
আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন। দিনক্ষণ যতই এগিয়ে আসছে দেশের ক্রিকেটাঙ্গন ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। নির্বাচনের সপ্তাহ দুই আগে ক্ষমতার অপব্যবহার ও হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে সেই উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিলেন তামিম ইকবাল। গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। সংবাদ সম্মেলনে তামিম বিসিবির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিসিবি সভাপতি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তামিম। এরআগে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গেও কথা হয়েছিল তামিমের। বাংলাদেশ দলের সাবেক ওপেনার তাকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলেন। এরপর থেকেই নির্বাচনে সরকারি হস্তক্ষেপ বেড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন তামিম। তামিম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তখন তাকে আমি একটি কথাই বলেছিলাম- ভাইয়া, আমি আপনার কাছ থেকে কিছুই চাই না; আমি শুধু একটি বিষয়ই চাই, আর তা হলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। এর বাইরে আমি তার কাছে কোনো দাবি করিনি, কিছুই চাইনি। কিন্তু তারপর থেকে আমরা যা দেখতে শুরু করেছি, কিংবা জেলা ও বিভাগে যা ঘটছে, এমনকি ক্লাব পর্যায়েও যা চলছে- সেগুলো ঠিকভাবে হচ্ছে না।’ তামিম ইকবাল বিসিবি সভাপতির ভূমিকার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংবাদ সম্মেলনে। বুলবুল কিছুদিন আগেই জানিয়েছিলেন তার বিসিবি নির্বাচন নিয়ে কোনো ধারণাই নেই। তবে তিনিই আবার কাউন্সিলর তালিকা সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছেন। এটি তার বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে করেন তামিম।
বিসিবির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলে তামিম বলেছেন, ‘আমিনুল ইসলাম বলেন যে তিনি নির্বাচন নিয়ে তেমন কিছুই জানেন না। যদি না জেনেই থাকেন তাহলে বিসিবির পাঠানো চিঠিতে তার সই কীভাবে থাকে। নির্বাচন কমিশন গঠন হওয়ার পর তো তার কোনো চিঠিতে সাইন করার কথা না, এটাই কনস্টিটিউশন বলছে। কিন্তু নিয়ম ভেঙে উনি কীভাবে চিঠিতে সই করে আগের কাউন্সিলরদের সরানোর নির্দেশ দিয়ে ডিসি বরাবর পাঠানো চিঠিতে বুলবুল ভাই সই করছেন।’ বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক অভিযোগ করে বলেন, ‘১৬ তারিখে বা তার আগে তাদের জানানো হলো যে সময়সীমা আমরা বাড়াব। অর্থাৎ ১৭ তারিখ থেকে তা ১৯ তারিখ পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। দ্বিতীয়বার আবার ১৯ তারিখ থেকে সেটিকে ২২ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হলো। প্রথমবার যখন সময়সীমা বাড়ানো হয়, তখন তাদের ডিরেক্টর গ্রুপে বিষয়টি প্রস্তাব আকারে দেওয়া হলে তিন-চারজন ডিরেক্টর এতে সম্মতি জানান। ফলে বিষয়টি ১৯ তারিখ পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু দ্বিতীয়বার যখন সময়সীমা বাড়ানো হলো, তখন বিসিবি প্রেসিডেন্ট ছাড়া আর কেউ- হ্যাঁ বা না কোনো মতামতই দেননি। তিনি নিজের ইচ্ছাতেই সময়সীমা বাড়িয়ে দিলেন।’
নির্বাচন কমিশন গঠনের পর সবধরনের যোগাযোগের দায়িত্ব কমিশনের ওপর বর্তায়। অথচ এরপরও বিসিবি সভাপতি নিজে চিঠিতে স্বাক্ষর করছেন, যা নিয়মের পরিপন্থি বলে মনে করেন তামিম।
এ ছাড়া সরকারের ক্যাবিনেট সচিবের দপ্তর এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) থেকেও চিঠি পাঠিয়ে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এই নির্বাচনকে সিলেকশন আখ্যা দিয়েছেন তামিম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখন মজার বিষয় হলো, আপনারা কিছুদিন আগেই দেখেছেন- যাকে ইচ্ছা অ্যাডহক কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আবার যাকে ইচ্ছা সেই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। যদি এভাবে নির্বাচন আয়োজন করতে চান, তবে এটি তো ইলেকশন হলো না; বরং এটি সিলেকশন হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিত।’
নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়েও পরিষ্কার অবস্থান জানান তামিম। তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়ী হলে আর খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামবেন না, স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘অফিসিয়ালি অবসরের দরকার নেই। নির্বাচিত হলে আমি আর খেলব না। শুধু চ্যারিটি ম্যাচ হলে ভিন্ন কথা।’ সর্বশেষে তামিম জানান, ফলাফল যাই হোক, তিনি শুধু একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চান। এই তারকা ক্রিকেটার বলছিলেন, ‘আমি শুধু একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। জিতি বা হারি তা বড় কথা নয়।’