রংপুরে কোনো ভাবেই চাষিদের তামাক চাষে বিমুখ করা যাচ্ছে না। বরং নতুন নতুন এলাকায় তামাক চাষ বাড়ছেই। তবে, কৌশলে জেলা কৃষি অফিস প্রতিবছর ‘সংখ্যায় কম’ দেখিয়ে ঢাকাকে বুঝ দিচ্ছে। যা বাস্তবতার সঙ্গে কোন মিলই নেই। রংপুর জেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ রবি মৌসুমে জেলায় তামাক চাষ হয়েছে ১ হাজার ৭৫ হেক্টর। অথচ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, জেলায় তামাক চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৬৩৬ হেক্টর জমিতে। এক বছরেই তামাক চাষ বেড়েছে দুইগুন। জেলা কৃষি অফিস থেকে ঢাকায় পাঠানো তথ্য বলছে, জেলায় ২০২৩-২৪ রবি মৌসুমে তামাক চাষ হয়েছে ১ হাজার ৭৫ হেক্টর, ২০২৩ সালে ১ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে, ২০২২ সালে ১ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমি, ২০২১ সালে ১ হাজার ৯২৫ এবং ২০২০ সালে ২ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছিল। প্রতি রবি মৌসুমে সংখ্যায় কম দেখিয়ে ঢাকায় তথ্য পাঠানো হচ্ছে। রংপুর জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ রবি মৌসুমে রংপুর মহানগর এলাকায় তামাক চাষ হয়েছে ১০ হেক্টর। অথচ মেট্রোপলিন কৃষি অফিস বলছে, শুধু সিটি কর্পোরেশন এলাকায় তামাক চাষ হয়েছে ২০ হেক্টর। যদিও মাঠ পর্যায়ে এই তথ্যের সঙ্গে কোন মিলই নেই। দিগন্ত জুড়ে রয়েছে তামাকের আবাদ। সদর উপজেলায় ৩৪৫ হেক্টরের কথা বলা হলেও বাস্তবে তিনগুণের বেশি আমাক চাষ হয়েছে সদর উপজেলাতেই। সদর কৃষি অফিস বলছে, ৯৫০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। বদরগঞ্জ উপজেলায় ১৫ হেক্টরের দাবী করা হলে এবার চাষ হয়েছে ৫১ হেক্টর জমিতে। এই উপজেলায় ২০২১-২২ রবি মৌসুমে ২০ হেক্টর, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ২৫ হেক্টর। ভয়াবহ অবস্থা তারাগঞ্জ উপজেলাতেও। জেলা অফিসের তথ্য অনুযায়ী এই উপজেলা ৯৬০ হেক্টর তামাক চাষ হয়েছে। আর উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, তামাক চাষ হয়েছে ১ হাজার ৯৯৫ হেক্টর জমিতে। ২০২৩ সালে ৮০০ এবং ২০২২ সালে ৭৬৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। গংগাচড়া উপজেলায় ৫১০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হলেও এবছর এখন পর্যন্ত ৬০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলায় মির্জাপুর ইউনিয়নে দেউলপাড়া ও হরিপুর গ্রামের বালারপাতারে অসংখ্য জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তামাক চাষি খয়রুজ্জামান, কুদ্দুস মিয়া, বাচ্ছামিয়া বলেন কম্পোনির লোকেরা গতকয়েক বছর থেকে প্রতিকেজি তামাক ১৭৫ থেকে শুরু করেছে। তারা সার কিটনাষক এবং অগ্রীম টাকাও দেয় তামাক চাষিদের।
মিঠাপুকুর উপজেলায় তামাক চাষ হয়েছে ২০ হেক্টর জমিতে। সরেজমিনে, জেলা কৃষি বিভাগের দেয়ার তথ্যের সঙ্গে কোন মিলই নেই। জেলার বিভিন্ন উপজেলা বিস্তর্ণ ফসলি জমিতে তামাক চাষ করেছেন কৃষক। রবি মৌসুমের ফসল হিসেবে এই এলাকায় আলু চাষ হলেও তামাক চাষে এর কোন প্রভাব পড়েনি। যে দিকে চোখ যায়, তামাক আর তামাক। চাষিদের ব্যস্ত সময় কাটছে তামাকের খেতে সেচ প্রদান, গাতা সংগ্রহ ও শুকানোর কাজে। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড গঙ্গাচড়ার তিস্তার চর ছাড়াও রংপুর সদরের পাগলাপীর, মমিনপুর, তারাগঞ্জের শলেয়াসাসহ বিভিন্ন এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের খেত যেন সবুজে ছেয়ে গেছে। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তামাক চাষে উৎসাহ দিতে কৃষকদের সার, বীজ, কীটনাশক এমনকি সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা দিচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। এ বছর তামাকের দাম বাড়বে এমন গুজব কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে অনেকই তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। রংপুর সদরের মমিনপুর এলাকার কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, ১ বিঘা জমিতে ৭-৮ মণ তামাক উৎপন্ন হয় আর এতে খরচ হয় ১৫-১৬ হাজার টাকা। গত বছর প্রতি মণ তামাক ৫ হাজার-৫ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলাম। এ বছর তামাকের দাম আরও বাড়বে এমন আশ্বাসও পাওয়া গেছে। এন্টি ট্যোবাকো মিডিয়া এলাইন্স (আত্মা) এর কেন্দ্রেীয় কমিটির অন্যতম সদস্য সাংবাদিক মাহবুবুল ইসলাম জানান, তামাক চাষ থেকে বের হয়ে আসলে সেই কৃষককে সরকারিভাবে প্রনোদনা দেয়ার কথা থাকলেও তেমন কোন কর্মসূচির কথা জানা যায়নি। এ কারণে তামাক চাষ করা কৃষকদের অন্যচাষে ফেরানো যাচ্ছে না। বরং প্রতিবছর নতুন নতুন চাষি তামাক চাষে যুক্ত হচ্ছেন। যা প্রতিনিয়তই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
রংপুর কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দীন জানান, তামাক চায় যেন কৃষকরা কমিয়ে আনেন সেজন্য আমরা কাজ করছি। গত পাঁচ বছরে ধীরে ধীরে তামাক চাষ কমছে। আমরা তামাক চাষে শুন্যের কোটায় নিয়ে আসতে চাই। আপনার দেয়া তথ্য ঠিক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী আমাদের তথ্য ঠিক আছে। উপজেলার তথ্যের সঙ্গে আপনার তথ্যের মিল নেই বিষয়টি নজরে আনলে তিনি বলেন, তাহলে নতুন করে আবার ফাইনাল করা হবে।
