
নওগাঁর মান্দায় ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) পরীক্ষায় সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয় মিলেছে। তথ্য উদ্ঘাটনের পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গতকাল রোববার সকালে নওগাঁ আদালত চত্বর থেকে অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম ওরফে মোকছেদ (৩০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার কামরুল ইসলাম ওরফে মোকছেদ মান্দা উপজেলার শোভাপুর গ্রামের রমজান আলীর ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নওগাঁ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) তোজাম্মেল হক।
সিআইডি সূত্রে জানা যায়- ভুক্তভোগী কিশোরী একটি মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করত। কামরুল ইসলাম ওরফে মোকছেদ এর ঘরে স্ত্রী-সন্তান থাকার পরও ওই কিশোরীকে মাদ্রাসায় আসা-যাওয়ার পথে প্রেমের প্রস্তাবসহ বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দিত। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কিশোরী তার বাবা-মাকে অবগত করে। কিশোরীর বাবা-মা মোকছেদকে সর্তক করে দেয়। কিন্তু উল্টো মেয়ের ক্ষতি করবে বলে হুমকি দেয় মোকছেদ। এক পর্যায়ে কিশোরীর সঙ্গে মোকছেদ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিকবার ধর্ষণ করে। সর্বশেষ গত ২০২৩ সালের ৩০ ?জুলাই দুপুরে মোকছেদ এর বাড়িতে কেউ না থাকায় কিশোরীকে ডেকে নিয়ে ইচ্ছের বিরুদ্ধে আবারও জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। কিশোরীর শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন দেখা দিলে পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি অবগত করা হয়। পরে উপজেলার স্থানীয় একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হলে ২৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা বলে ফলাফল আসে।
ঘটনার পর কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে পারিবারিকভাবে মোকছেদকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু মোকছেদ বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখায় এবং এ ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নাই বলে সাফ জানিয়ে দেয়। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি মান্দা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। পরবর্তীতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতের বিচারক স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-তে তদন্তের নির্দেশনা দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি উপ-পরিদর্শক তোজাম্মেল হক বলেন- ভুক্তভোগী কিশোরীর সন্তানের সঙ্গে এজাহার নামীয় আসামি কামরুল ইসলাম ওরফে মোকছেদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় থানার তদন্তকারী অফিসার তাকে অব্যাহতি প্রদানপূর্বক মামলাটি পুলিশ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। কিন্তু বাদী নারাজি দাখিল করায় আদালত নারাজির আবেদনের ভিত্তিতে পুনরায় তদন্ত করার জন্য সিআইডিকে আদেশ প্রদান করেন। এরপর আমি মামলার তদন্তে নিয়োজিত হয়ে ভিকটিমকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভিকটিমের দেওয়া তথ্যেরভিত্তিতে গত ৬ মাস আগে কামরুল ইসলাম ওরফে মোকছেদসহ ৩ জনের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
গত বুধবার ডিএনএ-র ফলাফল আসে। এরপর গতকাল রোববার ভুক্তভোগীদের অফিসে ডেকে কিশোরীর সন্তানের সঙ্গে মোকছেদের ডিএনএ-র ফলাফল মিল রয়েছে বলে জানানো হয়। তিনি বলেন- আসামি কামরুল ইসলাম ওরফে মোকছেদকেও অফিসে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তিনি সকালে অফিসে এসে বুঝতে পারেন- শিশুর সঙ্গে তার ডিএনএ-র মিল হয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পারার পর তিনি কৌশলে অফিস থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পরে অফিসের সামনে আদালত চত্বর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ক্যাপশন : গ্রেপ্তার কামরুল ইসলাম ওরফে মোকছেদ। গতকালের ছবি