ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণে স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা

মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণে স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা

কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলার মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণে স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা। জমি তৈরি ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এই পেঁয়াজ বাজারে উঠতে সময় লাগবে প্রায় ২ থেকে ৩ মাস। এ বছর এই পেঁয়াজ চাষের জন্য জমি প্রস্তুত, বীজ (গুটি) কেনা, সার-কীটনাশক, শ্রমিক মজুরিসহ প্রতি বিঘা জমিতে চাষিদের খরচ হচ্ছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। তবে নিজের জমি হলে সেক্ষেত্রে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা কম খরচ হবে। কারণ ১ বিঘা জমি লীজ নিতে চাষিদের গুনতে হয় প্রায় ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা। চাষিদের দাবি, এ বছর পেঁয়াজ বীজের (গুটি) দাম কিছুটা কম হলেও জমি লীজ নিয়ে প্রস্তুত, সার-কীটনাশক, সেচ, শ্রমিক মজুরির দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে তাদের খরচ। তারপরও লাভের আশায় চাষ করছেন। তবে কৃষি উপকরণের দাম অনুযায়ী কৃষক বাঁচাতে হলে মৌসুমে প্রতি মণ পেঁয়াজের বাজার মূল্যে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে। বিপর্যয় না হলে প্রতি বিঘায় এবার ৫০ থেকে ৬০ মণ ফলন আশা করছেন চাষিরা। এ বছর চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলার বিভিন্ন স্থানের মাঠে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক জমিতে আবাদ সম্পূর্ণ হয়েছে। এবার জেলায় সবচেয়ে বেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হচ্ছে কুমারখালী, খোকসা, কুষ্টিয়া সদর ও দৌলতপুরে। এ ছাড়াও ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলায় এই পেঁয়াজ আবাদ করছেন চাষিরা। এই পেঁয়াজ উত্তোলনের আগ মুহূর্ত ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারি থেকে শুরু হবে হালি পেঁয়াজের আবাদ। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া দেশের অন্যান্য জেলার মতোই পেঁয়াজ চাষের সমৃদ্ধ জেলা। এখানে সারা দেশের প্রায় ১৩ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় বৃহত্তম জেলা। ফলে জেলার উৎপাদিত পেঁয়াজ সারা দেশের চাহিদার বৃহৎ একটি অংশ পূরণ করে। এখানে শীতের শুরুতে কম সময়ের জন্য সংরক্ষণকৃত মুড়িকাটা এবং পরে প্রায় সারাবছর সংরক্ষণকৃত হালি পেঁয়াজের আবাদ হয়। এরমধ্যে জেলায় পেঁয়াজের মূল আবাদের ৬ ভাগের একভাগ মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এই পেঁয়াজ জেলার ছয় উপজেলায় কমবেশি আবাদ হলেও কুমারখালি-খোকসায় সবচেয়ে বেশি হয়।

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় ৩০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। এবার কুমারখালি ২ হাজার ২৩০, খোকসা ১ হাজার ৬৬৫, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১ হাজার ২০০, দৌলতপুর ৪২৫ ও মিরপুর-ভেড়ামারায় ৩৫৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হচ্ছে।

কুমারখালির পান্টি এলাকার কৃষক হাফিজ বলেন, এবার আমি ৬ বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করছি। সার-কীটনাশক, তেল, শ্রমিকসহ সবকিছুর দাম বেশি। এতে আমার প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। সারের দাম যদি কম থাকত এবং পেঁয়াজ ওঠার পর ২ হাজার টাকা মণ পেতাম, তাহলে কিছুটা লাভবান হতাম। ২ হাজার টাকার নিচে মণ হলে আমাদের লোকসানে পড়তে হবে।’ খোকসার কৃষক বিষ্ণুপদ বিশ্বাস বলেন, ‘এখন পেঁয়াজ-রসুন লাগাতে গিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। পেঁয়াজের গুটি কিনেছি ২৫০০-২৬০০ টাকা মণ। পেঁয়াজ বিক্রির সময় ১৫০০-২০০০ টাকা বিক্রি করতে হয়। সবকিছু যেভাবে দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে; সেই হিসেবে যদি ফলন ভালো না হয়, তাহলে একেবারে শেষ হয়ে যাব। এবার কী পরিমাণ ফলন হবে বুঝতে পারছি না। আশা করছি ভালো ফলন হবে। ভালো ফলন হলে বিঘায় ৫০-৬০ মণ হবে। খারাপ হলে ৩০-৩৫ মণের বেশি হবে না। তখন যদি দাম না থাকে তাহলে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ হবে।

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সূফি রফিকুজ্জামান বলেন, জেলায় বর্তমানে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ চলমান। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আবাদ সম্পন্ন হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করছি এ বছর জেলায় প্রায় ৯৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে।’ তিনি বলেন, জেলায় সারের পর্যাপ্ত মজুত আছে। মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। আগামী মাসে সারের বরাদ্দ আরও বেশি আসবে। ফলে সার নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত