
বিমান কান্তি ভট্টাচার্য পেশায় চিকিৎসক। তিনি বাহুবল উপজেলার তুঙ্গেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা। শখের বশে তিনি করেন চাষাবাদ। এ মৌসুমে ঘরের পাশে প্রায় ২০ শতক পতিত জমি আবাদ করে মাচা তৈরি করেন। চাষ করেন রঙিন তরমুজের সঙ্গে সাম্মাম। এসব চাষে তিনি সফলতা পেয়েছেন।
বর্তমানে মাচায় মাচায় হলুদ, কালো, সবুজ রঙের তরমুজ ও সাম্মাম ঝুলছে। এরমধ্যে রয়েছে বাইরে হলুদ ভেতরে লাল, বাইরে কালো ভেতরে লাল ও বাইরে সবুজ ভেতরে হলুদ রঙের তরমুজ। এর ফলন দেখে মন জুড়িয়ে যায়। খেতে রসালো ও সুস্বাদু এই তরমুজ এবং সাম্মাম। এসব তরমুজ ও সাম্মাম বিক্রি করে প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা লাভের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এখানে চাষাবাদে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা।
বিমান কান্তি ভট্টাচার্য জানান- তিনি চিকিৎসায় জড়িত। পাশাপাশি শখের বশে কৃষিকাজে যুক্ত হন। চলতি বছরের আগস্ট মাসে ইউনাইটেড কোম্পানির মধুমালা, ব্ল্যাক বেবি ও ইয়েলো বার্ড জাতের তরমুজ এবং সাম্মামের চারা রোপণের জন্য কিছুদূর পরপর তৈরি করেন বেড। ওই বেডে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়ার পর ফুটো করে তাতে চারা রোপণ করা হয়। চারা কিছুটা বড় হলে বাঁশ, সুতা দিয়ে মাচা তৈরি করেন। বাঁশের খুঁটি দিয়ে মাচায় চারা তুলে দেওয়া হয়।
তিনি জানান- প্রথম তরমুজের সঙ্গে সাম্মাম চাষ করেছেন। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মাচায় তরমুজ ও সাম্মাম চাষে তাকে পরামর্শ দিয়েছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম। খেতে প্রায় ৭০০ গাছে দেড় হাজার তরমুজ ও অর্ধশতাধিক গাছে শতাধিক সাম্মাম ফল রয়েছে। বর্তমানে গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে। তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছে। সাম্মাম বিক্রি করতে আরও কিছু সময় লাগবে। তিনি জানান- বর্তমান বাজারে হলুদ, কালো ও সবুজ রঙের তরমুজের প্রতি কেজির দাম প্রায় ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং সাম্মাম প্রতি কেজির দাম ১৫০ থেকে ২২০ টাকা। সে হিসেবে প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার তরমুজ ও সাম্মাম বিক্রি করে লাভের আশা করছেন।
খেতে গিয়ে দেখা যায়- সবুজ কচি লতাপাতার মাঝে ঝুলছে হলুদ, কালো ও সবুজ রঙের তরমুজ এবং সাম্মাম। ছোট-বড় তরমুজ ও সাম্মামে নুয়ে পড়েছে মাচা। মালচিং পদ্ধতিতে পোকা দমনে ব্যবহার করা হয়েছে হলুদ ও ফেরোমন ফাঁদ। খেতে জৈব বালাইনাশক ও জৈব সার ব্যবহার করা হয়েছে। তাতে তেমন একটা কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে না।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন- এ অঞ্চলের মাটি তরমুজ ও সাম্মাম চাষের উপযোগী। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মোটিভেশনের মাধ্যমে মাচায় রঙিন তরমুজ ও সাম্মাম চাষ করেন বিমান কান্তি ভট্টাচার্য। তিনি তরমুজ প্রদর্শনী আবাদ করে সফল। তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। তার ক্ষেতে আড়াই থেকে ৩ কেজি ওজনের তরমুজ ও এক থেকে দেড় কেজি ওজনের সাম্মাম ফল রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চিন্ময় কর অপু বলেন- বাহুবলে ছিল না তরমুজ চাষ। আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিয়েছি। এতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তরমুজ চাষ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার তুঙ্গেশ্বর গ্রামে হলুদ, কালো ও সবুজ রঙের তরমুজের সঙ্গে সাম্মাম চাষ করেন চিকিৎসক বিমান কান্তি ভট্টাচার্য। তার জমিতে চাষকৃত রঙিন তরমুজ ও সাম্মামের ফলন হয়েছে। প্রমাণ হলো- তরমুজ ও সাম্মাম চাষে বাহুবলের মাটি বেশ উপযোগী। তরমুজের সঙ্গে চাষকৃত সাম্মাম রসালো ও সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর।