ঢাকা শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জাতীয় সামার অ্যাথলেটিকস

হার্ডলসে তানভীরের হ্যাটট্রিক রোকসানার দুই স্বর্ণ জয়

হার্ডলসে তানভীরের হ্যাটট্রিক রোকসানার দুই স্বর্ণ জয়

সেনাবাহিনীর হার্ডলার তানভীর ফয়সাল শেষ দুটি ধাপ পেরুতে গিয়ে পায়ের স্পর্শ পেয়ে হার্ডল পড়ে যায়। উপস্থিত অনেকেই ভেবেছিলেন হয়তো ডিসকোয়ালিফাই হয়ে গেছেন সেনাবাহিনীর তানভীর। কিন্তু গতকাল শনিবার জাজদের বিচারে তিনিই স্বর্ণজয়ী। পরে জানা গেল, ইচ্ছে করে হার্ডলস ফেলেননি তানভীর। তাই জাজদের বিচারে ১১০ মিটার হার্ডলসে ১৪.৭০ সেকেন্ড সময় নিয়ে তিনিই স্বর্ণজয়ী। এ নিয়ে তিনটি স্বর্ণ জিতলেন তানভীর। তবে কোনো সমস্যা ছাড়াই সব বাধা পার করেন একই সংস্থার নারী হার্ডলার রোকসানা বেগম। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় স্বর্ণ জিতলেন তিনি। ১০০ মিটার হার্ডলস পেরুতে সময় নিলেন ১৫ সেকেন্ড।

ট্র্যাকের হার্ডলসের বাধার মতো জীবনে অনেক বাধা পেরিয়ে আসতে হয়েছে নোয়াখালীর মেয়ে রোকসানাকে। কোচ রফিকউল্লাহ মিলনের কাছেই অ্যাথলেটিকসে হাতেখড়ি তার। তবে শুরুতে লংজাম্পে খেললেও পরে কোচের কথায় চলে আসেন হার্ডলসে। তার কথা, ‘রফিক স্যার বলেছিলেন, লংজাম্প নয় তুই হার্ডলস কর। কারণ এখানে ফাকা রয়েছে।’ বাধার সৃষ্টি এরপরেই। নোয়াখালীতে অ্যাথলেটিকস শিখে বাড়ি ফিরতে কখনও কখনও সন্ধ্যা নেমে আসতো। ঠিক তখনি আশাপাশের লোকজন নানা কথা বলত।

রোকসানা বলেন, ‘মানুষদের অনেক কথা সইতে হয়েছে আমাকে। অ্যাথলেটিকস খেলতে খেলতে সন্ধ্যা হলে মা-বাবাকে অনেক কথা শুনতে হতো।’ বাবা মাইক্রোবাস চালিয়ে সংসার চালাতেন। এখন অবশ্য কাজ করতে পারেন না। সংসারে তিন বোন ও এক ভাই। রোকসানা মেঝ। সবার বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট ভাই এখনও পড়াশোনা করে। সংসারের খরচ বাবা এখন আর করতে পারেন না। তাই সেনাবাহিনীর চাকরি করে যে বেতন পান, তাই দিয়েই সংসারে সহযোগিতা করেন।’ গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবার স্বর্ণপদক জিতেছিলেন রোকসানা। না খেললে কি করতেন? আচমকা এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হলেও ঘাবড়ে যাননি সেনাবাহিনীর এই হার্ডলার। তার সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘না খেললে বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দিত। এটাই গ্রামের নিয়ম।’ এসএ গেমসে পদক জেতাই লক্ষ্য রোকসানার।

সেনাবাহিনীর আন্তঃইউনিট থেকে শুরু তানভীর ফয়সালের। সেখান থেকে আন্তঃবিভাগীয় পর্যায়ে খেলে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে এসেছেন। ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো স্বর্ণ জিতলেন। আগের দুটি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপেও জিতেছেন। এবার জিতলেন সামারে। ২০২২ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা শুরু করা তানভীরের প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। বিষয়টি নিজ মুখে স্বীকারও করলেন তিনি, ‘আমার মনে হয় ১১০ মিটার হার্ডলসে তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী আমার নেই। সংসারে কোনো সংকট না থাকলেও প্রচার না পাওয়ার কষ্ট তানভীরের অন্তরে, ‘আমার সতীর্থরা যখন দেখি স্প্রিন্টে খেলে প্রচারের আলোয় আসছে, সেখানে আমাদের দিকে তাকায় না কেউই। এটাই আমার কষ্ট।’

গতকাল অন্যান্য ইভেন্টের মধ্যে ৪০০ মিটার হার্ডলসে সেনাবাহিনীর নাজমুল হাসান রনি, একই সংস্থার বর্ষা খাতুন, নারী ডিসকাস থ্রোতে নৌবাহিনীর জাফরিন আক্তার, পুরুষ লং জাম্পে পুলিশের মনিরুল মোল্লা, শটপুটে নৌবাহিনীর গোলাম সারওয়ার শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছেন। আজ জাতীয় সামার অ্যাথলেটিকস সমাপ্ত হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত