
বাগেরহাটে চারটি আসন বহালের দাবিতে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় আজ বুধবার ও আগামীকাল টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কের দশানী ট্রাফিক মোড় থেকে মিছিলটি বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মিলিত হয়। পরে সেখানে পথসভায় বক্তব্য দেন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সম্মিলিত কমিটির কো কনভেনর এম.এ সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, জেলা জামায়েতের আমির মাওলানা রেজাউল করিম, নায়েবে আমির আব্দুল ওয়াদুদ, সেক্রেটারি শেখ মোহাম্মদ ইউনুস ও বিএনপি নেতা সৈয়দ নাসির উদ্দিন মালেক।
বক্তারা বলেন, বাগেরহাটের একটি আসন কমিয়ে নির্বাচন কমিশন জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানায়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে বিদায় করে দাবি আদায় করা হবে।
বক্তারা আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন চারটি আসনকে তিনটি করেছে এবং কাটাছাঁট করে জগাখিচুড়ি পাকিয়েছে, তা নির্বাচন সীমানা নির্ধারণের আইনের ৬ ধারা পরিপন্থি। এতে বাগেরহাটবাসী ক্ষুব্ধ হয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবো। বাগেরহাটে চারটি আসনই বহাল থাকবে।
এদিকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুটি মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এর ফলে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
এতে বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট কার আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো যাত্রী ও চালক। মঙ্গলবার সকাল সোয়া আটটায় শুরু হওয়া এ অবরোধে ঢাকা ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
অবরোধকারীরা সকালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের পুকুরিয়া ও মাধবপুর বাসস্ট্যান্ডে এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মুনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ড ও আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী এলাকায় অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন, বাঁশ-কাঠ ও আসবাব ফেলে রাস্তায় বিক্ষোভ করেন। এর ফলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের তালমার মোড় থেকে পুকুরিয়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার ও ভাঙ্গা দক্ষিণপাড় থেকে টেকেরহাট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার যানজট হয়। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে মিলিগ্রাম থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার এবং সুয়াদী থেকে জয় বাংলা মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। দুই মহাসড়ক মিলিয়ে অন্তত ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়ে অসংখ্য যাত্রীবাহী যান।
ফরিদপুর শহর থেকে ভাঙ্গায় যাচ্ছিল কুলিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুরজাহান বেগম। তালমার মোড়ে তাদের বাস আটকা পড়ে। পরে সে হেঁটে স্কুলের দিকে রওনা দেয়। নুরজাহান বলেন, ‘জানি না কখন স্কুলে পৌঁছাতে পারব। তবে ভাঙ্গাবাসীর যৌক্তিক দাবিকে আমরা সমর্থন করি।’ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের নওপাড়া এলাকায় আটকা পড়েন রুস্তম শেখ (৪৩)। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বরিশালে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন তিনি। রুস্তম শেখ বলেন, ‘তিন ঘণ্টা ধরে বসে আছি। কখন বাস ছাড়বে, কিছুই বুঝতে পারছি না।’ বগাইল এলাকায় আটকা পড়েন সুমন শেখ (৩৯)। তিনি ঢাকা থেকে যশোর যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে ভালোই এসেছিলাম, কিন্তু ভাঙ্গায় এসে আটকা পড়েছি। জানি না কখন ছাড়বে।’ ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, ‘মহাসড়ক সবদিক থেকে আটকে দেওয়ায় চারদিকে যানজট হয়েছে। সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলা হয়েছে, টায়ারে আগুন জ্বালানো হয়েছে। আমাদের পুলিশের গাড়িও এগোতে ঝামেলা হয়। মহাসড়ক পরিষ্কার করার চেষ্টা করি, কিন্তু অবরোধকারীদের বুঝিয়েও লাভ করতে পারিনি। তবে সন্ধায় আবরোধ কারিরা রাস্তা ছেড়ে দিয়ে যায়। ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের গেজেটে ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে নগরকান্দা ও সালথা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করা হয়। এর প্রতিবাদে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।