ঢাকা শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারছে না কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলো

দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারছে না কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলো

দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারছে না কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, বাংলাদেশের কর্মসংস্থান তৈরির একটি অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হতে পারে কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ জনশক্তি। প্রচলিত সাধারণ শিক্ষায় অধিকতর মনোযোগ, বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে জাতীয় অঙ্গীকার ও অগ্রাধিকার চিহ্নিত করে বস্তুনিষ্ঠ পরিকল্পনার অভাব এবং বাস্তবায়নকৃত কার্যক্রমসমূহের পরিবীক্ষণ যথাযথভাবে না হওয়ায় কারিগরি শিক্ষার পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সিপিডি ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সংস্কার আসলে কতটুকু হচ্ছে তারচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আগামীর রাজনৈতিক ইশতেহারে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপারে স্পষ্ট আলাপ থাকতে হবে। শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে মোট জিডিপির ৩ থেকে ৫ শতাংশ বরাদ্দ থাকবে এমন নয়। কারিগরি শিক্ষার বৃত্তি, যন্ত্রাংশ ক্রয় ও অবকাঠামো উন্নয়নে কত টাকা ব্যয় করা হবে সেটি স্পষ্টভাবে জানাতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। ‘বাংলাদেশে করিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা বর্তমান পরিস্থিতি ও সংস্কার চিন্তা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির ফেলো ড দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সিপিডি বলেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণে বৃহত্তর এবং অধিক ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার সুনিশ্চিত করা টেকসই উন্নয়নের আওতায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক। কিন্তু এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।

সিপিডি ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা কমিশন যেমন কাজ করার কথা তেমন করেনি। কারণ তারা সঠিকভাবে কাজ করলে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার এমন পরিস্থিতি হতো না।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলো কীভাবে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের উন্নয়ন করেছে সেটির কোনো অংশ আমাদের দেশে করা হয়নি। কোরিয়া, জাপান ও পাশের দেশ ভারত যেভাবে কারিগরি শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের পরিবর্তন করেছে সেটা আমরা করতে পারিনি। বর্তমান যুগে গণিত, বিজ্ঞান ও অটোমেশনে দক্ষ না হলে উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের বের করছি, কিন্তু তারা বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। কারণ চাহিদার সঙ্গে আমাদের স্কিল ডেভলপমেন্টের সম্পর্ক সেভাবে নেই। আমরা যেসব প্রশিক্ষণ প্রদান করি সেগুলোর চাহিদা বর্তমান বাজারে আর নেই।

সিপিডি ফেলো বলেন, পাঠ্যসূচি থেকে শুরু করে শিক্ষকদের আধুনিকায়ন করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। পুরোনো শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের কারিগরি প্রতিষ্ঠান যেসব যন্ত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করছে সেগুলোর চাহিদা বাজারে শেষ হয়ে গেছে। ফলে একজন শিক্ষার্থী পাড়াশোনা শেষ করার পরও বেকার থাকছে; কিন্তু বিদেশি লোকজন ঠিকই কাজ পেয়ে যাচ্ছে। ফেলো বলেন, কারিগরি শিক্ষার ব্যাপারে আমাদের সমাজের একটা নেতিবাচক ধারণা আছে।

এটির পরিবর্তন করতে হবে। কারিগরি শিক্ষাকে অনেকে ছোট করে দেখেন। কারিগরি থেকে পাশ করা ছেলের চেয়ে বিবিএ পাশ করা ছেলেকে বেশি মূল্যায়ন করা হয়। এসব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে একটা নিম্ন আয়ের মানুষ ভালো কারিগর হয়ে উঠতে পারে। শিক্ষা কমিশন গঠন না হওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, শিক্ষা কমিশন গঠন হওয়া শুধু টেকনিক্যাল বিষয় নয়। এটির মধ্যে অনেক কিছু রয়েছে। ফলে রাজনৈতিক সরকার না হলে এটি গঠনের অনেক অপ্রত্যাশিত সমস্যার সম্মুখীন কেউ হতে চান না। বাজারের চাহিদা অনুসারে দক্ষ মানবসম্পদ বর্তমান কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলো বের করতে পারছে না। তাই খাতের আমূল পরিবর্তনের জন্য সংস্কারের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি। সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত