ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মদিনার মসজিদে নববিতে জুমার খুতবা

নেক আমলের কল্যাণ ও বরকত

শায়খ ড. আবদুল বারি বিন ইওয়াজ আস-সুবাইতি
নেক আমলের কল্যাণ ও বরকত

আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে তাওফিক দেন, তখন তিনি তার মনে নেক আমলের ভালোবাসা জাগিয়ে দেন ও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাকে এ কাজে দৃঢ় রাখেন। যার অন্তরে নেক আমলের প্রতি ভালোবাসা থাকে, সে ঈমানের স্বাদ পায়। তার জীবন শান্তি ও প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। এই নেক আমল মুমিন বান্দার রসদ- এটা ঈমানের ফল ও আল্লাহর সন্তুষ্টির নিদর্শন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিন পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে, তাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।’ (সুরা নাহল : ৯৭)।

আল্লাহর বড় অনুগ্রহ হলো, তিনি নেক আমলের ধারণাকে অনেক বিস্তৃত করেছেন। তিনি একে শুধু বাহ্যিক বা ব্যক্তিগত ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি; বরং এতে অন্তরের আমল, একক ও সম্মিলিত আমল সবই অন্তর্ভুক্ত। যেমন- নামাজ, জাকাত, রোজা, হজ, কোরআন তেলাওয়াত, আল্লাহর জিকির, পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা, ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে নিষেধ, এতিমের দায়িত্ব নেওয়া, অজ্ঞকে শিক্ষা দেওয়া, বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করা ও মানুষের প্রয়োজন পূরণ করা।

?আদি ইবনু হাতিম (রা.) বলেন, আমি মহানবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করো এক টুকরা খেজুর সদকা করে হলেও।’ (বোখারি : ১৪১৭)।

নেক আমলের বরকত শুধু আখেরাতে সীমাবদ্ধ নয়; বরং দুনিয়াতেও এর সুফল পাওয়া যায়। আল্লাহ বান্দার অন্তরে শান্তি দেন, তার মনে প্রশান্তি দান করেন, তাকে মানুষের মধ্যে প্রিয় করে তোলেন, তার রিজিক, বয়স ও সন্তানদের মধ্যে বরকত দান করেন। দুনিয়ার দুশ্চিন্তা থেকে তাকে রক্ষা করেন, ফিতনার সময় দৃঢ় রাখেন ও সুন্দর পরিণতি দান করেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে দয়াময় আল্লাহ অবশ্যই তাদের জন্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করবেন।’ (সুরা মরিয়ম : ৯৬)।

ইবাদতের ঋতুগুলো আমাদের পেছনে পড়ে গেছে। যে এগুলোতে নেক আমলে সফল হয়েছে, সে যেন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে ও আল্লাহর ইবাদতে দৃঢ় থাকে। কারণ, একজন মুমিন কখনও আল্লাহর ইবাদত থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না এবং তার সান্নিধ্যে আসার চেষ্টা কখনও ক্লান্তিকর মনে করে না। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো, যা নিয়মিত করা হয়- যদিও তা অল্পই হয়।’ (বোখারি : ৬৪৬৪)। তাই যে ব্যক্তি রোজা রেখেছে, নামাজে দাঁড়িয়েছে, দান করেছে, হৃদয়ে খুশু এনেছে- সে যা শুরু করেছে তা থেকে যেন পিছিয়ে না যায়, যা অর্জন করেছে, তা যেন নষ্ট না করে। কেননা, সে জানে না কোন আমল তার জীবনের শেষ আমল হবে।

নেক আমল মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায় না; বরং এর প্রভাব থেকে যায়। যেমন- একজন নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে বা একটি মসজিদ, যা সে নির্মাণ করেছে অথবা সেই ইলম যা সে ছড়িয়ে দিয়েছে বা একজন এতিম যার দায়িত্ব সে নিয়েছিল বা একটি সদকায়ে জারিয়া, যার সুফল চলতেই থাকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমিই মৃতকে করি জীবিত এবং লিখে রাখি যা এরা আগে পাঠায় ও যা এরা পেছনে রেখে যায়, আমি তো প্রত্যেক জিনিস স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি।’ (সুরা ইয়াসিন : ১২)।

তোমাদের কেউ যেন নিজের নেক আমলকে তুচ্ছ মনে না করে। কারণ, হতে পারে খাঁটি হৃদয় থেকে বের হওয়া একটি সুন্দর কথা কোনো এক নির্মল মুহূর্তে, কোনো মানুষের হেদায়াতের কারণ হয়ে যাবে অথবা কারও জন্য গোপনে করা একটি দোয়া তার জীবনে খুশির দরজা খুলে দেবে কিংবা সামান্য একটি সদকা কোনো বিপদগ্রস্তকে রক্ষা করবে ও তা জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম হবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমি এক লোককে একটি গাছের কারণে জান্নাতে আনন্দ-ফূর্তি করতে দেখেছি। এ গাছটি সে রাস্তার ওপর থেকে দূর করেছিল, যেটি মানুষকে কষ্ট দিত।’ (মুসলিম : ৬৫৬৫)। সুতরাং কোনো নেক কাজকে তুচ্ছ মনে করা সংগত নয়, যদিও তা ছোট হয়। আল্লাহ কখনও সৎকর্মশীলদের প্রতিদান নষ্ট করেন না।

(১০-১২-১৪৪৬ হিজরি মোতাবেক ৬-৬-২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন- আবদুল কাইয়ুম শেখ)

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত