আল্লাহতায়ালা চেয়েছিলেন, মানুষ তার সাজানো এই বাগানটা (পৃথিবী) গুছিয়ে সুন্দর ও পরিপাটি করে রাখুক। অন্তত মানুষ মানুষের পাশে থাকুক। বিপদে-আপদে, সমস্যা সংকটে একজনের পাশে আরেকজন ছুঁটে আসুক। সাহায্য-সহযোগিতা করুক। এই সাহায্য-সহযোগিতা, কারও দুঃখে সহমর্মিতা প্রকাশ করা, নিজের সুখের জন্য ব্যস্ত না হয়ে অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করাই তো মানুষের ধর্ম। কিন্তু মানুষ যেন আর মানুষ নেই! আল্লাহর হুকুমকে অমান্য করে, মানবিকতাকে গলা টিপে হত্যা করে হয়ে উঠেছে এক একটা দানব!
রোজ পত্রিকার পাতা ও টিভির স্ক্রিণে ভেসে উঠে মানুষের অপকর্মের খবর। দুর্বলের ওপর চড়াও হওয়া, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা, ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব, পিতা-পুত্রের কলহ, রাজনৈতিক মতাদর্শের অমিল হলেই খুন কিংবা গুম। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য নিজ সন্তানকে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে রাখাসহ যেন কোনো কাজ নেই; যা মানুষ করছে না। ধর্ষণ তো এখন পত্রিকার নিয়মিত বিজ্ঞাপন!
মানুষের অত্যাচার থেকে রেহায় পাচ্ছে না বনের নিরীহ পশু-পাখিরাও। মানুষের তৈরি হিংসার রোষানলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে সভ্যতা। পৃথিবী আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে কলহ সৃষ্টি করবে।’ (সুরা মুহাম্মাদ : ২২)।
মানুষ ভুলে গেছে, আত্মভোগে কোনো তৃপ্তি নেই। পরোপকারেই প্রকৃত সুখ। প্রিয় নবী (সা.) এই শিক্ষাদানের জন্যই আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। মানুষের দুঃখ দেখলে তাঁর চোখ ভারি হয়ে উঠত। টপটপ করে গড়িয়ে পড়ত অশ্রু মোবারক। সে যে ধর্মেরই হোক। মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য, দুঃখ মুচোনের চিন্তায় তাঁর ঘুম হতো না। সেই নবীর উম্মতের মধ্যেই আজ এত দ্বন্দ! এত খুনোখুনি! সামান্য মতের অমিল হলেই মুসলমান হয়েও আরেক মুসলমানের বুকে ছুরি চালায়, গলা কাটে। অথচ কথা ছিল পৃথিবীর শেষ প্রান্তেও যদি কোনো মুসলমানের পায়ে কাঁটা বিঁধে, সে যতটা ব্যথা পাবে; ততটা ব্যথা আমাদেরও অনুভব করার। কেন না, মুসলমান যে পরস্পর ভাই ভাই। পবিত্র কোরআন তো তা-ই বলছে, ‘নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।’ (সুরা হুজুরাত : ১০)।
আফসোস! মুসলমান আজ নিজের মায়ের পেটের ভাইয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক রাখে না। দেখা হলেও কারও সঙ্গে কারও কথা হয় না। অথচ অন্যান্য প্রাণীদের দেখুন, তাদের মধ্যে এই দ্বেষ-বিদ্বেষের নামণ্ডগন্ধও নেই। কখনও কি দেখেছেন, দু’টো পিঁপড়া মুখোমুখি হয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে? না। তারা মানুষের মতো পাশ কেটে চলে যায় না। তারা কিছুক্ষণ কথা বলে, সুখ-দুঃখ, সাফল্য-সমস্যার কথা জানায়। কিন্তু দুটি মানুষ যখন মুখোমুখি হয়, তখন তারা পাশ কেটে চলে যায়। তার কারণ মানুষ এখন মানুষকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
লেখক : ইমাম ও খতিব, কসবা জামে মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া