ঢাকা শহরের প্রতিটি ভবনের ছাদে পর্যাপ্ত ও কার্যকর সৌর প্যানেল স্থাপন করার জন্য একটি সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় (বিদ্যুৎ বিভাগ), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (স্রেডা) ছয় মাসের মধ্যে আদেশ প্রতিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা শহরের সব আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে এরইমধ্যে স্থাপিত সৌর প্যানেলগুলো সচল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) জনস্বার্থে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গতকাল সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী এবং বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদালতে গতকাল বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট এস. হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন।
রুলে ঢাকা শহরের আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে স্থাপিত বিদ্যমান সৌর প্যানেলগুলো কার্যকরভাবে চালু রাখার ব্যর্থতা সংবিধান এবং প্রচলিত আইন, পরিকল্পনা ও নীতিমালার পরিপন্থি বিধায় কেন তা অসাংবিধানিক, আইনবহির্ভূত ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না এবং সব বিদ্যমান সৌর প্যানেল সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করাসহ ঢাকা শহরের প্রতিটি ভবনের ছাদে পর্যাপ্ত ও কার্যকর সৌর প্যানেল স্থাপন করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনভেনশন, চুক্তি ও জাতীয় মহাপরিকল্পনায় প্রতিশ্রুত গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিত করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে বেলার পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, টেকসই উন্নয়নের জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে সৌর শক্তি জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে নবায়নযোগ্য শক্তি হিসেবে ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপনের ও কার্যকরভাবে সচল রাখার বিকল্প নেই। ঢাকা শহরের অব্যবহৃত ছাদগুলোতে সৌর প্যানেল স্থাপন করে শক্তি উৎপাদনকারী প্ল্যাটফর্মে পরিণত করার মাধ্যমে ঢাকার বিদ্যুৎ চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করা সম্ভব, যা কেন্দ্রীয় গ্রিডের ওপর চাপ কমাবে এবং ভোক্তাদের বিদ্যুৎখাতের ব্যয় কমাবে।
সৌর প্যানেল স্থাপনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা স্থাপনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কালক্ষেপণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এরইমধ্যে যেসব ভবনে সৌর প্যানেল স্থাপিত হয়েছে যথাযথ নজরদারির অভাবে সেগুলো নিষ্ক্রিয় বা অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার সীমিত করে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যাপকতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা হ্রাস করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ঢাকা শহরের অব্যবহৃত ছাদগুলোতে পর্যাপ্ত সোলার প্যানেল স্থাপন এবং এরইমধ্যে স্থাপিত নিষ্ক্রিয় সৌর প্যানেলগুলো সক্রিয়করণের জন্য বেলা জনস্বার্থমূলক মামলাটি করে। ২৬ জুন প্রধান উপদেষ্টা শুধু সরকারি স্থাপনাগুলোর ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়ে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন। আদালতের আজকের এ নির্দেশ ঢাকা শহরের সব আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের জন্য প্রযোজ্য হবে বলেও বেলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।