গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য ঘাস। পুষ্টিকর ঘাসে দেহ গঠনকারী আমিষ উপাদানসহ প্রায় সর্বপ্রকার উপাদন মজুত থাকে। উন্নতজাতের অধিক ফলনশীল ঘাসের মধ্যে নেপিয়ার উল্লেখযোগ্য। খাদ্যমান বেশি থাকায় গবাদিপশুর জন্য এ ঘাস বেশ উপাদেয় ও পুষ্টিকর। ফলে গো-খাদ্য হিসেবে চাহিদা বেড়েছে নেপিয়ার ঘাসের। কিন্তু দিন দিন চাষের জমি কমে যাওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে ঘাসের উৎপাদন অনেক কমে গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে উন্নত জাতের ঘাস বাণিজ্যিকভাবে চাষের প্রতি ঝুঁকছেন কৃষকও খামারিরা। গবাদিপশুর খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে কৃষকরা বাজারে বিক্রয় করে আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন তারা। খড়ের বিকল্প গরু-ছাগলসহ অন্যান্য গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে দেওয়া হচ্ছে নেপিয়ার ঘাস। চাষিরা নির্ধারিত সময়ে জমি থেকে ঘাস কেটে স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যান। অনেকে জমির আইল, পুকুর-জলাশয় বা বাড়ির পাশের পতিত জমিতে ঘাস চাষ করছেন। জানা যায়, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম ভারত থেকে নেপিয়ার ঘাস নিয়ে আসা হয়। পরে সেটি স্থানীয়ভাবে চাষাবাদের উপযোগী করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে এ ঘাসের চাষ ছড়াতে থাকে সারাদেশে। নেপিয়ার ঘাসের চারা একবার জমিতে লাগালে তিন বছরের মধ্যে নতুন করে লাগানোর প্রয়োজন হয় না। নেপিয়ার ঘাসে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত পুষ্টিগুণ। গবাদিপশুর প্রিয় খাদ্য হিসেবে এ ঘাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বগুড়া সদর উপজেলার লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের কৃষি ও পতিত জমিসহ বাড়ির আশপাশে নেপিয়ার ঘাসের চাষ লক্ষ করা যায়। কেউ নির্ধারিত সময়ে জমি থেকে ঘাস তুলে কেউবা ভারে করে, কেউ কাঁধে, অনেকেই ভ্যানগাড়ি ও ভটভটিতে আঁটি বেঁধে বিক্রির জন্য স্থানীয় হাট-বাজারে নিয়ে যান। উত্তর মধুমাঝিড়া গ্রামের কৃষক আলহাজ্ব ইউনুছ আলী জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় নেপিয়ার ঘাসের উৎপাদন খরচ অনেক কম এবং জমিতে একবার ঘাস লাগালে ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর পর ঘাস কাটা যায়। বৎসরে ৮ বার ঘাস কাটা পরে মাঝে মাঝে শুধু একটু নিরানী ও সার দিতে হয়। এতে করে এক বিঘা জমি থেকে বৎসরে প্রায় ১ লাখ টাকা ঘাস বিক্রি করা যায়। অনেক সময় খামারিরা জমি থেকে ঘাস নিয়ে যায়। এছাড়াও শিবগঞ্জ, মহাস্থান, পীরগাছা সহ বিভিন্ন হাটে এই ঘাস পাইকারি বিক্রি করা যায়।
কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, আমার ৩টি গরুর জন্য প্রতি দিন পীরগাছা হাট থেকে ঘাস ক্রয় করতে অনেক টাকা লাগত। এখন ১০ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করায় নিজের গরুর চাহিদা মিটিয়ে কিছু ঘাস বিক্রি করতে পারি। একই গ্রামের আব্দুর রশিদ জানান, আমার নিজের কোনো জমি নাই। অন্যের জমি সন পত্তন নিয়ে নেপিয়ার ঘাস চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছি?। লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, আমি ১বিঘা জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস লাগিয়েছি। তিনি মূলত পেশায় একজন কৃষক ও ভটভটিগাড়ি চালক। নেপিয়ার ঘাস চাষ করে নিজস্ব গবাদিপশুর খাদ্য চাহিদা পূরণের পর বাজারে বিক্রয় করছি। এক মুঠো (আঁটি) ঘাস ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করি। এ থেকে আমার সংসারে বাড়তি সচ্ছলতাও এসেছে। কৃষকরা অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। স্থানীয় খামারিরা মনে করছেন, নেপিয়ার ঘাস চাষের ফলে গবাদিপশুর খাদ্য সংকট কমবে এবং এলাকার দুধ উৎপাদনও বাড়বে। এছাড়া খরিপ মৌসুমে যখন অন্য ফসল কম হয়, তখন নেপিয়ার ঘাস কৃষকদের বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দেয়।
উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, খামারিদের নিয়মিত ঘাসের কাটিং বিতরণ করা হচ্ছে। কৃষক ও খামারিদের মাঝে ঘাস উৎপাদনে উঠান বৈঠক করে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গবাদিপশুর খাদ্যের ঘাটতি পূরণ এবং দুধের উৎপাদন বাড়াতে দিন দিন নেপিয়ার ঘাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘাস চাষিদের উদ্বুদ্ধের পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে খামারিদের মাঝে পাকচং জাতের নেপিয়ার ঘাস চাষে উৎসাহিত করছি। পাশাপাশি আগ্রহী খামারি ও কৃষকদের ঘাস চাষে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।
নেপিয়ার ঘাস পরিত্যক্ত জায়গায় ভালো জন্মে। চাষ পদ্ধতি ও গুণাগুণ সম্পর্কে কৃষক অবগত হলে ঘাসের চাষে তারা আরও উৎসাহিত হবেন বলে তিনি মনে করেন। শাজাহানপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ খান বলেন, গবাদিপশুর খাদ্য চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত ঘাস বিক্রি করে আয় করা যায় কি ভাবে তার ফলশ্রুতিতে নেপিয়ার জার্মান, পাকচং-১, ভূট্টা, খেসারী, পাড়া, কাউপি, মাসকালাই, আলফা আলফা, জাম্বুসহ আরো অন্যান্য উন্নত জাতের ঘাস চাষে আগ্রহী ও ঘাস চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত খামারিদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে।