কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের ঐচারচর গ্রামের শিক্ষিত যুবক সৈয়দ আব্দুল্লাহ ও কৃষক মো. পলাশ কৃষিতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় বছরের শুরুতে আব্দুল্লাহ ২০ শতক ও পলাশ দেড় বিঘা জমিতে লতিকচু প্রদর্শনী শুরু করেন। নিয়মিত আন্তপরিচর্যা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে বর্তমানে তারা ‘কচুর লতি’ বিক্রি করে এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ টাকার বেশি উপার্জন করেছেন। স্থানীয় কৃষি অফিসারের নিয়মিত পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় তার এই উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সৈয়দ আব্দুল্লাহ ও পলাশের জমি সবুজে ভরে গেছে, লতিকচু গাছগুলোতে এসেছে প্রচুর লতি। জমির স্বাস্থ্য ও ফলন তার কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক পরিকল্পনার বাস্তব প্রতিফলন। তার সফলতাই প্রমাণ করে, সঠিক পরামর্শ ও আন্তরিক চেষ্টা থাকলে কৃষিতে যে কেউ সফল হতে পারে। তাদের এই উদ্যোগ আশপাশের কৃষকদেরও অনুপ্রাণিত করছে। অনেকেই এখন তার সফলতা দেখে লতিকচু চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। কৃষক সৈয়দ আব্দুল্লাহ বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় মাত্র ৫ হাজার টাকা খরচ করে ২০ শতক জায়গায় লতিকচু চাষ করেছি। প্রতিদিন বাজারে বিক্রি করতে পারছি। অল্প কয়েক দিনে ১০ টাকা বিক্রি করেছি, আশা করি এই সিজনে পুরোটা ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারব। বিশেষ করে আগামী বছর আরও বেশি জায়গায় করব।
অন্যদিকে কৃষক মো. পলাশ জানান, আমার জীবনে এই প্রথম লতিকচুর আবাদ করেছি। তাই একটু শঙ্কায় ছিলাম। বাজারে দাম কেমন পাব, ফলন কেমন হবে। তবে এখন আমি খুবই খুশি। প্রতিদিন কচুর লতি তুলছি, স্থানীয় বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পারছি। দেড় বিঘা জমিতে লতিকচু চাষে আমার খরচ হয়েছিল প্রায় ৩৩ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ বিক্রি করেছি। আশা করছি সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সিজন শেষে ৩ লাখ টাকা বিক্রি আসবে। সামনের বছর আরও বেশি জমিতে করার ইচ্ছা আছে।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. কাউছার আহমেদ বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে কৃষিতে শিক্ষিত ও উদ্যমী যুবকদের সম্পৃক্ত করা। সৈয়দ আব্দুল্লাহ ও পলাশ তাদের চেষ্টা, পরিশ্রম এবং নির্দেশনা অনুসরণ করে যে ফলাফল দেখিয়েছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তার জমিতে লতিকচুর এই সাফল্য প্রমাণ করে, সঠিক প্রযুক্তি, পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা থাকলে কৃষিতে পরিবর্তন আনা সম্ভব। আমরা কৃষককে সবসময় বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছি এবং ভবিষ্যতেও আমরা কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফ আব্দুল্লাহ মোস্তাফিন বলেন, লতিকচু চাষে খরচ কম লাভ বেশি ও তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ। কৃষকরা সঠিক পরামর্শ গ্রহণ ও তা প্রয়োগ করলে অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। এ বছর তিতাস উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে লতিকচুর আবাদ হয়েছে। কৃষক সৈয়দ আব্দুল্লাহ ও পলাশকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা হয়েছিল। তার এই সাফল্য এলাকার অন্যান্য কৃষকদের মধ্যেও উৎসাহ সৃষ্টি করেছে।