ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পুলিশকে রাজনৈতিক দল থেকে দূরে থাকার পরামর্শ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

পুলিশকে রাজনৈতিক দল থেকে দূরে থাকার পরামর্শ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

পুলিশ কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে দূরে থাকার সতর্কতা জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের ভূমিকা হবে নিরপেক্ষ, পেশাদারত্বের মধ্যে থেকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা। গতকাল রোবববার রাজারবাগ পুলিশ লাইন মিলনায়তনে পুলিশ নির্বাচনি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। এসময় তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের কথা মাথা থেকে মুছে ফেলতে বলেন কর্মকর্তাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব, ফেব্রুয়ারি মাসে যে নির্বাচনটা হবে, এটা যেন শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে হয়।’

পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের আমি বলছি যে, আপনারা কিন্তু রাজনৈতিক দলের থেকে একটু দূরে থাকবেন। আমি এর আগে বহুবার আপনাদের বলেছি। আপনারা এখন যদি তেল দেওয়া শুরু করে দেন, আপনাদের কিন্তু নির্বাচনের পর তেল শেষ হয়ে যাবে। এখন যার কাছে যে তেলটা রিজার্ভ করে রেখেছে, সে সেসময় কিন্তু তেল দিয়ে উঠে যাবে। এজন্য আপনারা কোনো দলের দিকে যাবেন না। আপনারা একেবারে জনগণের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা, এটা পূরণ করার জন্য চেষ্টা করবেন।’ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনটা কিন্তু শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে না। এটার কতগুলো স্টেকহোল্ডার রয়েছে। প্রথমত জনগণ- তারা কীভাবে পার্টিসিপেট করতে চায়। তারপর আছে পলিটিক্যাল পার্টি, ইলেকশন কমিশন, আছে প্রশাসন, তারপর আছে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সবার সহযোগিতা ছাড়া একটি সুস্থ, শান্তিপূর্ণ এবং আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যে আশা করেছেন, একটি উৎসবমুখর নির্বাচন-এটা সম্ভব হয় না।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজটা আমরা পুরোদমে করে যাব। উপদেষ্টা বলেন, প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে এই কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে তাদের দক্ষতা, মনোবল, জ্ঞান এবং দায়িত্ববোধ আরও বৃদ্ধি পায়। তিনি যোগ করেন, ‘এই প্রশিক্ষণ একটি বহুগুণ প্রভাব তৈরি করবে, যা দেশের সর্বত্র পুলিশকে একই মানের শৃঙ্খলা, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত করবে- যা একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য।’

তিনি পুলিশে ফেয়ার রিক্রুটমেন্ট হয়েছে জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের এই রিক্রুটমেন্টটা একেবারেই ফেয়ার হয়েছে। আমি আইজির সামনে দাঁড়িয়েও বলতে পারি- আমি একটি রিক্রুটমেন্টের জন্য আইজি বা কারও কাছে একটি নামও দেইনি। অনেকেই বলে। কিন্তু একটি নামও আমাদের উপদেষ্টাও দেননি। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকেও কেউ দেয়নি। এজন্য আপনারা রিক্রুটমেন্টটা খুব ভালোভাবে করতে পেরেছেন।’

পুলিশের পোস্টিং নিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে পুলিশের পোস্টিং লটারির মাধ্যমে করে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা আসবে। কিন্তু আমি কারও কথা শুনব না। এটা লটারির মাধ্যমেই হবে, যদি আমি থাকি।’ পুলিশকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাদক, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে, বিশেষত আসন্ন দুর্গাপূজার সময়ে। তিনি বলেন, ‘গত বছরের পূজা শান্তিপূর্ণ হয়েছিল আপনাদের প্রচেষ্টার কারণে। এ বছরও একই সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখতে হবে।’

আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচন এবং সংঘাত-পরবর্তী আয়ারল্যান্ডের উদাহরণ দেখিয়েছে- পুলিশের নিরপেক্ষতা একটি দেশকে কীভাবে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরে সাহায্য করতে পারে। তিনি যোগ করেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশকে এমন মানদ- স্থাপন করতে হবে, যাতে তারা শুধু জাতীয় আস্থা অর্জনই না করে, বরং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পায়।’ উপদেষ্টা কর্মকর্তাদের স্মরণ করিয়ে দেন, অল্প কিছু বিচ্যুতিও বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যর্থতাগুলো উচ্চস্বরে প্রচারিত হয়, কিন্তু সাফল্যগুলো খুব কমই আলোচিত হয়। স্বচ্ছভাবে কাজ করুন, জনগণের আস্থা অর্জন করুন, তাহলেই পুলিশের ঐতিহ্য ও পেশাদারিত্ব পুনরুদ্ধার হবে।’

জাহাঙ্গীর আলম আশা প্রকাশ করেন যে, নিরপেক্ষতা, শৃঙ্খলা এবং সততার মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সমাজ থেকে দুর্নীতি এবং মাদক কমাতে পারিনি। এটা যদি আপনারা একটু সহযোগিতা করেন, আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তবে সমাজ থেকে হয়তো আমরা কমাতে পারব। যদিও আমাদের সময় খুব একটা নাই, আমরা কিন্তু সেকেন্ড স্টেপে চলে গেছি। আমরা ইলেকশন মডিউলে চলে গেছি। তারপরও নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে এই জিনিসটা আপনাদের একটু খেয়াল রাখতে হবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত