দেশে এক মাসের বেশি সময় ধরে ভোজ্য তেল সয়াবিনের বাজার অস্থির। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম শুধু যে বেড়েছে তা-ই নয়, চাহিদামতো পাওয়া যাচ্ছে না বোতলজাত সয়াবিন। এতে বিপাকে পড়েছে ভোক্তারা। গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। এদিকে আর মাত্র এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। ফলে সয়াবিনের বাজারের এই অস্থিরতা ভাবাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, গত তিন মাসে দেশে যে পরিমাণ অপরিশোধিত সয়াবিন ও সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে, তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া, যথেষ্ট পরিমাণে সয়াবিন, পামঅয়েল আমদানির জন্য পাইপলাইন রয়েছে। তাহলে বাজারে সয়াবিনের এই সংকট কেন এ বিষয়ে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। বাণিজ্য সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খানের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনষ্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ও ভোজ্যতেল পাইকারি ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীরা আবারো সয়াবিন, পামঅয়েলের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। কিন্তু সরকার রমজানের আগে কোনো ভাবেই সয়াবিন, পামঅয়েলের দাম বাড়াতে রাজি নয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও এখন সয়াবিন, পামঅয়েলের বাজার স্থিতিশীল। অনেকটা কমতির দিকে। এ প্রসঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাণিজ্য সচিব আবদুর রহিম খান বলেন, পরিসংখ্যান বলছে, দেশে যথেষ্ট পরিমাণে ভোজ্য তেল আমদানি হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় বেশি।
কোম্পানিগুলোও বলছে, সয়াবিন সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই। তাহলে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট হবে কেন? তিনি বলেন, অসৎ উদ্দেশে কেউ সয়াবিন তেল মজুত করছে কি না আমরা এখন তা খতিয়ে দেখব। উল্লেখ্য, দেশে প্রতি বছর ভোজ্য তেলের চাহিদা ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে আড়াই লাখ টন তেল দেশে উৎপাদিত হয়। বাকি ২০ থেকে ২১ লাখ টন ভোজ্য তেল আমদানি করা হয়। এর মধ্যে রমজানে চাহিদা ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টন। ট্যারিফ কমিশন সূত্র বলছে, চলতি অর্থবছরের গত ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে ১০ লাখ ৯৫ হাজার ৫২৫ টন সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৮০ টন ও পাম তেল ৭ লাখ ১১ হাজার ৪৪৪ টন। এর মধ্যে গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেশি।
এছাড়া, গত জানুয়ারিতে সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে ৩ লাখ টন। গত এক বছরে এত বেশি সয়াবিন বীজ আমদানি হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আরো ৪ লাখ ২১ হাজার ৯৬৬ টন তেল আমদানি পাইপলাইনে রয়েছে। রমজান শুরু হতে এখনো যে সময় বাকি আছে, তাতে এই তেল চলে আসবে। এ পরিস্থিতিতে সয়াবিনের কোনো সংকট হওয়ার কথা নয়। এছাড়া, ভোজ্য তেলের দাম সহনীয় রাখতে গত ১৬ ডিসেম্বর সয়াবিন, পামঅয়েল আমদানিতে শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি ও অগ্রিম আয়কর শতভাগ অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি ভ্যাট ১৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, প্রতি বছরই মিলাররা রমজানের আগে তেলের দাম বাড়ানোর জন্য একই কাজ করে। পাইকারি, ডিলার ও খুচরাবাজারে সয়াবিনের সরবরাহ কমিয়ে এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। পরে দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও একই পথে তারা হাঁটছেন বলে ভোক্তারা অভিযোগ করেছেন। রাজধানীতে ভোজ্য তেলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী মো. আলী ভুট্টো এ প্রসঙ্গে বলেন, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেলের সরবরাহ নেই। কিছুটা সংকট রয়েছে। মিলাররা বলছেন, ১৫-২০ দিনের মধ্যে সয়াবিন চলে আসবে। তখন সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।