ঢাকা মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অর্থছাড় কমলেও বেড়েছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ

অর্থছাড় কমলেও বেড়েছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে অর্থছাড়ও। তবে ঝুঁকির বিষয় এই সময়ে সরকারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-জানুয়ারি সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭.২ শতাংশ। অর্থছাড় কমেছে ১০.৪ শতাংশ এবং ঋণ পরিশোধে বেড়েছে ৩০.৩ শতাংশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ- ইআরডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি এসেছে ২.৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭.১৭ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে উন্নয়ন সহযোগীরা ছাড় করেছে ৩.৯৪ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থছাড়ের পরিমাণ ছিল ৪.৩৯৮ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের পরিশোধ করেছিল ১.৮৫৬ বিলিয়ন ডলার, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে ২.৪১৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। একই সময়ে আসল পরিশোধ ১.০৯ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ১.৫৪৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। আর সুদ পরিশোধ ১৬০.৭ মিলিয়ন থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৭৪ মিলিয়ন ডলার। ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যমেয়াদি ঋণ কৌশলে বৈদেশিক ঋণ কম নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি কমেছে। উন্নয়ন সহযোগীরা গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি ঋণ দিতে আগ্রহ দেখালেও এক্ষেত্রে ঋণ নেয়ার আগ্রহ কম সরকারের। শুধুমাত্র জরুরি বাজেট সহায়তা ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে সরকার ঋণ নেবে। এর ফলে ঋণ চুক্তিও হচ্ছে ধীরগতিতে। এর প্রভাবে ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে। ইআরডির কর্মকর্তারা আরো জানান, মূলত ঋণ পরিশোধের চাপ সামলাতে সরকার নতুন ঋণ কম নেয়ার কৌশল নিয়েছে। এর মধ্যে অনেক প্রকল্পের জন্য নেয়া ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ায় পরিশোধের চাপ আরো বাড়বে। আর এই চাপ কমাতেই বৈদেশিক ঋণ কম নেয়ার কৌশল নিয়েছে সরকার। উল্লেখ্য সরকার গত অর্থবছরে সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের আসল পরিশোধ করেছিল ৪.১৬৬ বিলিয়ন ডলার। আর সুদ পরিশোধ করেছিল ১.৩৫ বিলিয়ন ডলার। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ১০.৭৩৯ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি আদায় করেছিল।

ইআরডির কর্মকর্তারা আরো জানান, ঋণ পরিশোধের চাপ কমাতে, সরকার প্রতিশ্রুতি কমানোর সঙ্গেসঙ্গে পাইপলাইনে থাকা ঋণ ছাড়ের ওপর গুরুত্বারোপ করছে। যদিও দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে অর্থছাড়ে খুব বেশি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি অর্থায়নের প্রকল্পের মতো বিদেশি ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নেও গতি কমেছে নতুন সরকারের সময়ে। অনেক বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্পেরও ঠিকাদার চলে গেছে। অনেক প্রকল্পে পরিচালক পরিবর্তন হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাস্তবায়নে। আবার বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন স্থবির হয়ে গেছে বলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমেছে। এসব কারণে বাস্তবায়ন কাজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক অর্থছাড় কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান গত জানুয়ারিতে বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতি বিষয়ে টিবিএসকে বলেছিলেন, জুলাই-আগস্টের পটপরিবর্তন বৈদেশিক ঋণ প্রতিশ্রুতি কমানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। নতুন প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রে সরকার যথেষ্ট সতর্ক। আগে প্রকল্প-নির্ভর দুর্নীতি ঘটতে দেখা গেছে, এবং বৈদেশিক ঋণের প্রকল্প এটা হয়েছে। প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমলেও, আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো অতীতের নেয়া ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। সামনের বছরগুলোয় ঋণ পরিশোধের চাপ আরো বাড়বে। বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্প বাংলাদেশের প্রয়োজন আছে। বৈদেশিক ঋণের দুর্নীতি লুটপাট যদি না হয়, এবং যথাযথ ব্যবহার হলে বৈদেশিক ঋণ আমাদের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে। ফলে বৈদেশিক ঋণ যদি কম আসে, তাহেলে উদ্বেগের জায়গা তো থাকবেই।

কার কাছ থেকে কত প্রতিশ্রুতি পেল সরকার : ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। এই সংস্থার কাছ থেকে এসেছে ৯৪৪.৫ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা ছিল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি এসেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে। সংস্থাটি ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা ছাড় করে মোট ৭০০ মিলিয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বা ঋণ চুক্তি সই হয়েছে। এছাড়া জাপানের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি এসেছে ২৫২.১২ মিলিয়ন ডলার, এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এর কাছ থেকে এসেছে ১৬০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি। জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করে এডিবি, যা পরিমাণ ১.০৯ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৬৭.৬৪ মিলিয়ন ডলার অর্থছাড় করে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া জাপান ৬৯৬.৩২, রাশিয়া ৫৩৬.৮৭, চীন ২৬৭.৮১ মিলিয়ন, এবং ভারত ৮০.১৪ মিলিয়ন ডলার ছাড় করে এই সময়ে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত