ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নাফিস সরাফাতসহ চারজনের বিরুদ্ধে ১৬১৩ কোটি টাকার মানি লন্ডারিং মামলা

নাফিস সরাফাতসহ চারজনের বিরুদ্ধে ১৬১৩ কোটি টাকার মানি লন্ডারিং মামলা

পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানম্যান চৌধুরী নাফিস সরাফাতসহ চার জনের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৬১৩ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের করেছে পুলশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত বুধবার রাজধনীর গুলশান থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলাটি করে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। গতকাল শুক্রবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বলেন, ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট প্রাথিমিক অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে, চৌধুরী নাফিস সরাফাত তার সহযোগী ড. হাসান তাহের ইমামকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৮ সালে রেইস ম্যানেজমেন্ট নামে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির লাইসেন্স গ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সালে যাত্রা শুরুর পর ২০১৩ সালের মধ্যেই ১০টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পায়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অধীনে ১৩টি ফান্ড রয়েছে। মূলত এ মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে অবৈধ ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন চৌধুরী নাফিস সরাফাত ও তার সহযোগীরা। চৌধুরী নাফিস সরাফাত তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ ও সহযোগী ড. হাসান তাহের ইমামের সঙ্গে মিলে ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগ করে তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) শেয়ার কেনেন এবং পরে ব্যাংকটির পর্ষদের পরিচালক পদ লাভ করেন। এমনকি কৌশলে চৌধুরী নাফিস সরাফাত আঞ্জুমান আরা শহীদকে সাউথইস্ট ব্যাংকেরও পরিচালক করেন। এরপর অভিযুক্তরা চতুরতার সঙ্গে ফান্ডের টাকায় মাল্টি সিকিউরিটিজ নামে একটি ব্রোকার হাউজ করে তার ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে প্রতারণা করে ফান্ডের অর্থ হাতিয়ে নেন। এছাড়াও চৌধুরী নাফিস সরাফাত পদ্মা ব্যাংকের টাকা দিয়ে পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজসহ তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি নামে ফান্ড কেনেন বা বিনিয়োগ করেন, যার অধীন একাধিক ফান্ড রয়েছে। জসীম উদ্দিন খান বলেন, অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, জাল-জালিয়াতির ব্যাপ্তি এতই বিস্তিৃত ছিল যে, হিসাব বিও ও অন্যান্য ব্যাংক হিসাব খোলা ও পরিচালনাসহ রাজউক থেকে একাধিক প্লট হাতিয়ে নিয়ে বিভিন্ন নামীয় প্রতিষ্ঠান/বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে বিদেশে অর্থ পাচারের পথ সুগম করেছিলেন অভিযুক্তরা। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে চৌধুরী নাফিস সরাফাত ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বেস্ট হোল্ডিংসের বন্ডে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে চাপ প্রয়োগ, বিদেশে অর্থ পাচার এবং একাধিক বাড়ি-ফ্ল্যাট ক্রয়সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হয়। এসব অভিযোগ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতেই সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানকালে চৌধুরী নাফিস সরাফাত, আঞ্জুমান আরা শহীদ, তাদের ছেলে রাহীব সাফওয়ান সারাফাত চৌধুরী এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে তফসিলি ব্যাংকগুলোতে মোট ৭৮টি হিসাব পরিচালিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। ওই হিসাবসমূহে মোট প্রায় ১৮০৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা জমা এবং প্রায় ১৮০৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তার মধ্যে, চৌধুরী নাফিস সরাফাত, আঞ্জুমান আরা শহীদ এবং রাহীব সাফওয়ান সারাফাত চৌধুরীর নামে মোট ২১টি হিসাব চলমান রয়েছে। যার বর্তমান স্থিতি মাত্র ২ কোটি ২১ লাখ টাকা। এসব হিসাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা লেনদেন হওয়ায় এগুলোর তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। অনুসন্ধানকালে সিআইডি আরও জানতে পেরেছে, চৌধুরী নাফিস সরাফাত ও আঞ্জুমান আরা শহীদের মালিকানাধীন কানাডা ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্ধিত কোম্পানি এবং আঞ্জুমান আরা শাহীদের নামে সিঙ্গপুরের স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটারড ব্যাংকে ১৫টি যৌথ হিসাব রয়েছে। সেখানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা জমা রয়েছে। এছাড়া রাহীব সাফওয়ান সারাফাত চৌধুরীর নামে বিদেশে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব মোট ৭৬টি হিসাব পরিচালনা করার তথ্য পাওয়া যায়। চৌধুরী নাফিস সরাফাতের সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে তিন রুমের একটি ফ্ল্যাট ও পাঁচ রুমের একটি ভিলা রয়েছে বলেও তথ্য পেয়েছে সিআইডি। জসীম উদ্দিন খান বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে সর্বমোট ১ হাজার ৬১৪ কোটি ৬৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫৯ টাকা অর্জনের অভিযোগে চৌধুরী নাফিস সরাফতসহ তার চার সহযোগীর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত