ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

প্রথম আলোতে হামলায় গ্রেপ্তার ১৭, শনাক্ত ৩১

* অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা * গানম্যান দেওয়া হয়েছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদককে * প্রথম আলো-ডেইলি স্টার নয়, গণতন্ত্রের ওপর আঘাত : ফখরুল * এমন হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় : নাহিদ * জানুয়ারিতে মহাসম্মেলন, বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন
প্রথম আলোতে হামলায় গ্রেপ্তার ১৭, শনাক্ত ৩১

রাজধানীর কারওরান বাজারে প্রথম আলোর অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম। গতকাল সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান তিনি। তিনি বলেন, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত শাহবাগ মোড় থেকে কারওয়ান বাজার এলাকায় বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী প্রথম আলো ও পরে ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা চালালেও বিপুল জনসমাগম ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে তাৎক্ষণিক কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেনি পুলিশ। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আটকে দেয় বিক্ষোভকারীরা।

ঘটনার পর প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ মামলা করে। ডেইলি স্টারের মামলা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ শেষে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দুই প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় জড়িতদের থানা পুলিশ, ডিবি, সিটিটিসি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সিসিটিভি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে শনাক্তে কাজ করছে। নজরুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত থানা পুলিশ ১৩ জন, সিটিটিসি ৩ জন এবং ডিবি ১ জনসহ মোট ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সহিংসতায় জড়িত ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মো. নাইম (২৬) দেড় লাখ টাকা লুট করেছেন। সেই টাকা দিয়ে সে টিভি ও টাচ স্ক্রিন ফ্রিজ কিনেছে। তার কাছ থেকেই ৫০ হাজার টাকা, টিভি ও ফ্রিজ উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যরা হলেন- আকাশ আহমেদ সাগর, মো. আব্দুল আহাদ, বিপ্লব, নজরুল ইসলাম মিনহাজ, মো. জাহাঙ্গীর, সোহেল রানা, মো. হাসান, রাসেল ওরফে শাকিল, আব্দুল বারেক শেখ ওরফে আলামিন, রাশেদুল ইসলাম, সোহেল রানা ও শফিকুল ইসলাম।

গ্রেপ্তারদের রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আমি খুঁজতে চাচ্ছি না। এরা দুষ্কৃতিকারী। তারা আইন ভঙ্গ করছেন। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রচলিত যে আইন, যে বিচারব্যবস্থা, সে বিচারব্যবস্থায় তাদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। সে যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক।

‘মব ভায়োলেন্স’ ঠেকাতে ডিএমপি কতটা সক্ষমণ্ড এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা সক্ষম। সব সময় সব ঘটনা আমরা কার্ভ করতে পারব- বিষয়টা এরকম না। কারওয়ান বাজারের যে ঘটনাটা, ওখানে যে অবস্থা ছিল, এইটার অন্তরালে আরও কিছু বিষয় আছে। আমরা যদি ওখানে অ্যাকশনে যেতাম, তাহলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেত।

আরও গণমাধ্যমের ওপর হামলার আশঙ্কা বা হুমকি রয়েছে কি না- এ বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কাছে আপাতত এরকম কোনো ইনফরমেশন নেই। তবে আমরা যদি এরকম ইনফরমেশন পাই, অবশ্যই সেটাকে কার্ভ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

ছায়ানট ও উদীচীতে হামলার বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছায়ানটের ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় এবং উদীচীর ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। ওটা পরে ব্রিফ করব।

প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলা- অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা : রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ইবনে মিজান। মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের বিভিন্ন ধারায় করা হয়েছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ১১টার দিকে ২০ থেকে ৩০ জন অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতকারী দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে মিছিল করে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে আসে। পুলিশ বাধা দিলে তারা বেআইনিভাবে সেখানে সমবেত হয়ে উত্তেজনাকর স্লোগান দেয়। একই সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ফোন কল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে আরও লোক জড়ো করা হয়।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ জন দুষ্কৃতকারী প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়। রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে তারা কার্যালয়ের ফটকের কাচ ও শাটার ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়। হামলাকারীরা ভবনের সামনের কাচ ভেঙে আসবাবপত্র, মালামাল ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিচে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিভিন্ন তলার প্রায় দেড় শতাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, লকারে রাখা নগদ অর্থ এবং প্রথমা প্রকাশনের বইপত্র লুট করে নিয়ে যায় তারা। পাশাপাশি ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করা হয়।

মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়েছে, দুষ্কৃতকারীরা সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট করতে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের আগুন নেভানোর কাজে বাধা দেয়।

এজাহারে বলা হয়, হামলার সময় শুধু লুটপাট করা সম্পদের মূল্য প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি মিলিয়ে মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩২ কোটি টাকা বলে দাবি করেছে প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ।

নিরাপত্তার জন্য গানম্যান দেওয়া হয়েছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদককে - স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা : দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদকের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষ্যে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৮তম সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।

উপদেষ্টা বলেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনায় ডিএমপি ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পত্রিকা দুইটির সম্পাদকের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান দেওয়া হয়েছে এবং তাদের বাসায় নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ময়মনসিংহে পোশাক শ্রমিককে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাতেও ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে আগমন উপলক্ষ্যে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অপারেশনের অংশ হিসেবে ২০০০ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন যানবাহন (প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, ইত্যাদি) তল্লাশি করা হচ্ছে এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে পুলিশের প্রশিক্ষণ তিন ভাগের দুই ভাগ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বডি ওর্ন ক্যামেরার ব্যবহার বিষয়েও তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

