাম্পের ভাষায়, সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কী বোকা প্রশ্ন’ ইঙ্গিত করলেন যে অরবান মনে করেন, রাশিয়া জয় না পাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত