
বিস্তীর্ণ খোলা আকাশের নিচে দিগন্তজোড়া আবাদি জমি। যে দিকে চোখ যায় খানিকটা পর পর খড়কুটো ঘেরা টংঘর। এ ধরনের টংঘরেই উপজেলার ৬ হাজারে ওপরে কৃষকের এখন অস্থায়ী আবাস। পরিবার পরিজন ছেড়ে রান্নাবান্নার হাড়ি-পাতিলে দ্বিতীয় সংসার পেতেছে তারা। সেই কাকডাকা ভোরেই এখান থেকেই শুরু হয় তাদের কর্মযজ্ঞ। সকাল-বিকাল-দুপুর-রাতেও তাদের চিন্তা রসালো ফল তরমুজ উৎপাদনে।
দ্বীপের রাণী ভোলার চরফ্যাশনের আবাদি জমি তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে কৃষকের তন্ময় দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে ফলটি উৎপাদনে। এ এলাকার চাষিরা তরমুজ চাষে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হওয়ায় তারা এখন চরফ্যাশনের গণ্ডি পেরিয়ে ভোলার অন্যান্য উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালীর চরাঞ্চলের জমি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ করে থাকেন। যা এখানকার কৃষিতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
গত কয়েক বছর ধরে চরফ্যাশন উপজেলায় তরমুজের বাম্পার ফলন এবং বাজার দর ভালো হওয়ায় এখানকার কৃষকরা তরমুজ চাষে ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়ছেন। দেশের বিভিন্ন বাজারে বিপুল পরিমাণ চাহিদা থাকায় এ উপজেলায় উৎপাদিত মানবদেহের উপকারী ফলটি এখানকার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
কৃষকদের সমন্বিত দক্ষতা ও আন্তরিকতায় তরমুজ চাষে এ উপজেলায় বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এ বছর ১০৭৮০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ আশা করছে এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। ৬ হাজারেরও ওপরে কৃষক তরমুজ চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। প্রায় ৫০ হাজার কৃষি শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে এ কাজে। খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছেন ফলটি উৎপাদনে। কোনো কোনো কৃষক কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেন। দেশের সকল উপজেলা থেকে এ উপজেলায় বেশি তরমুজ চাষ হয়। পুরো উপজেলায় তরমুজ চাষ হলেও চর এলাকা মুজিবনগর, নুরাবাদ, নীলকমল, নজরুল নগর, চর কলমি ও চর মানিকা ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়।
তরমুজ চাষি মো. ইউসুফ জানান, অনেক চাষিই শত একরেরও বেশি জমিতে উন্নত জাতের থাই সুপার, থাই কিং ও আরলি ওয়ান জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে খরচ বাদ দিয়ে তারা প্রায় কোটি টাকার মতো লাভবান হবেন।
শ্রমিক বাবুল মিয়া বলেন, সব সময় তাদের তরমুজ খেতে ব্যস্ত থাকতে। জমি প্রস্তুত থেকে তরমুজ বিক্রি সব ক্ষেত্রেই তাদের শ্রম দিতে হয়। বিনিময়ে প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা তাদের বেতন দেওয়া হয়। থাকাণ্ডখাওয়া সব কিছু মালিকের। তিনি আরও বলেন, এ কাজের সঙ্গে এখন অনেক শ্রমিক জড়িত।
উপজেলা কৃষি কর্মকতা কৃষিবিদ নাজমুল হুদা বলেন, চরফ্যাশনে দেশের সকল উপজেলার থেকে সবচেয়ে বেশি তরমুজ উৎপাদন হয়ে থাকে। গত মৌসুমে প্রায় ১০৭৮০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। এ উপজেলায় প্রায় ৬০০০ তরমুজ উৎপাদনকারী কৃষকসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই চাষাবাদের সঙ্গে জড়িত। এখানকার মাটি, আবহাওয়া ও নদ-নদীর মিঠা পানির উৎস তরমুজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ বছর তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১০৭৮০ হেক্টর হলেও গতবছর তরমুজ চাষিরা বেশি দাম পাওয়ায় আশা করা যায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। চরফ্যাশনের দক্ষ ও অভিজ্ঞ তরমুজ চাষিরা চরফ্যাশনের গণ্ডি পেরিয়ে ভোলার অন্যান্য উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালীর চরাঞ্চলের জমি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিকভিত্তিতে তরমুজ চাষ করে থাকেন যা এখানকার কৃষিতে যোগ করেছে নতুনমাত্রা। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তরমুজ চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।