
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে তাহমিদ খান (২৫) নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এক সদস্য নিহত হয়েছেন। গত বুধবার রাত ১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় বারইয়ারহাট পৌর বাজারে চেয়ারে পা তুলে বসাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি হয়। পরে তা সংঘর্ষে রুপ নিলে ঐসময় তাহমিদ নামে যুবকটি ছুরিকাঘাতের শিকার হয়। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে তার মৃত্যু হয়। নিহত তাহমিদ বারইয়ারহাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আলমগীর হোসেনের ছেলে। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সদস্য ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন মীরসরাই উপজেলা শাখার যুগ্ম সদস্যসচিবের দায়িত্বে ছিলেন। এ ছাড়া দি রেড জুলাই মঞ্চের আহ্বায়ক ও ধর্ষণ প্রতিরোধ মঞ্চের উদ্যোক্তা ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার (৯ ডিসেম্বর) বিকালে বারইয়ারহাট পৌর বাজারের ট্রাফিক মোড়ের একটি দোকানে পায়ের ওপর পা তুলে বসেছিলেন হিঙ্গুলী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জোবায়ের হোসেন। এ সময় বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম লিটনকে দেখে পা নামিয়ে না বসায় জুবায়েরকে লাথি দেন লিটন। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে তারা সেখান থেকে চলে যান। সন্ধ্যার দিকে লিটন ও জোবায়ের নিজ নিজ এলাকা জামালপুর ও হিঙ্গুলীর লোকজনকে এনে পৌর বাজারে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন। তখন উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় তাহমিদ খানকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পাশাপাশি রায়হান, মোহন, আবির ও মোজম্মেলসহ অন্তত পাঁচ জন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এদিকে, এ অবস্থায় তাহমিদকে জোরারগঞ্জে এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে রাত ১টার দিকে মৃত্যু হয়। সংঘর্ষে জড়ানো দুই পক্ষের একটি বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম লিটনের এবং আরেকপক্ষ বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি দিদারুল আলম মিয়াজীর অনুসারী। আবার দুই পক্ষের নেতাকর্মীরাই চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নুরুল আমিনের (চেয়ারম্যান) অনুসারী বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।
বারইয়ারহাট পৌরসভা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোহন দে জানান, বুধবার বিকালে লিটনের সঙ্গে জোবায়েরের ঝামেলার বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমরা কয়েকজন মিলে ট্রাফিক মোড়ে যাই। সেখানে যাওয়ার পর কথা বলার একপর্যায়ে লিটনের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করেন। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। তাহমিদ কখন সেখানে গিয়েছিল সেটি আমি বলতে পারছি না। সে আমাদের দলের কর্মী ছিল না। তবে আমাদের এলাকার হওয়ায় তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে আহত করেন লিটনের লোকজন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বারইয়ারহাট মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মৃত্যু হয় তার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সংগঠক মোহাম্মদ সাইফুল হাওলাদার জানান, তাহমিদ খান জুলাই যোদ্ধা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামনের সারির সদস্য। ফেনী জেলা শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তার পেটে পুলিশের গুলি লেগেছিল। তিনি দি রেড জুলাই মীরসরাই উপজেলার আহ্বায়ক ছিলেন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সদস্য ছিলেন। তাকে এভাবে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি আমরা।
তাহমিদের পরিচয় নিয়ে ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। কেউ বলছেন, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সদস্য ও নিরাপদ সড়ক চাই মীরসরাই উপজেলা শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব ছিলেন। আবার কেউ বলছেন, পরবর্তীতে তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হন। বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি দিদারুল আলম মিয়াজী বলেন, ?এটি দলীয় কোনও ব্যাপার নয়, ব্যক্তিগত রেষারেষির জেরে তাহমিদ খুন হয়েছেন। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। দিদারুল আলম নিয়াজী এলাকায় মীরসরাই সংসদীয় আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নুরুল আমিনের (চেয়ারম্যান) অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ বিষয়ে নুরুল আমিন বলেন, তাহমিদ হত্যাকাণ্ড বিএনপির অন্তঃকোন্দল বা দলীয় বিষয় নয়।