ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হাটহাজারীতে ‘সুন্নি-কওমি’ সংঘর্ষে আহত ১৮০

* চমেকে ২০ জন চিকিৎসাধীন, এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা * গভীর রাতে সেনা হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে * হাটহাজারী মাদ্রাসায় সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জামায়াতের
হাটহাজারীতে ‘সুন্নি-কওমি’ সংঘর্ষে আহত ১৮০

ঈদে মিলাদুন্নবী (স.)-এ এক যুবক চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা লক্ষ্য করে আঙুল উঁচিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করার জের ধরে হাটহাজারীতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরে গভীর রাতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। জুলুস থেকে ফেরত ‘সুন্নি’-পন্থিদের বিভিন্ন বাসে কওমি মতাদর্শের লোকজন হামলা করার পর ‘সুন্নি’-পন্থিরাও সংঘবদ্ধ হয়ে পাল্টাহামলা চালায় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১৮০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় দেড়শতাধিক আহতকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং গুরুতর আহত ২০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আনা হয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

এদিকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় রোববারের (৭ সেপ্টেম্বর) পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং পরে সংঘর্ষের ওই ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আহত দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এদের একজন আবু তাহের (১৬) ও হাসান মারুফ (১৭)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড মোড়ে রাতে জুলুস থেকে ফেরার পথে ‘সুন্নি’-পন্থিদের বেশ কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে কওমিপন্থিরা। এর মধ্যে বাসে থাকা অনেকে ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হন। পরে ‘সুন্নি’-পন্থিরাও ধাওয়া দেন কওমিপন্থিদের। এ নিয়ে দুইপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। একপর্যায়ে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক অবরোধ করে রাখে দারুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। গত শনিবার রাত ১০টা থেকে গতকাল রোববার বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন এ নির্দেশনা জারি করেন। ১৪৪ ধারার আওতায় মীরের হাট থেকে এগারো মাইল সাবস্টেশন পর্যন্ত এবং উপজেলা গেট থেকে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশ ও সংলগ্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, মিছিল, গণজমায়েত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। একইসঙ্গে বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র বা দেশীয় অস্ত্র বহন এবং পাঁচজনের বেশি মানুষের একত্রিত হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আদেশ কার্যকর রাখতে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এর আগে হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে মধ্যমা আঙুল দেখিয়ে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার ঘটনায় আরিয়ান ইব্রাহীম (২০) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। ঘটনার পর ওই যুবক ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চাইলেও এ ঘটনায় হাটহাজারীতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জশনে জুলুস থেকে ফেরার পথে ফটিকছড়ি পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শফিকিয়া দরবার শরীফ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক ইব্রাহীম ওই এলাকার মৃত মো. মুছার ছেলে।

পুলিশ জানায়, দুপুরে চট্টগ্রামের জশনে জুলুসে যাওয়ার পথে হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে দাঁড়িয়ে অশালীন ভঙ্গি করে ছবি তোলে আরিয়ান। পরে সেটি ফেসবুকে পোস্ট করলে মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর কওমি অঙ্গনে ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। আরিয়ানের ফেসবুক আইডিতে নিজেকে ফটিকছড়ি পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি পরিচয় দেওয়া হলেও সংগঠনটির সভাপতি একরাম উল্লাহ চৌধুরী জানান, তিনি ছাত্রদলের কেউ নন। বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সংগঠনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং প্রশাসনকে আইনগত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পুলিশ তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী তারেক আজিজ।

হাটহাজারী মাদ্রাসায় সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জামায়াতের : চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মসজিদ ও মাদ্রাসাকে অবমাননা এবং সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে শতাধিক ছাত্রকে মারাত্মকভাবে আহত করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল রোববার সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতি প্রদান করেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ৬ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাত ৮টার দিকে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুসের র‌্যালি হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে আরিয়ান ইব্রাহিম নামে এক যুবক মসজিদ ও মাদ্রাসার দিকে আঙুল তুলে ‘অশোভন অঙ্গভঙ্গি’ করে এবং তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এই আপত্তিকর ঘটনায় মাদ্রাসার ছাত্ররা সংক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানালে সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর নৃশংস হামলা চালায়। এই বর্বরোচিত হামলায় হাটহাজারী মাদ্রাসার শতাধিক ছাত্র গুরুতরভাবে আহত হয়। আমি এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আহতদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি এবং তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। বিবৃতিতে তিনি বলেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাত ৮টার দিকে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুসের র‌্যালি হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আরিয়ান ইব্রাহিম নামে এক যুবক মসজিদ ও মাদ্রাসার দিকে অশোভন অঙ্গভঙ্গি করে এবং তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসার ছাত্ররা প্রতিবাদ জানালে সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর নৃশংস হামলা চালায়।

এই বর্বরোচিত হামলায় শতাধিক ছাত্র গুরুতর আহত হয়। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি এবং তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। তিনি আরও বলেন, হাটহাজারী মাদ্রাসা দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তম দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। সেখানে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ এবং স্পষ্ট উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড। মসজিদ ও মাদ্রাসার মতো ধর্মীয় পবিত্র স্থানে অবমাননা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলো মুসলমানদের ঈমান ও আক্বিদার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই প্রত্যেকের দায়িত্ব ধর্মীয় পবিত্র স্থানসমূহকে যথাযথ সম্মান জানানো।

তিনি বলেন, এ ধরনের হামলা দেশ ও সমাজে বিভেদ ও সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার অশুভ প্রচেষ্টা। অথচ ইসলামের শিক্ষা হলো শান্তি, সংযম ও সহনশীলতা। আমরা বিশ্বাস করি, উত্তেজনা নয় বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। আমি সন্ত্রাসী হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণ বজায় রাখা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে, এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত