
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লা পরিবহনের বিল বকেয়া পড়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের কয়লা খালাস বন্ধ করে দিয়েছে লজিস্টিকস কোম্পানি এএমএমএস গ্রুপ। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পরিচালনাকারী সংস্থা বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডর (বিসিপিসিএল) কাছে পরিবহন ভাড়া বাবদ এএমএমএস গ্রুপের পাওনা প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। বকেয়া না পাওয়ায় কয়লা খালাস করছে না বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছে, পিডিবি থেকে অর্থ পেলেই বকেয়া পরিশোধ করে দেওয়া হবে। এএমএমএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, কয়লা পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত লাইটার জাহাজ পরিচালনা সংক্রান্ত নিয়মিত ব্যয় কোম্পানি বহন করতে পারছে না। বিল না পাওয়ায় কয়লা খালাস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য বিসিপিসিএলকে বলা হলে তারা বলেছে, বিল বাবদ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সময়মতো পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে স্থানীয় লজিস্টিক কোম্পানির বিল পরিশোধ করতে পারছে না তারা। বিপিডিবি থেকে টাকা পেলেই বিসিপিসিএল বকেয়া পরিশোধ করবে। বিসিপিসিএলের জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স) মোয়াল্লেম হোসেন বলেন, সরকারের পক্ষে আমদানি করা কয়লার মূল্য পরিশোধ করে বিপিডিবি। তিনি বলেন, ‘জুলাই পর্যন্ত বিপিডিবির কাছে আমাদের বকেয়া পাওনার পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জুন পর্যন্ত বকেয়া বাবদ ৬ জাকার ৫০০ কোটি টাকা চেয়ে আমরা ৭ আগস্ট বিপিডিবিকে চিঠি দিয়েছি।’ বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করে মোয়াল্লেম বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রে এখনও ১.৭০ লাখ টনের বেশি কয়লার মজুত রয়েছে, তাই তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ সংকটের আশঙ্কা নেই। আশা করি দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।’
বিপিডিবির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, পিডিবির কাছে বিসিপিসিএলের বিল বকেয়া আছে কি না, সেটি তার জানা নেই। তিনি আরও বলেন, বিল বাবদ যদি বকেয়া থাকে, বিসিপিসিএলকে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে পিডিবিকে জানাবে। ২০২০ সাল থেকে উৎপাদনে যাওয়া পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি আমদানি করা কয়লার ওপর নির্ভরশীল। এ কেন্দ্রে দৈনিক প্রায় ১০ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হয়। শিপিং কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, কেন্দ্রটি প্রতি মাসে প্রায় ৪ লাখ টন কয়লা আমদানি করে। বিসিপিসিএলের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৭০ টন কয়লা নিয়ে চারটি মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। এছাড়া ১৫ থেকে ২১ আগস্টের মধ্যে আরও দুটি জাহাজে ১ লাখ ৭ হাজার ৮০০ টন কয়লা আসার কথা রয়েছে। সর্বশেষ চালানগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার কারিয়ানগাউ বন্দর থেকে ৫৫ হাজার ১০০ টন কয়লা নিয়ে ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় লাইবেরিয়ান পতাকাবাহী জাহাজ এমভি ক্লারা। ৬০ হাজার ৫০০ টন কয়লা নিয়ে ২৪ জুলাই পৌঁছায় সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী জাহাজ বিগ গ্লোরি। ৫৭ হাজার ২৭০ টন কয়লা নিয়ে ১৯ জুলাই পৌঁছায় নওরয়ের পতাকাবাহী জাহাজ কারমেনসিটা। আর ৬০ হাজার টন কয়লা নিয়ে ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় পানামার পতাকাবাহী জাহাজ থিওডর ভেনিয়ামিস।
ডেমারেজ চার্জ : লজিস্টিকস প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেন, সময়মতো কয়লা খালাস করতে না পারলে দৈনিক ১২-১৫ হাজার ডলার ডেমারেজ চার্জ দিতে হয়, যে বিল শেষ পর্যন্ত বিপিডিবিকেই দিতে হয়। জাহাজগুলোর স্থানীয় শিপিং এজেন্ট বেনকন সিট্রান্স লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. এনামণ্ডউল হক বলেন, সাধারণত প্রতিটি জাহাজ থেকে কয়লা খালাস করতে সাত থেকে দশ দিন সময় লাগে। কয়লা খালাস করে একটি মাদার ভেসেলকে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যেতে সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। ‘এএমএমএস গ্রুপ কয়লা খালাস না করায় চারটি জাহাজই অলস বসে আছে। প্রতিটি জাহাজের দৈনিক ভাড়া পরিশোধ করতে হবে বিসিপিসিএলকে। এছাড়া কয়লা নিয়ে বন্দরে আটকে থাকায় জাহাজগুলোর শিডিউল চেইনও বিঘ্নিত হচ্ছে,’ বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি জাহাজের দৈনিক ভাড়া বাবদ কমপক্ষে ১৫ হাজার ডলার করে পরিশোধ করতে হবে বিসিপিসিএলকে।