প্রথম আলো-ডেইলি স্টার নয়, গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে -মির্জা ফখরুল : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ডেইলি স্টার বা প্রথম আলো নয়- আঘাত এসেছে গণতন্ত্রের ওপর। স্বাধীনভাবে চিন্তা করার অধিকার, কথা বলার অধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। জুলাই যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত অধিকার আজ হুমকির মুখে। এই পরিস্থিতি শুধু সংবাদমাধ্যমের জন্য নয়, দেশের জনগণের জন্যও বিপজ্জনক। গতকাল সোমবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব আয়োজিত ‘মব ভায়োলেন্স’ বা সংঘবদ্ধ সহিংসতাবিরোধী প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, সংবাদপত্রের ওপর হামলা শুধু গণমাধ্যমের ওপর নয়, এটি সরাসরি গণতন্ত্র ও জুলাই বিপ্লবের ওপর আঘাত। এখন শুধু সচেতন হলে চলবে না, অপশক্তির বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমি জানি না, আমরা এই মুহূর্তে কোন বাংলাদেশে আছি। তিনি আরও বলেন, সারাজীবন সংগ্রাম করেছি স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য। আজ যে বাংলাদেশ দেখছি, এই বাংলাদেশের স্বপ্ন আমি কোনো দিন দেখিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সীমায় আবদ্ধ থাকার সময় নয়। সব গণতন্ত্রকামী মানুষের এখন এক হওয়ার সময় এসেছে। যারা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়, তাদের শুধু সচেতন থাকলে চলবে না, রুখে দাঁড়াতে হবে।

দেশের নাগরিকদের রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার ওপর জোর দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সংঘটিত সহিংসতার বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করতে না পারলে শুধু সাংবাদিক নয়, পুরো সমাজই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সভায় দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদক ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা ও সংঘবদ্ধ সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

এমন হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে -নাহিদ ইসলাম : প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনার বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, এমন হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত ‘মব ভায়োলেন্স’ বা সংঘবদ্ধ সহিংসতা বিরোধী এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এ কথা বলেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, এখন যা করছে তা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত অপরাধ বলে মনে হচ্ছে। আমার মনে হয় এসবের বিরুদ্ধে আমাদের সবার নিজ নিজ জায়গা থেকে অবস্থান নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, এমন ঘটনা যারা সেই রাতে ঘটিয়েছে, এটা পুরোপুরি স্পষ্ট যে, এটা পরিকল্পিত হামলা। আমাদের সবাইকে মিলে সরকারকে বাধ্য করতে হবে, এই ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং বিচার করা। এছাড়া ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের বিষয়েও তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে। নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নামে এমন ঘটনা কেউ ঘটালে আমরা বিন্দুমাত্র অ্যালাউ করব না। কোনো কিছুর মাধ্যমেই মিডিয়ার উপরে এমন হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এমন করবে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

জানুয়ারিতে সাংবাদিকদের মহাসম্মেলন, বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন : ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর কার্যালয়ে হামলায় জড়িতদের বিচার ও সংবাদমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। সংগঠনের সভাপতি এ কে আজাদ জানিয়েছেন, আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সারা দেশের সাংবাদিকদের নিয়ে ঢাকায় একটি মহাসম্মেলন করা হবে এবং সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মব ভায়োলেন্সের কবলে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবাদ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন। নোয়াব ও সম্পাদক পরিষদ যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে। সভায় এ কে আজাদ বলেন, ‘এখানে যারাই কথা বলেছেন, সবার কথায় একটি বিষয়ই উঠে এসেছে: আমাদের এই অপশক্তিকে সম্মিলিতভাবে রুখে দিতে হবে।’

প্রথম আলোতে হামলার ঘটনার পর দ্য ডেইলি স্টারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে নোয়াব সভাপতি বলেন, মাহফুজ আনাম সরকারের এমন কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি নেই, যাকে ফোন করে নিরাপত্তা চাননি। কিন্তু তিনি কোনো সাহায্য পাননি। যখন সাহায্য এসেছিল, ততোক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকের বরাত দিয়ে এ কে আজাদ বলেন, ‘সেখানে সব বাহিনী উপস্থিত ছিল, কিন্তু কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি।’

হামলার ভয়াবহতা তুলে ধরে দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমাদের ২৬-২৭ জন সহকর্মী ছাদে আটকে পড়েছিলেন। অথচ ফায়ার ব্রিগেডকে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তারা শুধু ভবন পুড়িয়ে দিতে আসেনি, তারা সাংবাদিকদের হত্যা করতে চেয়েছিল। মতপ্রকাশ তো অনেক পরের বিষয়, এখন বিষয়টি বেঁচে থাকার অধিকারের প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়েছে।’

হামলার সময় সরকারের নিষ্ক্রিয়তার তীব্র নিন্দা জানান নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরীন হক।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোর কেন্দ্রস্থলে মবতন্ত্র শুরু হয়েছে, যা সচিবালয়ের অভ্যন্তরে বিকশিত হয়েছে।’ যারা এখন ক্ষমতায় আছে, তারা মবতন্ত্রের পেছনের শক্তিকে তাদের ক্ষমতাকাঠামোর স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। হামলার সময় সরকারের ‘রহস্যজনক নীরবতা’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি প্রশ্ন রাখেন—জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনী আসলে কী করছে?

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষা-সংস্কৃতি সবকিছুর ওপর আঘাত এসেছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘ছায়ানট কেন ভাঙচুর হলো? ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর কেন আক্রমণ আসছে?’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি হামলার ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্লোগান ব্যবহার করে সংবাদমাধ্যমে হামলা চরম দুর্ভাগ্যজনক। সরকারের এই নীরবতা তাদের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত