ঢাকা মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

রঙিন ফুলকপির বাণিজ্যিক আবাদ

রঙিন ফুলকপির বাণিজ্যিক আবাদ

দাগনভূঞায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে বেগুনি বা রানী গোলাপি ও হলুদ রঙের ফুলকপির আবাদ। এই ফুলকপি দেখতে যেমন সুন্দর, খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে। উপজেলার কৃষকরা সাধারণত সাদা ফুলকপির আবাদ করে থাকেন। পৌর এলাকার জগতপুর গ্রামের অর্গানিক ভেজিটেবল গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী তরুণ উদ্যোক্তা মো. হাসান আহমেদ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১২০ শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে রঙিন ফুলকপি, ব্রকলি ও বিভিন্ন ধরনের চাইনিজ ভেজিটেবল চাষ করছেন। উপজেলায় রঙিন ফুলকপি চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই তরুণ উদ্যোক্তা। জানা গেছে, রঙিন ফুলকপি ভিটামিন-সি, ই, কে, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যারোটেনেয়ড সমৃদ্ধ সবজি। এই সবজি ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে থাকে। অর্গানিক ভেজিটেবল গার্ডেনে গিয়ে দেখা গেছে, বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাসান। রঙিন ফুলকপি, ব্রকলি, বিটরুট, চাইনিজ ক্যাবেজ, চেরি টমেটো, শালগম, ধান, সরিষাসহ ফুলকপি ও বাঁধাকপির ব্যাপক আবাদ করছেন। আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ হাসানের অর্গানিক ভেজিটেবল গার্ডেনে রঙিন ফুলকপি দেখতে এসেছেন। কেউ কেউ রঙিন ফুলকপি হাতে নিয়ে ছবি তুলছেন। অনেকে বাগান থেকেই কপি কিনে নিচ্ছেন। রঙিন ফুলকপি দেখতে আসা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমারও ইচ্ছা আছে রঙিন ফুলকপি চাষ করার। এজন্য সামনাসামনি দেখতে আসছি। ফুলকপিগুলো দেখতে খুব ভালো লাগছে। এর চাহিদাও দ্বিগুণ। খেতেও অনেক সুস্বাদু। স্থানীয় এক কৃষক জানান, এই প্রথম হাসান আহমেদের জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ দেখেছি। দেখতে খুব সুন্দর। বাজারে দামও বেশ ভালো। আগামীতে আমি এই রঙিন ফুলকপি চাষ করবো। আশাকরি কৃষি অফিস আমাকে সহযোগিতা করবে। উদ্যোক্তা হাসান বলেন, আমি ১২০ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপি, ব্রকলি, বিটরুট, চাইনিজ ক্যাবেজ, চেরি টমেটো, শালগম, ধান, সরিষাসহ ফুলকপি ও বাঁধাকপির আবাদ করছি। দুই বছর আগে রঙিন ফুলকপির পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করি। এই বছর ব্যাপকভাবে করার চেষ্টা করেছি এবং সফলও হয়েছি।

ফলনও হয়েছে ভালো। মূল্যও ভালো পাচ্ছি। তবে রঙিন হওয়ায় বাজারে এই ফুলকপির দাম দ্বিগুণ। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার কেজি রঙিন ফুলকপি বিক্রি করেছি। প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার কপি বিক্রি করা হয়েছে। প্রথম প্রথম একটু বেশি দামে বিক্রি করলেও এখন কিছুটা কম ধরে বিক্রি করছি। অনলাইনে অর্ডার পাচ্ছি।

অর্গানিক ভেজিটেবল নামে ফেসবুক পেইজ আছে। সেখানে রঙিন ফুলকপির ছবি আপলোড করা হয়। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে এই কপি চাষে কোনো প্রকার বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়নি, শুধু জৈব স্যার ব্যবহার করছেন বলে জানান তিনি। একই পরিমাণ খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এই কপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন স্থানীয় অন্যান্য কৃষকরাও। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, উদ্যোক্তা হাসানকে সরেজমিন গিয়ে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই সব কৃষকের মাঝে তথ্যপ্রযুক্তির নতুনত্ব পৌঁছে দিতে।

সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। আশা করছি তার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরাও এই রঙিন ফুলকপি চাষ করতে আগ্রহী হবে। কৃষি অফিস বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করে যাবো। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. কামরুজ্জামান বলেন, শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তা হাসান আহমেদ আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে থাকেন।

বাণিজ্যিকভাবে তিনি রঙিন ফুলকপি, ব্রকলি বিভিন্ন ধরনের চাইনিজ ভেজিটেবল চাষ করে শুধু দাগনভূঞা উপজেলায় নয় ফেনী জেলাতে সাড়া ফেলেছেন। আগামীতে তিনিসহ অন্যান্য উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত চাইনিজ ভেজিটেবল দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করার সুযোগ রয়েছে। এই ফসলগুলো দেখতে রঙিন হওয়ায় ভোক্তারা বেশি ক্রয় করে থাকেন। ভবিষ্যতেও যে সব তরুণ কৃষকরা ফসল আবাদ করতে আগ্রহী তাদেরও কীভাবে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা যায় তার প্রযুক্তি দিয়ে আমরা সহায়তা করে যাব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত