
দাবি আদায় না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনরত কারিগরি শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনে সারা দেশে কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচি পালনেরও ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মো. মাশফিক ইসলাম। তিনি বলেন, আজ সারা দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নিজ নিজ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান, বিক্ষোভ ও ঘেরাও কর্মসূচি পালন করছে। আজ (বৃহস্পতিবার) ‘কাকতাড়ুয়া দহন কর্মসূচি’ পালন করবেন শিক্ষার্থীরা। এর মাধ্যমে অযৌক্তিক তিন দফা দাবির কবর রচনা করা হবে।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কোটার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় যে কোটার সংজ্ঞা দিয়েছে, তাতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কথা উল্লেখ নেই। কিন্তু বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা এ নিয়ে মিথ্যাচার করছে। এসময় কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যসচিব হাবিবুর রহমান হাবিব অভিযোগ করে বলেন, প্রকৌশলী আন্দোলনের ব্যানারে কিছু বিএসসি ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থী অযৌক্তিক তিন দফা দাবির নামে মব সৃষ্টি করছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যাচার করছে, এমনকি প্রকাশ্যে আমাদের হত্যার হুমকি দিয়েছে। এদিকে এর আগে সকাল পৌনে ১১টার দিকে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস ও প্রকৌশল কর্মক্ষেত্র কুক্ষিগত করার প্রতিবাদসহ চার দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা। টানা প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধের পর দুপুর ২টার দিকে অবরোধ তুলে নেন তারা।
অবরোধ চলাকালে সড়ক বন্ধ করে দেওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় এই সড়কে যানবাহন চলাচল। ফলে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। সময় গড়াতেই যানজটের প্রভাব পরতে শুরু করে রাজধানী ঢাকাজুড়ে। ফলে রাজধানীর অধিকাংশ সড়কে দেখা দেয় যানজট। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। তবে দুপুর ২টার পর সড়কের অবস্থান ছাড়লে শুরু হয় যানচলাচল। ফলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে গাড়ি চলাচল।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি হলো- ১. প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন কর্তৃক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রকাশ্যে গুলি ও জবাই করে হত্যার হুমকি প্রদানকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ২. বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিক তিন দফা দাবির পক্ষে পরিচালিত সব কার্যক্রম রাষ্ট্র কর্তৃক অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ৩. কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের উত্থাপিত যৌক্তিক ছয় দফা দাবির রূপরেখা ও সুপারিশ অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। ৪. ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ান-চ্যানেল এডুকেশন চালু করতে হবে।
কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শিক্ষকদের সমর্থন : রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে চলমান কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শিক্ষকরা সংহতি প্রকাশ করেছেন। কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস ও প্রকৌশল কর্মক্ষেত্র কুক্ষিগত করার অভিযোগ তুলে নিজেদের কিছু দাবি আদায়ে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সেখানে এসে তাদের সঙ্গে সংহতি জানান কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। সংহতি প্রকাশ করতে উপস্থিত হন- ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইনস্টিটিউট ও একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৮-১০ জন শিক্ষক।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মো. মাশফিক ইসলাম বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এসে দাঁড়িয়েছেন। তাদের এই সমর্থন আমাদের আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করেছে।
প্রকৌশলীদের দাবি নিয়ে ঐকমত্যে কমিটি, আন্দোলন না করার প্রতিশ্রুতি : আন্দোলনরত বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের দাবি নিয়ে ঐকমত্য সৃষ্টির জন্য দুপক্ষের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কমিটির গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করা পর্যন্ত আর আন্দোলন না করারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারীদের পেশাগত দাবিগুলোর যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ দিতে গঠিত কমিটির সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষসহ প্রকৌশলীদের দুটি পক্ষের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। মোট ৬০ জন এসেছিলেন।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আন্দোলনরত দুইপক্ষের দাবিগুলো খানিকটা পরস্পর বিরোধী। একজনেরটা গ্রহণ করলে আরেকজন অসন্তুষ্ট হবেন, অন্য জনেরটা গ্রহণ করলে আরেকজন অসন্তুষ্ট হবেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে একটা সেতু গড়ে তোলা যায়, সেই চেষ্টা করেছি। আমরা নিজেদের থেকে নয়, ওনাদের পরামর্শের ভিত্তিতে একটি ৬ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।’ ‘এ কমিটি কাজ করবে যাতে দু-পক্ষের মধ্যে একটা সেতু গড়া যায়। পরস্পরবিরোধী বিষয়গুলো নিয়ে কীভাবে একমত হওয়া যায়। অনেকটা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মতো। নিজেরা নিজেরাই সমাধান করলে সেটা হল শ্রেষ্ঠ সমাধান।’ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘ওনারা এটাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন- ওই কমিটির সুপারিশ না আসা পর্যন্ত তারা আর কোনো আন্দোলন করবেন না। রাস্তাঘাটে জনদুর্ভোগ হয় এ রকম কোনো কাজেও ওনারা লিপ্ত হবেন না।’