
প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের ঘটনা ঘটে। গতকালও বগুড়া, রংপুর ও সুনামগঞ্জে ৯ জনের প্রাণ গেছে। এসব ঘটনায় আহতও হয়েছে অনেকে।
বগুড়ায় ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে বাবা-ছেলেসহ নিহত তিন : বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বালুবাহী ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা-ছেলেসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন একই পরিবারের মা ও মেয়ে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে বগুড়া-সারিয়াকান্দি সড়কের ফুলবাড়ি কাঁঠালতলা এলাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার কুঠিবাড়ি গ্রামের বিপুল চন্দ্র দাস (৩৮) ও তার ছেলে বিপ্লব চন্দ্র দাস (৫) ও শিবগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের অটোরিকশার চালক শুকুর আলী (৪০)। অপরদিকে আহতরা হলেন, বিপুলের স্ত্রী মমতা রানী দাস (৩২) ও মেয়ে রূপা মনি দাস (১২)। তারা দুজনেই বর্তমানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামিরুল ইসলাম জানান, বিপুল চন্দ্র দাস পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। দুর্গাপূজার ছুটিতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার নারচী গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছিলেন। ভোরে ঢাকা থেকে বাসযোগে বগুড়ায় নেমে তারা একটি সিএনজি অটোরিকশা করে নারচীর দিকে যাচ্ছিলেন। ফুলবাড়ি কাঁঠালতলা এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বেপরোয়া গতির বালুবাহী ট্রাকের সঙ্গে অটোরিকশাটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের তীব্রতায় অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ওসি আরও জানান, ঘটনাস্থলেই অটোরিকশা চালক শুকুর আলী মারা যান। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহত চারজনকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৯টার দিকে বিপুল ও তার ছেলে বিপ্লব মারা যান।
এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাকের চালক ও সহকারী পালিয়ে গেছেন। ট্রাকটি পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। নিহত তিনজনের মরদেহ আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
রংপুরে বালুবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় মা-ছেলেসহ নিহত ৩ : রংপুর নগরীতে বালুবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় পিকআপভ্যানে থাকা মা-ছেলেসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। গতকাল শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে নগরীর দমদমা এলাকায় রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, পিকআপভ্যানের সহকারী (হেলপার) নগরীর মীরগঞ্জ এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে আরিফ হোসেন (২০), যাত্রী পীরগাছার সাতদরগা এলাকার মোতালেব হোসেনের স্ত্রী শাহিনা বেগম (২৮) ও তার এক বছর বয়সি ছেলে ওয়ালিদ হোসেন স্বাধীন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের দমদমা ব্রিজের একটু আগে মাহিগঞ্জগামী একটি পিকআপভ্যান ইউটার্ন নেওয়ার সময় ঢাকাগামী বালুবোঝাই ট্রাকটি পিকআপভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই পিকআপভ্যানে থাকা যাত্রীসহ হেলপার নিহত হন। আহত তিনজনের মধ্যে গুরুতর আহত পিকআপভ্যান চালক নিশাত মিয়াকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি দু’জন নিহত শাহিনা বেগমের দেবর ও তার স্ত্রী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর মহানগর পুলিশের তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান আলী জানান, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি উদ্ধার করে থানায় রাখা হয়েছে। ট্রাকের ড্রাইভার ও তার সহকারী পলাতক রয়েছে।
সুনামগঞ্জে ট্রাক-সিএনজি সংঘর্ষে মা-মেয়েসহ নিহত ৩ : সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে মা-মেয়েসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। গতকার শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের শত্রুমর্দন বাঘেরকোনা এলাকার সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জ পৌর শহরের উকিল পাড়ার বাসিন্দা মৃত প্রণয় দাশের স্ত্রী আবাদিত কেশবা (৪০) ও তার মেয়ে প্রথমা চৌধুরী (১২) এবং সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীনগর এলাকার বাসিন্দা সজল ঘোষ (৫০)। নিহত প্রথমা চৌধুরী সুনামগঞ্জের সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী।
এ ঘটনায় ট্রাকচালক পারভেজ আহমদকে আটক করে শান্তিগঞ্জ থানায় সোপর্দ করেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৭টা ১০ মিনিটের সময় সুনামগঞ্জগামী একটি বেপরোয়া গতির ট্রাকের সঙ্গে সিলেটগামী সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংঘর্ষ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান আবাদিত কেশবা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক সজল ঘোষ। এসময় মুমূর্ষু অবস্থায় আবাদিত কেশবার মেয়ে প্রথমা চৌধুরীকে শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জয়কলস হাইওয়ে থানার ওসি সুমন কুমার চৌধুরী দুর্ঘটনায় হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।