ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

সরিষাবাড়ীতে মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষে বাম্পার ফলন

সরিষাবাড়ীতে মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষে বাম্পার ফলন

মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন জামালপুরের সরিষাবাড়ীর কৃষকেরা। মাচা ব্যবহারের কারণে সবজির লতা ও ফল মাটিতে লেগে না থাকায় বৃষ্টিতে পচন রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় না। মাচায় চাষ করার কারণে ফসল পরিষ্কার থাকে এবং সহজে সংগ্রহ করা যায়। ফলে বাজারে সবজির ভালো দাম পাওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হ”েছন এ উপজেলার চাষিরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষ করেন কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩২০ হেক্টর জমিতে। এরইমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি অর্জিত হয়েছে ৫ হেক্টর। এ চাষ পদ্ধতিতে সফল হওয়ায় আরও বাড়বে বলেও জানান কৃষি অফিস। মাচা পদ্ধতিতে সাধারণত লাউ, চিচিঙ্গা, করলা, বারিপটল, কাকরোল, ঝিঙা, কুমড়া, শসা, বরবটি, শিম ইত্যাদি লতানো সবজির আবাদ করা হয়।

উপজেলার আওনা ইউনিয়নের স্থল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ৩ হাজার টাকায় ১৮ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষ করছেন কৃষক সানোয়ার হোসেন। উচ্চ ফলনশীল বীজ হওয়ায় এক মাসের মধ্যে লাউ তুলে বিভিন্ন বাজারে পাইকারি দামে বিক্রি করছেন তিনি। লাউ চাষকৃত জমিতে গিয়ে দেখা যায়, সুন্দর সারিবদ্ধ ভাবে ঝুলছে সবুজ রঙ্গের ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের লাউ। মাচার নিচে বসে পোক্তহওয়া লাউ গুলো কেটে ঝুড়িতে রাখছেন অন্য কৃষকরা। ফসলের মাঠ থেকেই পাইকারি দরে বিক্রি করা হ”েছ এসব লাউ। তার বর্তমানে খেতে বিক্রিকরার পরও ছোট-বড় কয়েক শতাধিক লাউ রয়েছে।

চাষে অভিজ্ঞ ও নতুন ফসল আবাদের উদ্ভাবক কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, মাচায় সবজি চাষ করলে ফসলের রোগবালাই কম হয় এবং এসব ফসলের বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় ব্যাপক লাভবান হওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে স্বাভাবিক পদ্ধতির থেকে দ্বিগুণ সবজি উৎপাদন হয় ও সবজি নষ্ট কম হয়। তবে একবার মাচা তৈরি করলে একই মাচা প্রায় ৫ থেকে ৭ বছর কাজে লাগানো যায়। প্রতিবছর শুধু একটু মেরামত করতে হয়। এতে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয় ও ফসলের রং ভালো হয়। অনেক সময় ফসলের কালারের উপর দাম কম বেশি হয়।

¯’ল এলাকার কৃষক ছানোয়ার হোসেন বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তা ও পরামর্শে বর্তমানে মাচা পদ্ধতিতে লাউ আবাদে অনেক ভালো ফলন পেয়েছি। ব্যাপক পরিমান লাউ ধরেছে। আমার এ ক্ষেতে বর্তমানে ছোট-বড় কয়েক শতাধিক লাউ রয়েছে। এ পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকা খরচ করে পাইকারি ভাবে এক লাখ টাকার বেশি লাউ বিক্রি করেছি। আরও দুই বিঘা জমিতে লাউ এর পাশাপাশি শশা, করলা, বটবটিসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করেছি। আমার মাচা পদ্ধতি দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও লাউ চাষ ও মাচা পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমি আশা করছি এ সাফল্য দেখে মাচায় সবজি চাষের সম্প্রসারণ হবে। এই পদ্ধতিতে গাছের লতা মাটি থেকে ওপরে উঠে যায় ফলে ফলন বাড়ে। এছাড়া মাচা পদ্ধতিতে জায়গার সাশ্রয় হয়। তাই অল্প জায়গায় সবজি চাষ করলে বেশি ফলন হয়। বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অনুপ সিংহ বলেন, মাচায় সবজি চাষ পদ্ধতি একটি উদ্ভাবনী ও টেকসই কৃষি পদ্ধতি। মাচায় বিশেষ পদ্ধতিতে সবজির আবাদ, যেখানে সবজির লতানো ও ঊর্ধ্বমুখী বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে মাচা তৈরি করে সবজি চাষ করা হয়। অল্প পরিশ্রমে মাচায় সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হ”েছ। পাশাপাশি মাচায় সবজি চাষ এ উপজেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আগামি দিনে এ পদ্ধতিতে আরও চাষাবাদ বাড়বে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত