
একটি গণমাধ্যমে সাতক্ষীরার উন্নয়ন বঞ্চনা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে সাতক্ষীরার নাগরিক সমাজ। গতকাল শনিবার রাজধানীর আদাবরে সাতক্ষীরা উন্নয়ন সমন্বয় ফোরামের আয়োজনে সুশীলনের সভাকক্ষে সাতক্ষীরার উন্নয়নের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নে ও জেলার উন্নয়নের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় ফোরামের সভাপতি ইকবাল মাসুদ, উপদেষ্টা রিয়াজুল ইসলাম, কালিগঞ্জ উপজেলা সমিতির সদস্য সচিব মোস্তফা বকুলুজ্জামান, কলারোয়া উপজেলা সমিতির সভাপতি আজগর আলী কাঞ্চন, আশাশুনি উপজেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম (শফিক), উন্নয়ন সংগঠন আইডিয়ালের নির্বাহী পরিচালক ডা: নজরুল ইসলাম ও কলারোয়া উপজেলা সমিতি ঢাকার কোষাধ্যক্ষ মোঃ আবু তারেক প্রমুখ।
এসময় তারা বলেন, সাতক্ষীরা জেলা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অন্যতম অবহেলিত একটি জেলা। রাজনৈতিক কারণে এ জেলার অবকাঠামোগত উন্নয়ন বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়া সত্ত্বেও উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার অভাবে সাতক্ষীরা থেকে সড়ক পথে সুন্দরবন যাওয়ার সুযোগ থাকলেও ইকোটুরিজম গড়ে ওঠেনি, ফলে বাংলাদেশের অংশে সুন্দরবনের পর্যটন বিকাশ পায়নি। এছাড়া অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সাতক্ষীরার মৎস্য চোরাচালানের মাধ্যমে ভারতে চলে যাচ্ছে, যার ফলে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বর্তমান সরকার ১৯টি জেলায় বিশেষ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, কিন্তু সাতক্ষীরা সেখানে অন্তর্ভুক্ত নয়। সম্প্রতি আরও ৪টি জেলায় নতুন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সাতক্ষীরা জেলার নাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উল্লেখিত হয়েছে। অথচ বাস্তবে সাতক্ষীরার উন্নয়ন নিয়ে সঠিক তথ্য উপস্থাপিত হয়নি।
সাতক্ষীরা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় ফোরামের প্রতিবাদ সভা থেকে বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় মোট ৫ হাজার ৭৮৮টি সড়ক রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ২২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা রাস্তা মাত্র ২ হাজার ১০৮ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার (২০.৬৩%) এবং কাঁচা রাস্তার দৈর্ঘ্য ৮ হাজার ১১১ দশমিক ২১ কিলোমিটার (৭৯.৩৭%)। পত্রিকাটি ভুলভাবে সড়কের দৈর্ঘ্য ৯ হাজার ২৯৪ কিলোমিটার এবং পাকা রাস্তার দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৩৩৯ কিলোমিটার উল্লেখ করেছে, যা সম্পূর্ণ অসত্য। বর্তমানে সংস্কারকাজ চলছে মাত্র ১৯ দশমিক ২৭ কিলোমিটার সড়কে, অথচ সংবাদে বলা হয়েছে ১ হাজার ৫০ কিলোমিটার।
এছাড়া উক্ত প্রকল্পে বাস্তবে মাত্র ১ হাজার ৩১০ দশমিক ২২ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হবে, তাতেও কাঁচা রাস্তার হার থেকে যাবে ৬৭%। অথচ উক্ত সংবাদ মাধ্যমে এ তথ্য উপস্থাপন হয়নি। সাতক্ষীরায় রাস্তা মেরামতের বিষয়ই প্রশ্নে আসে না, কারণ এখনও প্রায় ৮০% রাস্তা কাঁচা।
বাজেট বৈষম্যেরও একটি চিত্র স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে: ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০৬.৪৬ কোটির বিপরীতে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৪১.৪৩ কোটি (৩৯.০৫%)। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১১৮.৭৬ কোটির বিপরীতে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৪১.১৮ কোটি (৩৪.৬৭%)। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১২৮.৭৬ কোটির বিপরীতে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৪৪.১২ কোটি (৩৪.২৭%)। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১৪৩.৯৭ কোটির বিপরীতে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৪০.৫১ কোটি (২৮.১৪%)। দীর্ঘদিন ধরে সাতক্ষীরার উন্নয়নকে ইচ্ছাকৃতভাবে ঠেকানোর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। অথচ এ জেলা থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে তার তুলনায় ব্যয়ের পরিমাণ অত্যন্ত কম। শিক্ষা ক্ষেত্রে সাতক্ষীরা অনেকটা এগিয়ে থাকলেও অবকাঠামোগত উন্নয়নে এ জেলা মারাত্মকভাবে পিছিয়ে। একটি গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদ প্রকাশ করে সাতক্ষীরার উন্নয়ন বঞ্চিত মানুষকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। আমরা এই সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে উন্নয়ন বঞ্চিত সাতক্ষীরার নাগরিক সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছে।