ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হিজড়াদের অধিকার

জান্নাতুল ফেরদাউস সারা
হিজড়াদের অধিকার

নারীও নয়, পুরুষও নয়; এ ধরনের একশ্রেণিকে প্রায়ই রাস্তাঘাটে নানা রকম অঙ্গভঙ্গি করে চাঁদা তুলতে দেখা যায়। সভ্যসমাজে অবহেলিত এ শ্রেণিকে ‘হিজড়া’ বলা হয়। ইসলামে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে হিজড়া, তৃতীয় কিংবা চতুর্থ লিঙ্গ বলতে কিছু নেই। এদের ইসলাম মানবসন্তান হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। মানবসন্তানদের মতো তাদের বিধান দেওয়া হয়েছে। সমাজে হিজড়াদের অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ইসলাম পথনির্দেশক। ইসলামই হিজড়াদের পূর্ণাঙ্গ মানুষ মনে করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রেষ্ঠতম সুন্দর আকৃতিতে।’ (সুরা তীন : ৪)।

হিজড়ারা সমাজে অবহেলিত : আমাদের সমাজে পর্যাপ্ত ইসলামি জ্ঞান না থাকায় এবং নানা কুসংস্কার, সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিক দৈন্যতার কারণে হিজড়ারা বঞ্চিত ও অবহেলিত। ক্ষেত্র বিশেষ নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার। তাই ইসলামি বিধানমতে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তোমাদের চেহারা এবং সম্পদ দেখেন না; বরং তিনি তোমাদের হৃদয় এবং আমলগুলো দেখেন।’ (মুসলিম : ৬৭০৮)।

জন্ম ও দৈহিক অবয়ব আল্লাহর দান : হিজড়া সম্প্রদায়ও আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি। তারাও সৃষ্টির সেরা জীব। প্রতিবন্ধীদের যেমন শারীরিক ত্রুটি থাকে, এটিও তেমন এক ত্রুটি। তবে এর কারণে তাদের মনুষ্য সমাজ থেকে বের করে দেওয়া যাবে না। বরং অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের মতোই তারাও স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার রাখেন। তাদের প্রতি ঘৃণা, দুর্ব্যবহার, খারাপ মন্তব্য করা গোনাহের কাজ। তাদের গালি দেওয়াও মহাপাপ। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা জঘন্য অপরাধ। তাদের এ দুর্বলতার কারণে তাদের ঠাট্টা করার মানে হলো, আল্লাহতায়ালার সৃষ্টিকে ঠাট্টা করা। আল্লাহর সৃষ্টিকে হাসি-তামাশার বিষয় বানানো গর্হিত কাজ। ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষের জন্ম ও দৈহিক অবয়ব সম্পূর্ণ আল্লাহর দান। আল্লাহ যাকে যেভাবে খুশি সৃষ্টি করেন। দৈহিক পূর্ণতা ও অপূর্ণতা তার ইচ্ছাধীন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনি (আল্লাহ) যা যেভাবে ইচ্ছে সৃষ্টি করেন।’ (সুরা শুরা : ৪৯)।

আল্লাহর কাছে সবাই সমান : বাংলাদেশে বেশির ভাগ হিজড়া মুসলিম। কোনো না কোনো মুসলিম পরিবারে তাদের জন্ম। তাই জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ইসলামি রীতিনীতিই তাকে মেনে চলতে হবে। কিন্তু একটি গোষ্ঠী হিজড়াদের ইসলামবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত করে রাখছে। যা বেদনাদায়ক। দুঃখজনক সত্য হলো, বর্তমান সমাজব্যবস্থায় হিজড়া সম্প্রদায়ের কোনো মর্যাদা নেই। তারা আজ অবহেলিত। ইসলাম মানুষ হিসেবে হিজড়াদের প্রাপ্য সম্মান দিতে এবং নামাজের জামাতসহ সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ অনুমোদন করেছে। কোরআন-হাদিসে অঙ্গ ও আকৃতির ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করা হয়নি। আল্লাহতায়ালার কাছে সব ত্রুটিহীন অথবা ত্রুটিপূর্ণ মানুষই সমান। হাশরের ময়দানে সবাইই জিজ্ঞাসিত হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে সব মানুষ সমান। ঈমান ও তাকওয়া হচ্ছে মানুষের মর্যাদার মানদ-। যে যত বেশি মুত্তাকি, আল্লাহ তাকে তত বেশি ভালোবাসেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে। পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে। যেন তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন, যে বেশি মুত্তাকি।’ (সুরা হুজুরাত : ১৩)।

জীবনযাপন নিশ্চিতকরণ ও উত্তরাধিকারের নির্দেশ : ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী হিজড়ারা সাধারণ মানুষের মতোই তাদের পূর্ণ অধিকার লাভ করবে। লেখাপড়া, শিক্ষাদীক্ষা, চাকরিবাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ধর্ম-কর্ম, সামাজিক ও উন্নয়ন কাজের সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রেই তাদের ন্যায্য অধিকার ইসলাম প্রদান করেছে। ইসলাম হিজড়াদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে ও তাদের উত্তরাধিকার সম্পদ বুঝিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে। ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী তারা মা-বাবার সম্পত্তির ভাগ পাবে। যে হিজড়ার মধ্যে নারী বা পুরুষ কোনো একটি প্রকৃতি প্রবল, সে নারী বা পুরুষের হিসেবে উত্তরাধিকার সম্পদ পাবে। আর যার প্রকৃতি সহজে নির্ধারণ করা যায় না, তার ব্যাপারে চিকিৎসকদের মতামত নেওয়া হবে। (সুনানে বায়হাকি : ১২৯৪)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত